বাবার তৈরি বাড়ি। তাঁর মৃত্যুর পরে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে টানাপোড়েন। শেষমেশ মাকে বাড়ির অধিকার থেকে সরিয়ে দিতে মামলা করলেন দুই ছেলে। ছেলেরা পাশে না থাকলেও অসহায় বৃদ্ধাকে নিরাশ করেনি আদালত। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সাফ জানিয়ে দেন, উইলে-দলিলে যা-ই লেখা থাক, স্বামীর বাড়িতে তাঁর অধিকার কেউ কাড়তে পারবে না। তিনি যা চান, তা-ই হবে। যে অংশে থাকতে চান, সেখানেই থাকবেন। বাকি অংশে দুই ছেলেকে সপরিবার থাকতে দিলেও যেন তাঁদের থেকে ভাড়া নেওয়া হয়।
সল্টলেক এ-ই ব্লকের ২৫৮ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা ইভা বসুর সঙ্গে এ দিন নিজেই কথা বলেন বিচারপতি সোমেন সেন। জানতে চান, তাঁর ইচ্ছে কী?
অসহায় গলায় ইভাদেবী বলেন, “কী আর চাইব! শেষ ক’টা দিন আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই।” বিচারপতি বলেন, “আপনি আত্মসম্মান নিয়েই বাঁচবেন। আদালত আপনার কথাই শুনবে।” তাঁর দিকে নিরুত্তর তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধা, নিজের সন্তানেরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় এই বয়সে যাঁকে আসতে হয়েছে আদালতে।
সল্টলেকের বাড়িটি তৈরি করেছিলেন ইভাদেবীর স্বামী নবেন্দু বসু। তাঁর মৃত্যুর পরে ছেলেরা ওই বাড়িতে মায়ের অধিকার অস্বীকার করতে চাইছেন। তাঁদের বক্তব্য, বাবা মারা যাওয়ার আগে দু’টি উইল করেছিলেন। প্রথম উইলে মাকে বাড়ি দেওয়া হয়েছিল। পরে তা খারিজ করে দ্বিতীয় উইলে বাড়ি দেওয়া হয় দুই ছেলেকে। এই নিয়েই মামলা। এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন ইভাদেবীর বড় ছেলে দেবাশিস বসু এবং পুত্রবধূ মধুমিতা।
ছেলে-বৌমার সামনেই এ দিন বিচারপতি ইভাদেবীকে প্রশ্ন করেন, “বড় ছেলে আপনাকে দেখেন?”
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধা। বিচারপতি ফের জানতে চাইলে নিচু গলায় কোনও মতে জানান, “দেখে না।”
এ বার বিচারপতির প্রশ্ন, “আর ছোট ছেলে?”
এ বারেও নিশ্চুপ মা। চার পাশে এক বার তাকিয়ে দেখে নেন। ছোট ছেলে আদালতে নেই। বলেন, “একটু একটু দেখে।”
বিচারপতি বলেন, “দেখতে হবে। মাকে যেমন ভাবে দেখা উচিত, তেমন ভাবেই দেখতে হবে।”
এর পরেই বিচারপতি সোমেন সেন জানিয়ে দেন, আগামী ২৮ মার্চ হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় দেবে। ইভাদেবী বাড়ির কোন অংশে থাকতে চান, তা জানাবেন তিনিই। সেখানেই তাঁর থাকার ব্যবস্থা হবে। সে দিন আদালতে হাজির হতে হবে দুই ছেলেকেও। হাইকোর্ট স্থির করে দেবে, ইভাদেবী যাতে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন, তার জন্য ছেলেদের কী করতে হবে, কোন ছেলেকে কত টাকা দিতে হবে। অন্যথা হলে হাইকোর্ট কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, তা-ও সে দিনই জানিয়ে দেবেন বিচারপতি। |