দিনভর দলনেত্রীরই পাশে ‘অনুগত’ দীনেশ
বিবার রাত পর্যন্ত তিনি ছিলেন ‘প্রতিবাদী’ রেলমন্ত্রী। সোমবার দিনভর রাজধানী যাঁকে দেখল, তিনি তৃণমূলের ‘অনুগত’ এক সাংসদ।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পরে অবশেষে আজ ভূমিকা পরিবর্তন দীনেশ ত্রিবেদীর! গত কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত যিনি ছিলেন তৃণমূল নেত্রীর মাথাব্যথার প্রধান কারণ, সেই তিনিই আজ সংসদে প্রায় সর্বক্ষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে পাশে ঘুরেছেন! কার্যত পার্শ্বচরিত্র হয়ে! আর সংসদের সময়টুকু বাদ দিলে দিনভর বিষণ্ণ, নিষ্প্রভ এক সদ্য প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে দেখল রাজধানী। যিনি এ দিন ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে নিজেই গাড়ি চালালেন! আবার সকালবেলা রেলভবনে গিয়ে মন্ত্রী হিসেবে কর্তাদের সঙ্গে শেষ বৈঠক করার পর নিজেই হেঁটে চলে গিয়েছেন ক্যান্টিনের কর্মীদের বিদায় জানাতে। দৃশ্যতই আবেগতাড়িত।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আজ প্রথম সংসদে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা দিন কাটালেন সেন্ট্রাল হলে। আগামিকালও মমতা রাজধানীতে তাঁর সাংসদদের নিয়ে সক্রিয় থাকবেন। তবে সেটা অন্য কারণে। সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত বেতনবোর্ড-এর সমর্থনে এক অবস্থান-ধর্নায় যোগ দেবেন তিনি।
সংসদ থেকে বেরনোর পথে দীনেশ ত্রিবেদী। সোমবার। ছবি: রাজেশ কুমার
গত কাল রাতে ইস্তফা দেওয়ার পর দীনেশ ফোনে যোগাযোগ করেন তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে। মমতা তাঁকে বলেন, সোমবার তৃণমূলের সংসদীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকতে। সেই নির্দেশ অমান্য করেননি দীনেশ। তৃণমূলের শীর্ষসূত্রের খবর, দীনেশ যে শেষ পর্যন্ত ইস্তফা দিয়ে দলকে সমস্যামুক্ত করেছেন, এবং এ বিষয়ে মমতার নির্দেশের বিরোধিতা করে তাঁকে আরও বিব্রত করেননি, তা মাথায় রাখা হচ্ছে। এটাও স্পষ্ট যে, কবীর সুমনের মতো প্রতি দিন দলবিরোধী বিবৃতি দেওয়ার রাস্তায় হাঁটতে রাজি নন দীনেশ। অনেকেই মনে করছেন, দলত্যাগ করে কংগ্রেস অথবা বিজেপিতে যাওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। গত কাল বিবৃতি দেওয়ার পরে দীনেশ স্পষ্টই জানিয়েছিলেন যে, তৃণমূলের সাংসদ হিসেবেই তিনি রাজনীতি করতে চান। এ হেন দীনেশকে রেলমন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তাঁর অভিজ্ঞতাকে রাজ্য প্রশাসনে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
আজ মমতা সংসদে ঢোকার সময় লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদদের যে বিরাট দল বাইরে এসে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান, তাঁর মধ্যে ছিলেন দীনেশও। সেন্ট্রাল হলেও মমতার পাশে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। এক সঙ্গে দু’জনে চা খান। আজকের মমতা-দীনেশ কথোপকথন হয়তো বরাবরের মতো সপ্রতিভ ছিল না। তবে সকলেই বলছেন যে, সেটা এত তাড়াতাড়ি সম্ভবও নয়। তবে স্বাভাবিক হওয়ার যথেষ্ট চেষ্টা দু’তরফেই দেখা গিয়েছে। আগামিকাল নতুন রেলমন্ত্রী হিসেবে মুকুল রায়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কি যাচ্ছেন সদ্য প্রাক্তন রেলমন্ত্রী? অল্প হেসে দীনেশের জবাব, “দেখা যাক। কালকের তো এখনও অনেক দেরি।”
দিনভর বিষণ্ণতার আবহে এক বারই আনন্দিত হতে দেখা যায় প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সকালে লোকসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, “শ্রী ত্রিবেদীর বিদায়ে আমি দুঃখিত। তাঁর পূর্বসূরি যে ‘ভিশন ২০২০’-র রূপরেখা তৈরি করেছিলেন, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিই তাঁর রেল বাজেটে ছিল।” পরে অভিভূত দীনেশ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আজ বুঝিয়ে দিলেন যে, আমার করা বাজেটের পাশেই তিনি রয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ ওঁর প্রতি।” তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টিকে নিছকই ‘সৌজন্য’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। মমতার কথায়, “প্রধানমন্ত্রী সবার বাজেটেরই প্রশংসা করেন। এটা সৌজন্যের মধ্যে পড়ে। এই নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই।” তাঁকে ‘না জানিয়ে’ তথা দলের ‘নির্দেশ অমান্য করে’ দীনেশের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে অবশ্য আজ মমতার গলায় ছিল ভিন্ন সুর। রেলের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার সম্পর্কে আজ কিছুটা সুর নরম করেন মমতা। রেল বাজেটের দিনই নন্দীগ্রামে এক সভায় তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছিলেন, রেলের ভাড়া বাড়তে দেওয়া হবে না। আজ তিনি বর্ধিত ভাড়া আংশিক প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “উচ্চ শ্রেণিতে যাঁরা যাতায়াত করেন, ভাড়া বাড়লে তাঁদের কোনও অসুবিধা না-ও হতে পারে।” তবে এরই পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমার ধারণা ওঁকে কেউ ভুল বুঝিয়েছিল।” তিনি যে দীনেশের কাছে বাজেটের খুঁটিনাটি জানতে চাননি, শুধু মাত্র ‘থিম’ জানতে চেয়েছিলেন, সে কথাও এ দিন জানিয়েছেন মমতা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.