হাসপাতালের বারান্দায় সদ্যোজাতদের নিয়ে শুয়ে রয়েছেন জনা ষাটেক মা। তাঁরা শয্যা পাননি। রাতে বারান্দায় গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাওয়া ঢুকছে হু হু করে। শিশুদের বুকে চেপে কম্বল চাপা দিয়ে কাঁপছিলেন প্রতিমা লোহার, সোনালী ভুঁইয়া, বুল্টি লোহাররা। এই ছবি বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালের শিশু বিভাগের।
শিশু বিভাগের প্রায় মুখোমুখি প্যাথোলজি বিভাগ। সেখানেও বারান্দায় লম্বালম্বি শিশুদের নিয়ে শুয়ে রয়েছেন মায়েরা। শিশুদের বিছানার পাশে পড়ে রয়েছে রক্তমাখা তুলো, ব্যবহৃত সূঁচ, পরীক্ষার জন্য আনা মূত্রের শিশি।
বিষ্ণুপুর স্টেশন রোডের বাসিন্দা শিখা মহন্ত বললেন, “বাধ্য হয়ে প্যাথোলজি বিভাগের সামনে বাচ্চাকে নিয়ে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। শয্যা চেয়েও পাচ্ছি না। এই ভাবে শুয়ে থাকার জন্য অন্য কোনও রোগ সংক্রমণের ভয় হচ্ছে।” জয়পুর থানার বাঘাজোল গ্রাম থেকে এখানে নিজের বাচ্চাকে ভর্তি করা দীপিকা মাইতির কথাতেও ক্ষোভ ধরে পড়ল। তাঁর অভিযোগ, “ঠান্ডা মেঝেতে শুয়ে থাকায় শিশু আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। |
এ ভাবেই বারান্দায় পড়ে রয়েছে শিশুরা। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
শিশুদের মায়েদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, প্যাথোলজি বিভাগের চিকিৎসক তড়িৎকান্তি পালের কথায় তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “প্যাথোলজি বিভাগের বারান্দায় শিশুদের নিয়ে শুয়ে রয়েছেন মায়েরা। এতে আমাদের যেমন কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে, তেমনি শিশুদের সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে।” হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক মনোজ ষন্নিগ্রহী বলেন, “রোগীদের প্রচণ্ড চাপ থাকার জন্যই শিশুদের শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না।” তাঁর অসহায় স্বীকারোক্তি, “শিশু বিভাগে মাত্র ১৬টি বেড রয়েছে। অথচ দৈনিক এই বিভাগে ৮০ জন শিশু থাকে। শয্যাগুলিতে দু’জন করে শিশু রেখেও সবাইকে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না।” তিনি আরও জানান, এই মহকুমা হাসপাতালে তিনিই একমাত্র শিশু চিকিৎসক। ফলে তাঁর পক্ষেও সব শিশু রোগীকে ঠিক মত নজর দেওয়াও অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।” হাসপাতাল সুপার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “রোগীর আত্মীয়রা রোজই শয্যা না পেয়ে আমার কাছে অভিযোগ করছেন। সমস্যার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য ভবন ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি দিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে সমস্যা আরও বাড়বে।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা বলেন, “ওই হাসপাতালটি জেলা হাসপাতালের স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে শিশু ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা ১৬ থেকে বেড়ে প্রায় ১৫০ হবে। তার জন্যই অপেক্ষা করছি।” তিনি জানান, শিশুদের প্যাথোলজি বিভাগের সামনে থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া সম্ভব কি না হাসপাতাল সুপারকে তা দেখতে বলা হয়েছে। |