লক্ষ্মণদের গ্রেফতার
নন্দীগ্রাম-কাঁটায় আবারও
অস্বস্তিতে জেলা সিপিএম
তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যে কৃষক-মৃত্যু, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, সন্ত্রাসের মতো বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে জেলা জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়ার লক্ষ্যে দলের কৃষক, শ্রমিক, যুব ও মহিলা সংগঠনের জেলা-কমিটির সদস্যদের নিয়ে শনিবার তমলুকে জেলা-কার্যালয়ে আলোচনার আয়োজন করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিএম নেতৃত্ব। সকাল ১১টা থেকে শুরু ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক কানু সাউ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্মল জানা, তমালিকা পণ্ডাশেঠ, প্রণব দাস, নিরঞ্জন সিহি-রা। বৈঠকের মাঝপথে, দুপুর দেড়টা নাগাদ খবর আসে, নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে মুম্বইয়ে সিআইডি-র হাতে ধরা পড়েছেন লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাউ, অশোক গুড়িয়া। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর তিন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের ধরা পড়ার খবরে নিমেষে বদলে যায় বৈঠকের পরিবেশ। বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকাদেবী। জেলা কার্যালয়ে উপস্থিত অন্য নেতারাও মুষড়ে পড়েন। বিকেল তিনটের মধ্যেই সুনসান হয়ে পড়ে সিপিএম জেলা কার্যালয়।
নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে সিআইডি তদন্ত শুরু করার কয়েক দিন পর থেকেই আত্মগোপন করেছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত লক্ষ্মণবাবু, অমিয় সাউ, অশোক গুড়িয়া-সহ জেলা সিপিএমের প্রথম সারির বেশ কয়েক জন নেতা। সেই নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই আত্মগোপন করে থাকা এই নেতারা জানুয়ারির গোড়ায় এমনকী দলের জেলা সম্মেলনেও যোগ দেননি। জেলা সম্মেলনে অবশ্য ‘ফেরার’ নেতাদের স্ব-পদেই রাখা হয়েছিল। পরে রাজ্য সম্মেলনে কিন্তু রাজ্য-কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় একদা ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ লক্ষ্মণ শেঠকে। ঘরে-বাইরে কোণঠাসা লক্ষ্মণবাবুর আত্মগোপনও দীর্ঘস্থায়ী হল না। সিআইডি-র তৎপরতায় মুম্বইয়ের চেম্বুরে ধরা পড়ে গেলেন দুই সঙ্গী অমিয় সাউ, অশোক গুড়িয়ার সঙ্গেই। আপাতত সিআইডি-র হেফাজতেই রয়েছেন ২০০৭-এর নভেম্বরের নন্দীগ্রামে ‘সূর্যোদয় অভিযানে’র তিন নেতা। ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ‘নিখোঁজ’ কর্মীদের সম্পর্কে ভাবনীভবনের সদর দফতরে তিন নেতাকে টানা জেরা চলছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। আর এই ঘটনাবলিই জেলা জুড়ে আন্দোলনের প্রস্ততি নেওয়া সিপিএম নেতৃত্বকে ফের আতান্তরে ফেলেছে।
তৃণমূল সরকারের সমালোচনাকে সম্বল করেই আগামী পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছিলেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। প্রথমে দলের গণসংগঠনের ব্যানারে ব্লক ও জেলাস্তরে আন্দোলন-কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সঙ্গে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে ‘ব্যর্থতা’, ‘অকর্মণ্যতা’, ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’র অভিযোগকেও প্রচারে হাতিয়ার করার পরিকল্পনা ছিল সিপিএম নেতৃত্বের। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের জেরে পাঁচ বছর আগে জেলায় দুর্বল হয়ে পড়া সংগঠনকে লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে চাঙ্গা করেই আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু সেই নন্দীগ্রাম-কাঁটাই তাঁদের পরিকল্পনাকে ফের ধাক্কা দিল। দলের জেলা কমিটির এক নেতার বক্তব্য, রাজ্য সম্মেলন এবং ব্রিগেড সমাবেশের মধ্যে দিয়ে এই জেলাতেও কর্মীদের মধ্যে অনেক দিন পর ফের একটা উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল। সেই উদ্দীপনাকে সম্বল করে প্রথমে গণসংগঠনের স্তরে লাগাতার আন্দোলনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তিন নেতার গ্রেফতার ফের কর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কানু সাউ ধৃত নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে সর্বতোভাবে তাঁদের আইনি সাহায্য দেওয়ার কথা বললেও দু’এক মাসের মধ্যে হতে চলা হলদিয়া পুরনির্বাচন এবং বছর-শেষের বা পরের বছরের গোড়ায় নির্ধারিত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ঘটনা যে বড় ‘ধাক্কা’ তা মানছেন একাধিক সিপিএম নেতা। প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি তথা সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি মানছেন, “লক্ষ্মণবাবু-সহ তিন নেতার গ্রেফতারের ঘটনায় দলের কর্মীদের একাংশের মধ্যে কিছুটা হতাশা তৈরি হয়েছে হয়তো। তবে ধৃত নেতাদের পাশে দাঁড়িয়েই আমরা আইনি লড়াই চালাব।”
এ দিকে, এই গ্রেফতার-কাণ্ড কালিকটে আসন্ন সিপিএম পার্টিকংগ্রেসে দলের জেলা-প্রতিনিধির তালিকাতেও প্রভাব ফেলতে চলেছে। আগে ঠিক ছিল জেলা সম্পাদক কানু সাউ, নির্মল জানা, সত্যগোপাল মিশ্র, প্রশান্ত প্রধান, নিরঞ্জন সিহির সঙ্গেই পার্টি কংগ্রেসে প্রতিনিধি হবেন তমালিকা পণ্ডাশেঠ। কিন্তু ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে তমালিকাদেবীর পার্টিকংগ্রেসে যাওয়াও অনিশ্চিত বলে দলীয় সূত্রের খবর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.