এক দিকে বাড়ির লোকের সংক্রমণের ভয়, অন্য দিকে সরকারি বিধির গেরো। দুইয়ের টানাপোড়েনে যক্ষ্মা হাসপাতালে রোগীদের মাঝখানে রোগ সংক্রমণের প্রবল আশঙ্কা নিয়ে পড়ে রয়েছে পাঁচ দিনের এক শিশু!
মায়ের ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা এমডিআর যক্ষ্মা) হয়েছে। অর্থাৎ, যক্ষ্মার প্রচলিত ওষুধ তাঁর দেহে কাজ করছে না। সংক্রমণের ভয়ে তাই পূর্ণগর্ভা অবস্থাতেই ক্যানিংয়ের বাসিন্দা পূর্ণিমা পাল নামে বছর পঁচিশের ওই মহিলাকে বাড়ির লোক ফেলে দিয়ে গিয়েছিলেন যাদবপুর কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালে। সেখানেই ১৪ মার্চ রাতে শিশুকন্যা প্রসব করেন পূর্ণিমা। স্বামী পরেশ পাল ও শাশুড়ি শোভা পাল শিশুটিকে বাড়ি নিতে চাননি। শোভাদেবীর কথায়, “মায়ের কু-রোগ আছে। ওর থেকে বাচ্চার শরীরেও যক্ষ্মার জীবাণু ঢুকেছে। এই শিশুকে ঘরে তুললে আমাদেরও রোগ হবে।”
মা ও সদ্যোজাতকে দিন তিনেকের জন্য পাঠানো হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। সেখান থেকে সোমবারই দু’জনকে ফেরত পাঠানো হয়। বাঙুর কর্তৃপক্ষের কথায়, “আমাদের হাসপাতালে এমডিআর রোগী রাখার ব্যবস্থা নেই। আর মা ছাড়া বাচ্চাকে রাখার প্রশ্ন নেই।” এখন কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালে এমডিআর যক্ষ্মা রোগী মায়ের সঙ্গে এক বিছানায় এবং অন্য এমডিআর রোগীদের সঙ্গে একই ঘরে পড়ে আছে ওই শিশু। |
সেই সদ্যোজাত। নিজস্ব চিত্র |
যক্ষ্মা চিকিৎসকেরাই বলছেন, সদ্যোজাতের দেহে যে কোনও মুহূর্তে ওই রোগের জীবাণু ঢুকতে পারে। তা হলে কেন তাকে অন্য জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? সুপার বিনয়রঞ্জন প্রধানের বক্তব্য, “আমাদের হাসপাতালে তো আলাদা নিওনেটাল বা পেডিয়াট্রিক্স বিভাগ নেই। কোথায় রাখব সদ্যোজাতকে? বাঙুর তো রাখল না।”
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, কে এস রায় হাসপাতাল চত্বরেই তো বেসরকারি কে পি সি মেডিক্যাল কলেজ আছে। সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, তাদের কিছু শয্যায় সরকারি হাসপাতাল থেকে পাঠানো দরিদ্র রোগীদের নিখরচায় চিকিৎসা পাওয়ার কথা। কিন্তু সুপারের বক্তব্য, “শিশুটিকে সেখানে রাখার কথা স্বাস্থ্যভবন বলতে পারে। আমরা ভর্তি করতে গেলেই কে পি সি টাকা চাইবে।” আর স্বাস্থ্য দফতর কী বলছে? স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের কথায়, “এই রকম পরিস্থিতিতে আমরা আগে পড়িনি। শিশুটিকে বাড়ির লোক নিয়ে গিয়ে আলাদা করে দুধ খাওয়ালে সব চেয়ে ভাল হত। এখন আমাদের আলাদা গাইডলাইন নিয়ে ভাবতে হবে।”
চিকিৎসক ও নার্সরাই স্বীকার করেছেন, রোগীদের মুখে মাস্ক থাকলেও কখন তা সরে যাবে, সব সময়ে নজর রাখা সম্ভব নয়। তাই কতক্ষণ শিশুটি নিরাপদ থাকবে কেউ জানে না। বক্ষরোগ-বিশেষজ্ঞ আলোককুমার ঘোষাল, পার্থসারথি ভট্টাচার্যেরা এই ঘটনা শুনে স্তম্ভিত। তাঁদের বক্তব্য, কোনও সদ্যোজাতকে এমডিআর যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে রাখা অভাবনীয়। অবিলম্বে তাকে সরিয়ে, মায়ের দুধ আলাদা করে সংগ্রহ করে দিতে হবে। না হলে যে কোনও মুহূর্তে শিশুটির এমডিআর যক্ষ্মা হতে পারে। |