অপহৃত দুই ইতালীয়ের মুক্তির ব্যাপারে মাওবাদীদের তরফে নতুন করে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে। সোমবার রাতে মাওবাদীদের তরফে এ কথা জানানোর পাশাপাশি এ ব্যাপারে মধ্যস্থতা করার জন্য তিন জনের নাম সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। এঁরা হলেন সিপিআই (মাওবাদী)-র পলিটব্যুরো সদস্য নারায়ণ সান্যাল, মানবাধিকার কর্মী দণ্ডপাণি মহান্তি ও বিশ্বপ্রিয় কানুনগো। দণ্ডপাণি মহান্তি গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মালকানগিরির তৎকালীন জেলাশাসক আর ভি কৃষ্ণকে অপহরণের সময় মধ্যস্থতাকারীর কাজ করেছিলেন। তিনি নিজেও দুই বিদেশির মুক্তির ব্যাপারে কথা বলতে রাজি। তবে নারায়ণ সান্যাল এখন রায়পুরের কেন্দ্রীয় কারাগারে। তিনি কী ভাবে মধ্যস্থতা করবেন, তা নিয়ে সরকারি মহলে সংশয় তৈরি হয়েছে।
রবিবার কন্ধমাল ও গঞ্জাম জেলার সীমানা থেকে বসুকো পাওলো ও ক্লদিও কোলানজেলো নামে দুই ইতালীয়কে অপহরণ করে মাওবাদীরা। দুই বিদেশির মুক্তির শর্ত হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে অভিযান বন্ধ ও তাদের নেতাদের মুক্তি-সহ মোট ১৩টি দাবি জানিয়ে মাওবাদীরা যে লিফলেট পাঠিয়েছিল, তার সময়সীমা শেষ হয়ে যায় সোমবার সন্ধ্যাতেই। কিন্তু তখনও পর্যন্ত বন্দি দু’জনের মুক্তির ব্যাপারে এক পা-ও এগোতে পারেনি ওড়িশা সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই বন্দিদের কী দশা হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। তার মধ্যেই মাওবাদীরা নতুন করে সময়সীমা বাড়ানোয় ও তিন জন মধ্যস্থকারীর নাম ঘোষণা করায় সামান্য হলেও আশার আলো দেখছে প্রশাসন। |
সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, “এখনও কেন্দ্র বা রাজ্যের তরফে ওই অঞ্চলে কোনও অভিযান চালানো হয়নি। মাওবাদীরা এই প্রথম বিদেশিদের অপহরণ করল। ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সঙ্গে ওঁদের কোনও যোগ নেই।” আজ বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর সঙ্গে দু’জনের মুক্তির ব্যাপারে ফোনে কথা বলেন ইতালির বিদেশমন্ত্রী গুইলিও তেরজি। পাওলো ও ক্লদিওকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আজ ফের মাওবাদীদের কাছে অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক।
গত ১৯ বছর ধরে পুরীতে রয়েছেন বসুকো পাওলো। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওড়িশার প্রত্যন্ত অঞ্চলে, আদিবাসীদের ডেরায় অবাধ আনাগোনা ছিল তাঁর। স্থানীয়দের অনেকে তাঁর মুক্তির দাবিতে গলা ফাটিয়েছেন। তবে অনেকেরই অভিযোগ, পর্যটক ভিসা নিয়ে ১৯ বছর ধরে কী ভাবে রইলেন পাওলো। নিয়ম অনুযায়ী ১৮০ দিনের বেশি এক টানা ভারতে থাকতে পারেন না পাওলো। সময়সীমা ফুরলে দেশ ছাড়তেই হবে তাঁকে। |
তার পর ফের ভারতে আসতে পারেন। কিন্তু পাওলো নিয়ম মানেননি। পর্যটন দফতরকে না জানিয়ে পুরীতে রীতিমতো ‘ট্রেকিং’ ও ‘অ্যাডভেঞ্চার’-এর অফিসও খোলেন। অভিযোগ উড়িয়ে পুরীর পর্যটন দফতরের এক কর্তা জানান, ভ্রমণ সংস্থা খুলতেই শুধু অনুমতির লাগে। কিন্তু ব্যবসা সংক্রান্ত ভিসা ছাড়াই পুলিশের নজর এড়িয়ে কী ভাবে গত কয়েক বছরে এই কাজ চালাচ্ছেলেন পাওলো, সে প্রশ্ন উঠেছে। কন্ধমালের পুলিশ সুপার জে এন পঙ্কজ জানান, ১২ মার্চ ক্লদিও কোলানজেলোকে নিয়ে পাওলো কন্ধমালের দারিঙ্গিবাদিতে আসেন। গাইড হিসেবে দুই স্থানীয়কে নিয়ে যান। তখনই মাওবাদীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে তাঁদের সতর্ক করেছিল পুলিশ।
লিফলেটে মাওবাদী নেতা সুনীলের দাবি, ওড়িশার আদিবাসী অঞ্চলগুলোকে নিজের লাভের জন্য ব্যবহার করছিলেন পাওলো। সভ্য দুনিয়ার কাছে আদিবাসী সমাজকে পশুর স্তরে তুলে ধরছিলেন তাঁরা। এই ‘হিউম্যান সাফারি’ বন্ধ করতেই তাঁকে বন্দি করা হয়েছে। মাস দু’য়েক আগে ওড়িশারই আদিবাসী অঞ্চল ঘুরে দেখানোর বিজ্ঞাপন দেয় একটি ব্রিটিশ ভ্রমণ সংস্থা। জারোয়াদের মতো এ রাজ্যেও যে আদিবাসীদের নিয়ে সাফারি চলছে, তখনই সেটি প্রকাশ্যে আসে। |