অবশেষে রেলমন্ত্রী হিসাবে আগামিকাল শপথ নিতে চলেছেন মুকুল রায়।
আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত সিলমোহর লাগে। তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার আগে প্রধানমন্ত্রী এক বার মুকুলের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন। আগামিকাল সকাল দশটায় রেলমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন মুকুল। তবে দলের অধিকাংশ সাংসদ ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও দলনেত্রী যে থাকছেন না তা আজ জানিয়েছেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরবর্তী রেলমন্ত্রী কে হবেন, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তা নিয়ে জল্পনা ছিল। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রথম দিন মমতা স্পষ্ট করে দেন, মুকুলকেই তিনি রেলমন্ত্রীর পদে দেখতে চান। তা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা অব্যাহত ছিল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় মমতাকে অনুরোধ করেন, তাঁর বাজেটের পরই রেলমন্ত্রী সরানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে সমীকরণ বাজিয়ে দেখতেই সময় নিচ্ছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেসের তরফে এমন প্রস্তাবও ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মুকুল পূর্ণমন্ত্রীর বদলে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসাবে রেলের দায়িত্বভার গ্রহণ করুন। গুঞ্জন এও ছিল, তৃণমূলের পক্ষ থেকে মুকুলের পরিবর্তে অন্য সাংসদের নাম চাওয়া হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে গত রাতে দিল্লি এসে মমতা শুধু পূর্ণমন্ত্রীর পদটিই সুনিশ্চিত করলেন তা নয়, ইঙ্গিত দিলেন আংশিক ভাড়া কমানোরও।
আজ দুপুর একটা নাগাদ সংসদে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে স্পিকার মীরা কুমারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকার। তারপর তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠক চলাকালীনই তাতে যোগ দেন মুকুলবাবু। তখনই ঠিক হয়ে যায় পরবর্তী রেলমন্ত্রী হচ্ছেন তিনি। কিন্তু যে ভাবে কংগ্রেসের একাংশ মন্ত্রিসভায় মুকুল রায়ের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ‘বিরোধিতা’ করছিল তাতে তাঁর ক্ষোভ চেপে রাখেননি মমতা। মমতার বক্তব্য, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কে মন্ত্রী হবেন তা ঠিক করেন সনিয়া গাঁধী তথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। মন্ত্রিসভায় তাঁর দলের একজনই পূর্ণ মন্ত্রী রয়েছে। কাকে সেই পদের জন্য নির্বাচিত করা হবে তা তৃণমূল ঠিক করবে। অন্য কেউ নয়। পাশাপাশি কংগ্রেস শরিক তৃণমূলের সঙ্গে ‘যে ব্যবহার’ করছে তা যে দল ভাল ভাবে নিচ্ছে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “যত দিন সম্মানের সঙ্গে থাকা যাবে তত দিন জোটে আছি।”
আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যাত্রিভাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়েও কথা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। চলতি রেল বাজেটে রেল ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা হওয়ার পরেই তা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছিলেন মমতা। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি এ-ও বলেছিলেন, বাতানুকূল শ্রেণিতে ভাড়া বাড়লে ততটা ক্ষতি নেই। কিন্তু নিম্ন শ্রেণিতে ভাড়া বৃদ্ধির অর্থই হল আমজনতার উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। আজ দুপুরে মমতা নিজের বাড়ি থেকে সংসদে যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “উচ্চ শ্রেণিতে যারা যাতায়াত করেন ভাড়া বাড়লে তাদের কোনও অসুবিধা নাও হতে পারে। কিন্তু যারা স্লিপার বা নিত্যযাত্রী তাদের ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি হলে বোঝা চাপবে। আমাদের দল থেকে রেলমন্ত্রী হিসাবে কেউ দায়িত্ব নিলে যাত্রিভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টিতে পরিবর্তন করা হবে।” তৃণমূল সূত্রের খবর, আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মমতা ভাড়া বৃদ্ধির বিপক্ষে তাঁর যুক্তি মনমোহনকে জানান। মমতা জোর দেন আংশিক প্রত্যাহারের উপর। দল জানিয়েছে, ওই দাবি মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দায়িত্ব পাওয়ার পরে রেলমন্ত্রী হিসাবে মুকুল রায় বাজেট বিতর্ক চলাকালীন যাত্রিভাড়ার বিন্যাস পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে চলেছেন। বর্তমানে জাহাজমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মুকুলবাবুর ব্যক্তিগত সচিব পদে আছেন বন্দনা যাদব। তৃণমূল সূত্রের খবর, তিনিই নয়া রেলমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হতে চলেছেন। মুকুলবাবুর জায়গায় জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগ দায়িত্ব পেতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত কিছু জানানো হয়নি।
‘দীনেশ কাণ্ড’ নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে অনেক ঝড়-ঝাপটা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের উপর। এমনকী আজ মমতা যখন সংসদে এলেন তখনও উত্তেজনা ছিল সাংসদদের চোখে-মুখে। আজ সব ‘ভালয়-ভালয়’ মিটে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় দলীয় দফতরে সাংসদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন মমতা। আলোচনা হয় সংসদীয় কর্মপন্থা নিয়ে। পরিকল্পনা ছিল নৈশভোজেরও। কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক অজিত ভুঁইয়ার মৃত্যুতে তা বাতিল করা হয়। |