|
|
|
|
জমি-জটে আটকে গোকর্ণের বিদ্যুৎ প্রকল্প |
পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসবে হাওড়া এবং হুগলিতে। তার জন্য মুর্শিদাবাদের গোকর্ণতে তৈরি করতে হবে সাবস্টেশন। কিন্তু গোটা পরিকল্পনাটাই আটকে গিয়েছে জমি-জটে।
গোকর্ণের বাসিন্দাদের দাবি, জমির বদলে রাজ্য সরকার যে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছে, তা বেশ কম। আরও বেশি ক্ষতিপূরণ এবং পরিবার পিছু এক জনকে সরকারি চাকরি না দিলে তাঁরা জমি দেবেন না। আর রাজ্য সরকারের বক্তব্য, নিয়ম মেনেই গোকর্ণে অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঠিক করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বৈঠক করেও সমাধান
সূত্র মেলেনি।
গোকর্ণতে এখন রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার ২২০ কেভি-র একটি সাবস্টেশন রয়েছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে যে হেতু সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা আর ১০০০ মেগাওয়াট বেড়ে যাবে, তাই উৎপাদিত ওই বিদ্যুৎই গোকর্ণ সাবস্টেশনের মাধ্যমে হাওড়া এবং হুগলিতে আনার পরিকল্পনা করা হয়। তার জন্য সাবস্টেশনটির সংবহন ক্ষমতা যেমন ২২০ থেকে বাড়িয়ে ৪৪০ কেভি করতে হবে। একই ভাবে হুগলির চণ্ডীতলাতেও আরও একটি ৪০০ কেভি-র সাবস্টেশন গড়ে উঠবে। পরিকল্পনা মাফিক প্রথমে গোকর্ণতে রাজ্যের ভূমি রাজস্ব দফতর ২৯৪ জন চাষির কাছ থেকে মোট ৩১ একর জমি অধিগ্রহণ করে। ক্ষতিপূরণ বাবদ জমিহারাদের একর প্রতি ৭ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়। জমিহারাদের মধ্যে ১৭ জন সেই হারে টাকাও নিয়ে নেন। কিন্তু অন্যেরা বেশি টাকার দাবিতে বেঁকে বসেছেন।
রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমরেশচন্দ্র সরকার বলেন, “গোকর্ণের জমি আইনত অধিগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ এখন তার দখল ছাড়তে চাইছেন না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ওই জমি না পেলে সাগরদিঘির বিদ্যুৎ আনা যাবে না।” মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয়কুমার ঘোষ বলেন, “অধিগৃহীত কৃষি জমির সবটাই এক চরিত্রের নয়। জমির মান বুঝেই দাম ঠিক করেছে প্রশাসন। এই নিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।”
অনিচ্ছুক কৃষকেরা ইতিমধ্যেই গোকর্ণ কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি গড়ে একর পিছু ২০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে পরিবার পিছু এক জনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে। কমিটির সম্পাদক মানিক মণ্ডলের বক্তব্য, সরকার জমির যে দাম দিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। এলাকার বাসিন্দারা চাষ করেই জীবনধারণ করেন। এ ক্ষেত্রে সরকার ক্ষতিপূরণের যে টাকা ঠিক করেছে, তা অতি সামান্য। টাকা বাড়ানোর পাশাপাশি চাকরির দাবিও করা হয়েছে। সরকার দাবি না মানলে তাঁরা জমি দেবেন না।
শুধু গোকর্ণই নয়, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলায় জমি জটের জেরে আটকে রয়েছে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত নানা প্রকল্প। কোথাও সাবস্টেশন তৈরি আটকে রয়েছে, কোথাও বা বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার জন্য টাওয়ার বসানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ কর্তাদের অনেকেই বলছেন, তাঁদের শাঁখের করাতে পড়ার মতো অবস্থা। বর্তমান সরকারের ঘোষিত নীতি হল, জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রামে-গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চাপ আসছে সরকারের থেকেই।
জমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে সিপিএমের গোকর্ণ লোকাল কমিটির সম্পাদক সুশীল দাস বলেন, “উন্নয়নের কাজে জমি নেওয়া হলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে সরকারকে দেখতে হবে চাষিরাও যেন জমির ন্যায্য দাম পান।” পাশাপাশি, তৃণমূলের কান্দি ব্লক কমিটির সম্পাদক তথা গোকর্ণ অঞ্চল কমিটির সভাপতি দেবাশিস রায়চৌধুরী মনে করেন, সরকার জমির দাম বেশ কম দিচ্ছে। তবে চাষিরা যে টাকা দাবি করছেন, তাও অত্যধিক। মাঝামাঝি একটা রফা হওয়া উচিত বলেই তিনি মন্তব্য করেছেন।
সাগরদিঘিতে এখন ৬০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ৫০০ মেগাওয়াট করে মোট ১০০০ মেগাওয়াটের নতুন দু’টি ইউনিট নির্মাণের কাজ চলছে। সম্প্রতি যার বয়লার প্রতিস্থাপনের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। নির্মীয়মাণ ওই ইউনিট দু’টি থেকেই উৎপাদিত বিদ্যুৎ হাওড়া-হুগলির গ্রাহকদের দেওয়ার কথা। কিন্তু পরিকল্পনার শুরুতে একটি সাবস্টেশন তৈরি করতে গিয়ে যে ভাবে জমি-জটে জড়িয়ে পড়েছেন বিদ্যুৎ কর্তারা, তাতে ভবিষ্যতে ওই কেন্দ্র থেকে কী ভাবে বিদ্যুৎ আনা হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। |
(সহ প্রতিবেদক: বিমান হাজরা) |
|
|
|
|
|