গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের বিপরীত ছবি দেগঙ্গায়
খুঁটি পোঁতার দু’বছর পরে গ্রামে বিদ্যুৎ, খুশির ছোঁয়া
দু’বছর আগে যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন খড়ুয়া-চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দারা, অবশেষে তা বাস্তবায়িত হল। বিদ্যুৎ এল দেগঙ্গার ওই গ্রামে।
এই দু’বছর কম কষ্ট সহ্য করেননি গ্রামবাসীরা। আশপাশের একের পর এক গ্রামে যখন বিদ্যুদয়ন হয়েছে, তখন তাঁরা শুধু তাকিয়ে দেখেছেন। গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি বসেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি। বাধ্য হয়ে পথেও নেমেছেন গ্রামবাসীরা। রেল-সড়ক অবরোধ করেছেন একাধিকবার। কিন্তু বিদ্যুৎ আসেনি। বিদ্যুতের তার কোথা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এ নিয়ে গ্রামে বিবাদের জেরেই সংযোগ দেওয়া যাচ্ছিল না, জানিয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা।
অবশেষে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে শনিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জয় বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ওই গ্রামে যায়। বিবদমান দু’পক্ষকে বুঝিয়ে শুরু হয় বিদ্যুতের তার লাগানোর কাজ। রবিবার সন্ধ্যায় গ্রামের ২০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অচিরেই বাকি আবেদনকারীদেরও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার এই প্রত্যন্ত গ্রামটিতে প্রায় দু’হাজার মানুষের বাস। অধিকাংশই গরিব কৃষিজীবী। তাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সন্ধ্যার পরে এত দিন গ্রামের রাস্তাঘাট সুনসান থাকত। যে দু’একটা দোকান খোলা থাকত, সেখানে হ্যারিকেন বা কুপি জ্বলত। বাড়িগুলিরই একই অবস্থা। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করতে হচ্ছিল ওই অল্প আলোতেই। বাঁধানো রাস্তা আর বিদ্যুৎ এই দু’টিই ছিল গ্রামবাসীদের মূল চাহিদা। এ নিয়ে তাঁরা প্রশাসনের নানা মহলে আবেদনও করেছেন। রাস্তা এখনও তৈরি হয়নি। রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে অনুমোদন পাওয়ার পরে গ্রামে ১৩৮টি বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হয় ২০১০ সালে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খুঁটি পোঁতার পর থেকেই শুরু হয় গোলমাল। খড়ুয়া-চাঁদপুরের পাশের গ্রাম গোঁসাইপুর। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ওই গ্রামের উপর দিয়েই বিদ্যুতের তার নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। তা নিয়েই গোঁসাইপুরের তৃণমূল নেতা হুমায়ুন রেজা চৌধুরী আপত্তি তোলেন। গ্রামের উপর দিয়ে তার নিয়ে যাওয়া হলে চাষজমির ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। এর প্রতিবাদ করেন খড়ুয়া-চাঁদপুরের তৃণমূল নেতা রাজ্জাক মণ্ডল। এ নিয়েই গোলমাল চলতে থাকে। বিষয়টি তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব পর্যন্ত পৌঁছয়।
শনিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জয় বিশ্বাস এসে বিবদমান দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। তার পরেই শুরু হয় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। যা খুশির জোয়ার এনেছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। সেই আনন্দে গা ভাসিয়েছেন তৃণমূল নেতারাও। হুমায়ুন রেজা চৌধুরী বলেন, “ব্যক্তিগত কোনও সমস্যা ছিল না। বিদ্যুতের খুঁটির জন্য কিছু গ্রামবাসী চাষের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলেন বলে সে কথা জানিয়েছিলাম। যাই হোক, প্রশাসনের সঙ্গে সকলের কথা হয়েছে। পাশের গ্রামে আলো এসেছে, এটা ভাল ব্যাপার।” রাজ্জাক বলেন, “সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। দু’টি খুঁটি সরিয়ে দেওয়ায় তা মিটে গিয়েছে। ভাবছি, পাশাপাশি এই দু’টি গ্রামের সকলকে নিয়ে এক দিন আনন্দ করব।”
৭৮ বছর অন্ধকারে কাটিয়ে এ বার বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখে খুশি উপচে পড়ছে খড়ুয়া-চাঁদপুরের মোজাম্মেল গাজি। রবিবার তাঁর বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়। মোজাম্মেল বলেন, “সামান্য বিষয় নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়ায় আমরা সকলে খুশি। বিদ্যুৎ এল। এ বারে রাস্তাঘাটের পরিবর্তন হলে আরও ভাল লাগবে।” বৃদ্ধ অমল কুণ্ডুও বলেন, “ছেলেবেলা থেকে স্বপ্ন দেখছি, বাড়িতে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। এত দিনে সেটা সত্যি হল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.