হাসপাতাল গড়ার জন্য গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে জমি কিনে দান করেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরকে। কিন্তু তার পরে ৪০ বছর কেটে গিয়েছে। হাসপাতাল আর হয়নি। ঘটনাটি হাওড়ার পাঁচলা গ্রামের। ১৯৭২ সালে চাঁদা তুলে ১২ বিঘা জমি কিনে গ্রামবাসীরা তা তুলে দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের হাতে।
গ্রামবাসীদের দাবি, ১৯৭৬ সালে কংগ্রেস সরকারের আমলে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অজিত পাঁজার উদ্যোগে স্বাস্থ্য দফতর এই জমিতে ১০০ শয্যার হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। পূর্ত দফতরকে ভবন তৈরির প্রাথমিক নির্দেশও দিয়ে দেয় তারা। কিন্তু ভবন তৈরির কাজ শুরু হওয়ার আগেই ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পরিকল্পনাটি ধামা চাপা পড়ে যায়। বছর তিন আগে এই জমির সামান্য অংশে অবশ্য তৈরি হয়েছে পঞ্চায়েত সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গ্রামবাসীরা এটিকে ‘নাকের বদলে নরুণ পাওয়া’ বলেই মনে করেন। |
এই জমিতেই হওয়ার কথা ছিল হাসপাতাল। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। |
এই এলাকার বাসিন্দারা মূলত সংখ্যালঘু এবং তফসিলি সম্প্রদায়ের। এই সব গরিব মানুষের জন্য কাছাকাছি কোনও ভাল হাসপাতাল নেই। স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এই এলাকা এবং সংলগ্ন ১০-১২টি গ্রামের বাসিন্দাদের গুরুতর কোনও অসুখ করলে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল বা গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এখান থেকে ওই দু’টি হাসপাতালের দূরত্ব অনেকটাই বেশি। সেই অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই এখানে একটি হাসপাতাল গড়ার জন্য চাঁদা তুলে জমি কিনে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু হাসপাতাল আর হল না।”
গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে জমি কেনায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন পাঁচলা ধর্মতলার বাসিন্দা নিমাই বেজ। তৈরি করেছিলেন পাঁচলা গ্রামোন্নয়ন সমিতি। ৭২ বছরের এই বৃদ্ধ বলেন, “হাসপাতাল যাতে তৈরি হয় সেই দাবি জানিয়ে আমরা স্বাস্থ্য দফতর থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দিয়েছি। হাসপাতালের জন্য যে অনুমোদন পাওয়া গিয়েছিল সেই সংক্রান্ত চিঠিও আমরা বিভিন্ন মহলে দেখিয়েছি। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগই নেয়নি। এত বড় জমি ফাঁকাই পড়ে রয়েছে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য সাফ জানিয়েছে, এই জমিতে আপাতত হাসপাতাল গড়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যে যে সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ হাসপাতাল গড়া হয়েছে সেখানেই চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা যাচ্ছে না। রয়েছে পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা। ফলে নতুন করে ওই জমিতে আবার একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা আপাতত সম্ভব নয়। গ্রামবাসীরা অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ। নিমাইবাবু বলেন, “হাসপাতাল গড়ার দাবিতে আমরা শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করব।” |