নিজস্ব সংবাদদাতা • পাণ্ডুয়া |
পাণ্ডুয়ায় জোড়া খুনের তদন্তে নেমে এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, খুনের আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বচসা হয়েছিল গৃহকর্তা মোহিত সরকারের।
এই ‘সূত্র’কে প্রাধান্য দিয়েই তদন্ত এগোতে চাইছেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, আততায়ীরা মোহিতবাবুর পরিচিত। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “চরম কিছু ঘটতে পারে, তা আঁচ করেই আততায়ীরা আঁটঘাট বেঁধে এসেছিল। তাই অস্ত্রই শুধু নয়, লিউকোপ্লাস্ট পর্যন্ত এনেছিল। সৎকারের কাজ মিটলে ওই দম্পতির মেয়ের সঙ্গে ভাল ভাবে কথা বলা হবে।” খুনের ধরন দেখে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত যে, পেশাদার খুনিদের কাজে লাগানো হয়েছিল।
রবিবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী চড়াও হয় খন্যান স্টেশন থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে মুল্টি গ্রামে মোহিতবাবুর বাড়িতে। কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। একই ভাবে গলার নলি কেটে নৃশংস ভাবে খুন করা হয় তাঁর স্ত্রী লতাদেবীকেও। ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিলেন তাঁদের একমাত্র মেয়ে মৌসুমী। তাঁর কোনও ক্ষতি করেনি আততায়ীরা। পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর হাত-পা বেঁধে, মুখে লিউকোপ্লাস্ট আটকে তাঁকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। |
মৌসুমী স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ান। বাড়ি ছাড়াও খন্যানে জমি রয়েছে প্রাক্তন সেনাকর্মী মোহিতবাবুর। বর্তমানে তিনি কলকাতার একটি সংস্থার হয়ে ডানকুনি কোল কমপ্লেক্সে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। মৌসুমী পুলিশকে জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যায় জনা কয়েক ব্যক্তি বাড়ির সামনে এসে বাবার নাম ধরে ডাকে। আগন্তুকদের মধ্যে এক জন প্রৌঢ় ছিল। মোহিতবাবুই দরজা খোলেন। শোওয়ার ঘরে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বচসা হয় তাঁর। মোসুমী সে সময়ে ছাদে ছিলেন। চেঁচামিচি শুনে তিনি নীচে নেমে আসেন। দু’জন লোক তাঁকে টানতে টানতে একটি ঘরে নিয়ে যায়। মুখে লিউকোপ্লাস্ট আটকে দেওয়া হয়। হাত-পা বেঁধে রেখে বাইরে থেকে ঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, কথা কাটাকাটি চলার সময়ে আচমকাই দুষ্কৃতীরা ধারাল অস্ত্র নিয়ে মোহিতবাবুর উপরে ঝাঁপিয়ে
|
মোহিত সরকার। |
পড়ে। ভারি চেহারার প্রাক্তন ওই সেনাকর্মী প্রতিরোধের চেষ্টা করেও পারেননি। দুষ্কৃতীরা তাঁর গলার নলি কেটে দেয়। পেটেও এলোপাথাড়ি অস্ত্রের কোপ মারে। লতাদেবী সে সময়ে বাড়ির অদূরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। বাড়ি ফিরতেই দুষ্কৃতীরা তাঁকেও রেয়াত করেনি। গৃহকর্ত্রীর গলা এবং ঘাড়ে কোপানো হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই দম্পতি। কোনও রকম প্রতিরোধ ছাড়াই গা-ঢাকা দেয় দুষ্কৃতীরা।
কিছুটা দূরে লতাদেবীর বাপের বাড়ি। দুষ্কৃতীরা চলে যাওয়ার পরে তাঁর মা কমলা মণ্ডল মোহিতবাবুদের বাড়ি আসেন। মেয়ে-জামাইকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। পাশের ঘর থেকে মৌসুমীর গোঙানি শুনে তাঁকে উদ্ধার করেন। মৌসুমীই প্রতিবেশীদের খবর দেন। গ্রামবাসীদের দাবি মেনে রাতেই ব্যারাকপুর থেকে পুলিশ কুকুর আনা হয়। কুকুর ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে প্রথমে স্টেশনের দিকে যায়। তারপরে ঘুরে এসে ধানখেতের পাশ দিয়ে গ্রামের ভিতরে ঢোকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মোহিতবাবু উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায় থাকতেন। কয়েক বছর আগে খন্যানে বাড়ি করেন। লতাদেবী গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে, হেরে যান। জমি নিয়ে গণ্ডগোলের পাশাপাশি মোহিতবাবুর কর্মস্থলে কোনও সমস্যা ছিল কিনা, সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
|