অবহেলায় পড়ে পাল যুগের স্থাপত্য
রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দফতরের গাফিলতিতে পাল যুগের বেশ কিছু স্থাপত্য-ভাস্কর্য আজিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে পড়ে থেকেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বছর দু’য়েক আগে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মাটি খুঁড়তে গিয়ে আজিমগঞ্জের বেণিপুর গ্রাম থেকে ওই ভাস্কর্য পাওয়া যায়। সেই সময়ে পাল আমলের ওই স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও অন্য পুরাবস্তু সংগ্রহ করে আজিমগঞ্জে পুলিশ ক্যাম্পে রাখা হয়। পরে জিয়াগঞ্জে রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের অধীনে যে জেলা সংগ্রহশালা রয়েছে, সেখানে প্রদর্শনের জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও তা কার্যকরী হয়নি। খোলা আকাশের নিচে অযত্নে ও অবহেলায় তা পড়ে রয়েছে। বেণিপুরের ওই প্রত্নস্থলটি ঐতিহাসিক কারণে সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তাও হয়নি।
বেণীপুর থেকে পাওয়া পাল আমলের ভাস্কর্য পড়ে ফাঁড়িতে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
রাজ্য প্রত্নতত্ব দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “ওই সমস্ত স্মারক ও পুরাবস্তু প্রদর্শনের জন্য জিয়াগঞ্জে জেলা সংগ্রহশালায় নিয়ে এসে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু সংগ্রহশালায় কেন তা নিয়ে যাওয়া হয়নি তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এমনকী সংগ্রহশালার দায়িত্বপ্রাপ্ত যিনি কিউরেটর রয়েছেন, তিনিও আমাকে কিছু জানাননি।” কিউরেটর মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও লিখিত নির্দেশ নেই। ফলে জেলা সংগ্রহশালায় নিয়ে আসার ব্যাপারে আমিও উদ্যোগী হতে পারিনি।” সেই সময়ে মন্দিরের প্রবেশ দ্বারের কালো পাথরের দু’টি স্তম্ভ-সহ অন্য স্থাপত্যের অংশ বিশেষ পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়াও পুরাবস্তু হিসেবে বিভিন্ন মাটির পাত্র, পোড়া মাটির বল এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রও প্রত্নস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয়। অমলবাবু বলেন, “অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পাল যুগের আমল। প্রচুর সামন্ত প্রভুদের পরাজিত করে রাম পাল (১০৭৭-১১৩০ খ্রিস্টাব্দ) ভাগীরথীর পশ্চিম তীরবর্তী রাঢ় অঞ্চল সম্পূর্ণ দখল করেন। এই সমস্ত পরাজিত সামন্ত প্রভুদের নিজ নিজ অঞ্চলে উচ্চভূমিতে দেওয়াল পরিবৃত প্রাসাদ লক্ষ্য করা যায়।” তবে কোনও একটি স্থানে পাল রাজাদের স্থায়ী রাজধানী ছিল, এমন তথ্য প্রমাণিত নয়। খুব সম্ভবত তাঁরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। আজিগঞ্জের বেণিপুরেও তেমনই একটি অভিজাতদের বসবাসের কেন্দ্র হওয়ায় স্বাভাবিক। এখান থেকে নদীপথে রাজ্যের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা স্বাভাবিক ছিল বলে অমলবাবু মনে করেন।
খোদাই করা পাথর, পোড়ামাটির ফলকপাল শিল্পকলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। অমলবাবু বলেন, “পাল নৃপতিদের শাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে ওড়িশা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কালো পাথর সহজলভ্য ছিল। পাল আমলের মন্দিরের আঙিনা গুলো চতুষ্কোণ হত। উঁচু ভিটের উপরে স্থাপিত হত। মূল মন্দিরের পাশে প্রচুর ছোট মন্দির থাকত।” তাঁর কথায়, “পাল আমলে প্রচুর পরিমাণে পাথরের স্তম্ভ ব্যবহারের রেওয়াজ ছিল। পাল যুগে পোড়ামাটির শিল্পও জনপ্রিয় ছিল। বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করার সুবাদে তাঁরা যে বিহার তৈরি করতেন, তার পাশে প্রচুর ছোট ছোট কক্ষ, স্তূপ, মন্দির, শিক্ষাকেন্দ্র, কূপ, স্নানাগার, রন্ধনশালা, ভোজনালয় নির্মাণ, এক সঙ্ঘবদ্ধ জীবনের পরিচয় বহন করে।” তিনি বলেন, “ইতিহাসের দিক থেকে আজিমগঞ্জের এই এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ইতিহাসের ওই উপাদান সংগ্রহ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গোটা বিষয়টি জানিয়ে বিষয়টি জেলাপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নজরে আনব।”
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের পক্ষ থেকে লিখিত চিঠি পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.