|
|
|
|
অনিশ্চয়তা ছায়া ফেলেছে জনজীবনে |
আন্দোলনে সাড়া মিলবে কি, সংশয়ে খোদ মোর্চা নেতারাই |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
এক দিকে পাহাড় ও লাগোয়া সমতলে অশান্তির চেষ্টা হলে তা কড়া হাতে দমনের ইঙ্গিত দিয়েছে রাজ্য সরকার, অন্য দিকে জনজীবন স্তব্ধ হবে এমন আন্দোলনের ডাক দিলে আগের মতো পাহাড়বাসীর সাড়া মিলবে কি না, তা নিয়ে দলের মধ্যেই রয়েছে সংশয়। এ দুইয়ের টানাপোড়েনের জেরে সংঘাতে যাওয়ার ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কিছুটা সুর নরম করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
তাই সোমবার মোর্চার তরফে নতুন করে কোনও আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়নি। উপরন্তু, মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ পাহাড়ের ৪ পুরসভার ৮৪ জন কাউন্সিলর ও লোকসভার সাংসদ যশোবন্ত সিংহকে ইস্তফা দেওয়ার দাবি করলেও তা নিয়ে প্রকাশ্যে দলের কোনও নেতা মন্তব্য করেননি। শুধু তাই-ই নয়, রাজ্যসভার একটি আসনের আর্জি উপেক্ষিত হলেও ‘নরমে-গরমে’ এগোতে চাইছেন মোর্চার নেতা-কর্মীদের অনেকেই।
মোর্চার প্রচার সচিব তথা কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে কোনও অশান্তি হোক তা আমরা চাই না।” ঘটনা হল, রবিবার মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘ধোঁকা’ দেওয়ার অভিযোগ এনে ৭ এপ্রিল থেকে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দেন। সেই খবর পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সরকারি সূত্রের খবর, সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, বাম আমলে যাই-ই হোক না কেন, এখন পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে অশান্তির কোনও চেষ্টা রাজ্য সরকার বরদাস্ত করবে না। সরকারি ভাবে না-হলেও কয়েকজন শীর্ষ অফিসারের মাধ্যমে সেই বার্তা পৌঁছে যায় মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও।
এমতাবস্থায় মোর্চা নেতৃত্ব রাতেই বৈঠকে বসেন। মোর্চা সূত্রের খবর, সেখানে আলোচনায় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের একাংশ জানান, তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির দাবির বিষয়টির কবে নিষ্পত্তি হবে তা স্পষ্ট নয়। সেই সঙ্গে রাজ্যসভার আসনের দাবিও তৃণমূল জোট সরকার মানেনি। এই অবস্থায় রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে গেলে পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন তাঁরা। তখনই আন্দোলনের ডাক দিলেও আগের মতো পাহাড়বাসীদের সাড়া মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
রাজ্য সরকার গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের জন্য ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। কিন্তু, ভোটে যাওয়ার আগে মনোনীত জিটিএ গড়ে পাহাড়ে ক্ষমতা দখলের রাস্তা আরও মসৃণ করা দরকার বলে মোর্চা নেতাদের অনেকেই ওই বৈঠকে মত প্রকাশ করেন। মোর্চার এক নেতা জানান, তার পরেই ঠিক হয় একদিকে নানা আন্দোলনের হুমকি দিয়ে চাপ বাড়ানো হবে, অন্য দিকে জিটিএ চালানোর জন্য আপাতত মনোনীত বোর্ড গঠনের জন্য রাজ্য সরকারকে রাজি করানোর চেষ্টাও চলবে।
তবে রাজ্য সরকার মনোনীত বোর্ড গড়বে কি? সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, জিটিএ আইনে ভোটের মাধ্যমে বোর্ড গঠনের কথা বলা রয়েছে। কিন্তু, অতীতে মেয়াদ ফুরনোর পরে একাধিকবার সুবাস ঘিসিংকে মনোনীত হিসেবে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ চালানোর জন্য বামেদের সরকার বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে। মোর্চার একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কোনও কারণে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে ফের অশান্তি হতে পারে, এমন আশঙ্কা রুখতে বিশেষ ক্ষমতাবলে রাজ্য মনোনীত জিটিএ গড়তেই পারে। সেই কারণেই সুর চড়ানোর পর দিন আন্দোলনের ব্যাপারে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি মোর্চা নেতৃত্ব।
তবে রাজ্য সরকার মনোনীত জিটিএ গঠন করা হবে না বলে অনড় থাকলে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে মোর্চা নেতাদের অনেকেই স্বীকার করেছেন। তাঁরা জানান, আগামী ১৮ এপ্রিল নাগরাকাটায় এক জনসভায় সবই খোলাখুলি জানাবেন গুরুঙ্গ। দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি শুধু বলেন, “দলীয় স্তরে রোজই বৈঠক চলছে। নতুন কোনও কর্মসূচি চূড়ান্ত হলে সভাপতি ঘোষণা করে দেবেন।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “আমরা আশা করছি, মোর্চা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।” পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দলগুলির একাধিক নেতার অভিযোগ, মোর্চা আদতে ‘নাটক’ করছে। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “পুরোটাই নাটক। মনোনীত জিটিএ তৈরি করে তাঁর মাথায় বসতে চাইছেন মোর্চা নেতারা। আন্দোলনের কথা ঘোষণা হচ্ছে মার্চে। কিন্তু আন্দোলন হবে এপ্রিল মাসে। অর্থাৎ সময় কেনার নাটক।” সিপিআরএমের সাধারণ সম্পাদক রত্নবাহাদুর রাই জানান, ঘটনা-পরম্পরা বলছে মোর্চা নেতারা দর কষাকষির রাজনীতি করছেন। সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা সবই নজর রাখছি। কোনও অবস্থায় মনোনীত জিটিএ মানব না।” |
|
|
|
|
|