মনমোহন সরকারের সঙ্কট থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা দূরে থাক, নিজেদের মধ্যেই এখন কোন্দলে ব্যস্ত বিজেপির শীর্ষ নেতারা। উত্তরপ্রদেশে ভোটকৌশল নিয়ে যেমন দলীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীর উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন আডবাণী-সুষমা-মুরলী মনোহর জোশীরা, এ বার রাজ্যসভার প্রার্থী নির্বাচন ঘিরেও প্রায় তারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
আজই ছিল রাজ্যসভায় মনোনয়ন পেশের শেষ দিন। তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার বিরোধী দলের উপনেতা সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে কোনও রাজ্য থেকেই দল প্রার্থী না করায় সুষমা বেজায় চটেছেন। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, আরএসএসের সমর্থন নিয়ে নিতিন গডকড়ী নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের রাজ্যসভায় নিয়ে এলেন। কিন্তু অহলুওয়ালিয়াকে আনার চেষ্টা হল না। এবং তাতে অরুণ জেটলিদেরও সায় ছিল। বিজেপি সূত্রের মতে, গডকড়ী-জেটলি অক্ষের বিরুদ্ধে সুষমার সংঘাতে লালকৃষ্ণ আডবাণীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। প্রকাশ্যে না এলেও আডবাণী সুষমাকে প্রচ্ছন্ন মদত দিয়ে যাচ্ছেন। ঝাড়খণ্ডে আবার বিজেপি নির্দল, শিল্পপতি অংশুমান মিশ্রকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ঝাড়খণ্ডের সাংসদ যশবন্ত সিন্হা প্রকাশ্যেই পদত্যাগের হুমকি দিচ্ছেন। যশবন্তের অভিযোগ, অংশুমানকে সমর্থনের সিদ্ধান্তের পিছনে ‘কেনাবেচার খেলা’ রয়েছে। আপত্তি রয়েছে জোশীরও।
এখানেই শেষ নয়, বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে ফের কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রক্রিয়া শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন গডকড়ী ও জেটলি। এখন ইয়েদুরাপ্পা-বিরোধী অনন্ত কুমারের সঙ্গে মিলে তা ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছেন সুষমা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে চাপ বাড়াতে ইয়েদুরাপ্পা আজ তাঁর ঘনিষ্ঠ বি জে পুত্তাস্বামীকে কর্নাটক থেকে রাজ্যসভায় তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। ওই রাজ্য থেকে বিজেপি-র তরফে সরকারি ভাবে দু’জন প্রার্থী ইতিমধ্যেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। রাতে অবশ্য পুত্তাস্বামীকে সাসপেন্ড করেছে দল। রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা, সুষমা-আডবাণীদের তুষ্ট করতে এই সিদ্ধান্ত নিলেন নিতিন। আর ইয়েদুরাপ্পাকেও বার্তা দেওয়া হল, খুব বেশি চাপ দিলে লাভ হবে না। |
ক্ষুব্ধ সুষমা আজ বলেন, “অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী না করা আমাদের বড় লোকসান। রাজ্যসভায় বিরোধী দলের স্তম্ভ তিনি। আর ইয়েদুরাপ্পা চাপের রাজনীতি করে মুখ্যমন্ত্রীর গদি ফিরে পেতে চাইছেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত টেলিফোনে হয় না। কোর গ্রুপের বৈঠকে তাঁকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ফের বৈঠক ডেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” গডকড়ী শিবিরের বক্তব্য, অহলুওয়ালিয়া ঝাড়খণ্ডের সাংসদ ছিলেন। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, শিবু সোরেনের ছেলে হেমন্তকে নিয়ে গডকড়ী গতকালই মুম্বইয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু অহলুওয়ালিয়া নিজেই সেখান থেকে প্রার্থী হতে চাননি। অহলুওয়ালিয়া অবশ্য সে কথা স্বীকার করছেন। তাঁর মতে, “ঝাড়খণ্ড থেকে জিততে হলে কেনাবেচা করতে হত। আমি নিজের জন্য সে পথে যাব না।”
কিন্তু সুষমা ও অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগ, সারা দেশে থেকে একটা আসনেও রাজ্যসভার উপনেতাকে প্রার্থী করা গেল না, এটা কেমন কথা? যেমন বিহার থেকে অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করা যেত। গডকড়ী নিজের ঘনিষ্ঠ ধর্মেন্দ্র প্রধানকে প্রার্থী করলেন, অথচ অহলুওয়ালিয়ার কথা ভাবলেন না। ওই রাজ্য থেকে প্রথম যে দুই প্রার্থীকে ঠিক করলেন নিতিন, তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় প্রার্থী হিসেবে ধর্মেন্দ্রর বদলে অহলুওয়ালিয়াকে ভাবা যেত। অথচ অহলুওয়ালিয়াকে বিজেপির তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে ধরে আলোচনা হল। গডকড়ীর ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, “এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। জেডি (ইউ) যাতে রাজ্যের ষষ্ঠ আসনটি (বিজেপির জন্য তৃতীয় প্রার্থী) ছেড়ে দেয়, জেটলি সে জন্য নীতীশ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু নীতীশ রাজি হননি। জোটধর্ম বজায় রাখতে বিহারের বড় ভাইকে বিজেপি নিজের ভোটগুলো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” আর গডকড়ী নিজে ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, বিহারে ওই আসনটি পেতে কম চেষ্টা করা হয়নি। কিন্তু নীতীশ জোটধর্ম রাখেননি।
সংসদের উচ্চ কক্ষের পরবর্তী উপনেতা কে হবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। রবিশঙ্কর প্রসাদ, নাজমা হেপতুল্লা, প্রকাশ জাভড়েকরদের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপি সূত্রের মতে, রবিশঙ্কর প্রসাদ এখন দলের প্রধান মুখপাত্র-সহ সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। তাঁকে পরবর্তী উপনেতা করতে হলে সেই পদগুলো ছাড়তে হবে। সুষমা আজ বলেন, “সংসদের চলতি অধিবেশনের প্রথম পর্ব পর্যন্ত অহলুওয়ালিয়াই উপনেতা থাকছেন। তার পর তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন, তা স্থির করবেন অরুণ জেটলিই। আমার এখানে কোনও ভূমিকা নেই।” |