|
|
|
|
বনধে অশান্তি হল শুধু আসানসোলে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সাধারণ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে বুধবার ধর্মঘটী ও বিরোধীদের মধ্যে দফায় দফায় অশান্তি ছড়াল আসানসোলে। ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, জোর করে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাসচালকদের মারধর করা হয়েছে। ‘হুমকি দিয়ে’ দোকান বাজার বন্ধ রাখা হয়েছে। আসানসোল, দুর্গাপুর শহর জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব দেখা গেলেও কোলিয়ারি ও বিভিন্ন কারখানায় হাজিরা ও উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। ইসিএল জানায়, কাজকর্ম প্রায় স্বাভাবিকই ছিল।
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ আসানসোলের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ধর্মঘটীদের একটি মিছিল বেরোয়। অভিযোগ,তারা জোর করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে চালকদের কাছ থেকে গাড়ির চাবিও ছিনিয়ে নেওয়া হয় অভিযোগ। এর মধ্যে তৃণমূলের বেশ কিছু সদস্য-সমর্থকেরা একটি মিছিল করে এলাকায় আসেন। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও শুরু হয়। পুলিশের একটি বাহিনী এসে ভিড় হটিয়ে দিলেও রাস্তার মাঝে শুয়ে পড়েন ধর্মঘটীরা। বাধ্য হয়ে জোর করে তাদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। |
যুযুধান। আসানসোলে বনধ সফল করতে রাস্তায় নামল সিপিএম।
বনধ বিরোধীরাও বসে ছিলেন না। ছবি: শৈলেন সরকার। |
বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রায় একশো জনের একটি দল মিছিল করে বিএনআর চৌমাথায় এসে রাস্তা অবরোধ করেন। তার জেরে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। পুলিশ ধর্মঘটীদের বাধা দিতে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এরই মধ্যেই তৃণমূলের পরিবহণ সংগঠনের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বে লাঠিসোঁটা নিয়ে মিনিবাসে চড়ে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয় তৃণমূলের একটি বাহিনী। দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। এর পর আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাজুবাবুর বক্তব্য, “যাত্রীবাহী বাস আটকানো হচ্ছিল বলে আমরা এসেছিলাম। হামলা চালানোর জন্য নয়।” তবে সিপিএমের আসানসোল জোনাল কমিটির সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে বন্ধে সামিল হয়েছেন।” সালানপুরে সামডিহি কোলিয়ারি এলাকায় কয়লা পরিবহণ বন্ধের চেষ্টা করেন ধর্মঘটীরা। তৃণমূল বাধা দিতে এলে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাধলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তৃণমূলের যুব কংগ্রেসের বর্ধমান জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের বক্তব্য, “সিপিএম গায়ের জোরে বনধ করেছে। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জোর করে বাস বন্ধ করেছে ও মারধরও করেছে।”
বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া মোটের উপর শান্তই ছিল আসানসোল শহর। আসানসোল বাজার-সহ কুলটি, বরাকর, রূপনারায়ণপুর, হিরাপুরে বিক্ষিপ্তভাবে দোকানপাট, বাজার-হাট বন্ধ ছিল। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক, বীমা সংস্থা বন্ধ ছিল। দুর্গাপুরের ডাকঘরও ছিল বন্ধ। আসানসোলের তুলসীরাণী বালিকা শিক্ষাসদনে এসে বিদ্যালয়ে তালা বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হন জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা রুমা রায়। তাঁর বক্তব্য, বিদ্যালয়ে এসে তালা বন্ধ দেখে এডিআইয়ের কাছে তিনি লিখিত পর্যায়ে তাঁর উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তুফান মণ্ডল, রানিগঞ্জ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি অনল মুখোপাধ্যায়দের দাবি, “বনধ সর্বতোভাবে সফল হয়েছে।” এ দিন শহরে বেশি বাস চলাচল করেনি। তবে বারাবনি এলাকায় বনধের কোনও প্রভাব পড়েনি। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের কার্যালয়ে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু জানান, আসানসোল থেকে যে সব ট্রেন যাত্রা করে তা সময়মতোই ছেড়ে বেড়িয়েছে। স্টেশনেও কোনও ট্রেন দাঁড়ায়নি। কর্মী সংখ্যার উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। আসানসোল পুরসভায় এ দিন কর্মীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল বলে জানান ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তবে এদিন সাধারণ মানুষজন কাজ নেওয়ার জন্য পুরসভামুখী হননি।
অন্ডালের উখড়ায় সব স্কুল খোলা থাকলেও পড়ুয়ারা অনুপস্থিত থাকায় পঠনপাঠন হয়নি। অন্ডাল-উখড়া রুটে রাস্তায় নেমেছে মোটে চারটি বাস। পাণ্ডবেশ্বরে বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। জামুড়িয়ায় পরিবহণ ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে বেশিরভাগ স্কুল কলেজ খোলা ছিল। জামুড়িয়ার নতুন জামশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় সব শিক্ষকই স্কুলে আসায় পঠন পাঠন স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বন্ধ ছিল রানিগঞ্জ বাজার।
দুর্গাপুরেও সরকারি অফিস ও বিভিন্ন শিল্প কারখানায় হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। শপিং মল বা কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও রাস্তায় নামেনি বেসরকারি বাস বা অটো। সরকারি বাস চলেছে। স্কুল কলেজে ছিল ছুটির হাওয়া। দুর্গাপুরে ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে। ভিড়িঙ্গি কালীবাড়ির সামনে ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের পথসভায় গিয়ে বনধ বিরোধীরা ‘হুমকি দেয়’ বলে অভিযোগ। সিটি সেন্টারেও জোর করে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক খোলার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তবে চণ্ডীদাস বাজারে দোকান না খোলার জন্য ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ ওঠে। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিটি সেন্টারে একাধিক ব্যাঙ্ক তো ওরাই পিকেটিং করে বন্ধ করে দিয়েছে। ধর্মঘট হলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি। বাম আমলে বহু ধর্মঘট হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ধীরে ধীরে মানুষ তা বুঝছেন।” তবে সিটুর জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর অভিযোগ, “পুলিশের সহায়তায় ও তৃণমূলের সঙ্গে মিলে জোর করে দোকানপাট খুলিয়েছে। কোথাও এমন নজির নেই।” তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
খনি ও শিল্পাঞ্চলের দুই মহকুমাতেই সরকারি অফিসে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষারানি এ জানান, সরকারি অফিসে একশো শতাংশ হাজিরা ছিল। পুরসভায় কর্মীদের হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। আসানসোলের মহকুমা শাসক শিল্পাগৌরী সরিয়ারও একই বক্তব্য। দুর্গাপুরের প্রতি রাস্তার মোড়েও মোতায়েন ছিলেন পুলিশ কর্মীরা। |
|
|
|
|
|