‘নজিরবিহীন’ ভাবে বাম-জমানার শেষ-পর্বের কঠোর সমালোচনা করল সিপিআইয়ের যুব সংগঠন ‘নিখিল ভারত যুব ফেডারেশন’ (এআইওয়াইএফ)। সংগঠনের রাজ্য সাংগঠনিক কনভেনশনের খসড়া প্রতিবেদনে বামফ্রন্ট সরকারের নীতির সঙ্গে এমনকী ‘বুর্জোয়া’ সরকারের নীতির তুলনাও টানা হয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে শোরগোল শুরু হয়েছে সিপিআইয়ের অন্দরেও। বামফ্রন্ট সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আজ এ কথা অস্বীকার করার কোনও কারণ নেই যে, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পথ বামফ্রন্টের চলার ঘোষিত পথ হলেও শেষ কয়েক বছর বুর্জোয়া সরকারের সঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের নীতির তেমন কোনও পার্থক্য সূচিত করা যায়নি। শিল্পায়নের নামে দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজিকে উৎসাহদান, প্রথম বিশ্বে পরিত্যক্ত শিল্পসমূহকে রাজ্যে আমন্ত্রণ করা-সহ কৃষির সম্প্রসারণের যথাযথ ব্যবস্থা না করেই জমি অধিগ্রহণের নীতি বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষ থেকেই ঘোষিত হয়েছিল।”
আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি না করে কাজ করার জন্যই ‘বিপর্যয়’ এসেছে বলেও মনে করে সিপিআইয়ের যুব সংগঠন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি না করে, দাম্ভিকতা ও ঔদ্ধত্যকে গুরুত্ব দিয়ে, সহযোগী দলগুলির মতামতকে অগ্রাহ্য করে শিল্পায়নের গাছে রাতারাতি ফল ফলানোর উদ্যোগ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে বামফ্রন্টকে। তারই প্রতিফলন হয়েছে ব্যালটবাক্সে’। শনি ও রবিবার মেদিনীপুরে এআইওয়াইএফের রাজ্য সাংগঠনিক কনভেনশনের আয়োজন করা হয়েছিল। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বাছাই করা প্রায় ১২৫ জন কর্মী এতে যোগ দেন। বুর্জোয়া সরকারের সঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের তুলনা টানা, তা-ও আবার শরিক দলের সংগঠনের, ‘নজিরবিহীন’ বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
পাশাপাশি অবশ্য তৃণমূল ও কংগ্রেস পরিচালিত বর্তমান জোট সরকারেরও কড়া সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগের অবকাশ রাখে। প্রশাসন স্বাধীন ভাবে চলবে বলে সরকারের তরফে বলা হলেও যে কোনও ঘটনা ঘটলেই সে ঘটনা ‘সাজানো’ বা ‘চক্রান্ত’ বলে তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই ঘোষণা করছেন সরকারের প্রধান। এর ফলে তদন্ত কতটুকু সঠিক ভাবে এগোতে পারে কিংবা আদৌ হতে পারে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। সাম্প্রতিককালে একাধিক ঘটনা এ কথা প্রমাণ করে সরকার এবং প্রশাসনের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনার কোনও মিল নেই’। বলা হয়েছে, ‘সরকারে আসীন হওয়ার পর দশ মাস কেটে গেলেও জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার করার কোনও উদ্যোগ সরকারি তরফে লক্ষ করা যায়নি বলেও প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে’।
নিজেদের সংগঠন প্রসঙ্গেও অবশ্য এআইওয়াইএফের প্রতিবেদনে আত্মসমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘অদ্ভুত একটা শৈথিল্য লক্ষ করা যাচ্ছে। ঠিক যে সময়ে সংগঠনের জন্য, সংগঠনকে নিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন, সেই সময়েই নেতৃত্ব থেকে কর্মী--সকলের মধ্যে চূড়ান্ত গা-ছাড়া মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। নতুন করে সংগঠন ঢেলে সাজানোর জন্য সব স্তরে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।’ |