আদালতের নির্দেশ বারবার অগ্রাহ্য করায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে ডেকে পাঠাল হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশ, কাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ কমিশনারকে আদালতে হাজির হতে হবে। বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত চিত্ত বসু নামে এক সরকারি বাসচালকের আগাম জামিনের আবেদনকে কেন্দ্র করে। আদালত সূত্রের খবর, গত ২০ ফেব্রুয়ারি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকায় চিত্তবাবুর বাসের ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ঘটনার পরে চিত্তবাবু বাসটি গ্যারাজে জমা দিয়ে চলে যান।
এর পরে তিনি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ৫ মার্চ হাইকোর্ট আমহার্স্ট স্ট্রিট থানাকে ওই দুর্ঘটনার মামলার কেস-ডায়েরি হাজির করতে বলে। কিন্তু, ওই দিন কেস-ডায়েরি জমা করেনি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা। পরের দিন হাইকোর্ট ফের কেস-ডায়েরি চেয়ে পাঠায়। সে দিনও সেটি আসেনি। ৭ মার্চ হাইকোর্ট ওই থানার আইসি-কে কেস-ডায়েরি নিয়ে ফের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।
আদালত সূত্রের খবর, ৭ মার্চ কেস-ডায়েরি হাইকোর্টে জমা পড়ে। কিন্তু আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার আইসি হাজির হননি। তার বদলে কেস-ডায়েরি নিয়ে হাইকোর্টে যান ওসি (ফেটাল)। এতে ক্ষুব্ধ ডিভিশন বেঞ্চ জানতে চায়, আইসি কেন আদালতে আসেননি? তার কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এর পরে ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করে, কেস-ডায়েরি না পাঠানোটাই রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। আদালত চাওয়া সত্ত্বেও কেন আইসি সময় মতো কেস-ডায়েরি পাঠাননি, পুলিশ কমিশনারকে তার তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত।
সোমবার আদালতে পুলিশ কমিশনারের ওই তদন্ত-রিপোর্ট জমা পড়ে। চিত্তবাবুর আইনজীবী সুকন্যা ভট্টাচার্য জানান, পুলিশ কমিশনারের পাঠানো রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, তাঁর বদলে তদন্ত করেছেন ডিসি (নর্থ)। ওই রিপোর্ট দেখে এবং বারবার আদালতের নির্দেশ যে ভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, তাতে ক্ষুব্ধ হয় ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিনই চিত্তবাবুর আগাম জামিন মঞ্জুর করে ডিভিশন বেঞ্চ। ওই সময়েই আদালত জানতে পারে, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার আইসি হৃদ্রোগে আক্রান্ত। সে কারণে আইসি-কে কিছু না বললেও পুলিশ কমিশনারের আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করার প্রবণতাকে মেনে নিতে পারেনি ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কাল বুধবার হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে তাঁকেই বলতে হবে, এ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করা হল কেন?
আদালতের ওই নির্দেশ লালবাজারে পৌঁছনোর পরে পুলিশকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন-সহ কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা হাইকোর্টে চলে আসেন। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। |