ডিজিটাল। ২০০০ সালে সিঙ্গাপুরে স্যামসাং গোটা বিশ্বের সামনে ঘোষণা করে আর নয়। এ বার থেকে সংস্থার সব বৈদ্যুতিন যন্ত্র ব্যবহার করবে ডিজিটাল প্রযুক্তি। রবিবার ব্যাঙ্ককে সংস্থার ঘোষণা, এ বার তাদের সব যন্ত্র নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারবে। কোনও তার ছাড়াই। ক্যামেরা ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে কম্পিউটারে বা টেলিভিশনে। টেলিভিশন থেকে কথা বলা যাবে বিদেশে আত্মীয়ের সঙ্গে। ব্যাঙ্ককে ছেলের তোলা ছবি কলকাতার বাড়িতে বসে সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাবেন বাবা-মা। সংস্থার পরিভাষায় ‘all share’। পশ্চিম এশিয়া তথা ভারতের বাজারই তাদের পাখির চোখ।
শুধু পশ্চিম এশিয়া নয়। এই প্রযুক্তি গোটা বিশ্ব বাজারের জন্যই। কিন্তু ভারত-সহ এশিয়ার এই অঞ্চলের ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের যন্ত্রগুলিতে। যেমন টেলিভিশন। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেমন ভিডিও ফোনের কাজ করানো যাবে আলাদা কোনও কম্পিউটার না-জুড়েই, ঠিক তেমনই মৌখিক আদেশেই চ্যানেল বদলে দেবে এই টিভি। আর বিভিন্ন লোকের উচ্চারণ বিভিন্ন, সেটা মাথায় রেখেই এই টিভি যাতে ৩০টি ভাষা যাতে বুঝতে পারে, সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। রয়েছে কম্পিউটার এবং ফোনের মতোই বিশেষ ‘অ্যাপস’। মানে এই টিভি শুধু চ্যানেলের অনুষ্ঠানই দেখাবে না, আরও নানা কাজের সুবিধা নিয়ে হয়ে উঠবে প্রায় কম্পিউটার। আর এখানেও রয়েছে সংস্থার দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তি কেন্দ্রের সহযোগিতায় তৈরি পরিষেবা।
সংস্থার কথায়, এ বার সময় এসেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি থেকে আরও এক কদম এগিয়ে যাওয়ার। তাই সংস্থার প্রযুক্তির জোর এখন ‘স্মার্ট’ আন্তঃযন্ত্র যোগাযোগ, ‘স্মার্ট কনটেন্ট’ এবং ‘স্মার্ট’ বিবর্তনের উপর। স্মার্ট মানে এখানে অবশ্যই ইন্টারনেট নির্ভর প্রযুক্তি। আর এই মন্ত্রেই তারা বিশ্ব বাজারে তাদের জায়গা ধরে রাখতে চাইবে কোরিয়ার এই ‘চেবল’টি। যে-ভাবে ‘ডিজিটাল’ মন্ত্রে তারা জয় করেছে বিশ্ব।
অথচ ২০০০ সালের আগে বিশ্ব বাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার সব সংস্থার পণ্যকেই একটু সন্দেহের চোখে দেখতেন ক্রেতারা। কিন্তু আজ বাজার বদলে গিয়েছে। স্যামসাঙেরও। ১৯৩৮ সালে তৈরি হওয়া সংস্থাটিতে এখন কাজ করেন ১,৬০,০০০ কর্মী। মেমারি চিপ, এলইডি ও এলসিডি স্ক্রিনের ব্যবসায় এক নম্বর ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায় হিউলেট-প্যাকার্ডকে পিছনে ফেলে এক নম্বর জায়গা কেড়ে নিয়েছে ২০০৯ সালেই। গ্যালাক্সি ফোন নিয়ে অ্যান্ড্রয়েড নির্ভর ফোনের বাজারে আজ দ্বিতীয়। বিশ্বের ৬৮টি দেশে ডানা ছড়িয়ে সংস্থাটি আজ ১৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের ব্যবসা করছে। যার প্রায় ৬৮ শতাংশই আসছে ‘ডিজিটাল’ ব্যবসা থেকে।
আর মোবাইল বাজারে আরও জাঁকিয়ে বসার জন্য গাঁটছড়া বেঁধেছে সংস্থাটি। অন্য কম্পিউটার বা ফোনে ‘অ্যাঙ্গরি বার্ড’ খেলতে গেলে পয়সা দিয়ে কিনতে হয় বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় যে-গেম, তা মিলছে বিনি পয়সায় গ্যালাক্সি ব্র্যান্ডের সব যন্ত্রে। এমনকী এই খেলার নতুন উদ্ভাবন ‘অ্যাঙ্গরি বার্ডস স্পেস’-ও মিলবে নিখরচায়।
দক্ষিণ এশিয়ার বাজার তাঁদের কাছে এই মুহূর্তে সব থেকে প্রতিশ্রুতির, বলছেন সংস্থার ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্তা বি ডি পার্ক। আর তা ধরতে তাঁদের প্রযুক্তি গবেষণাও যে এই বাজার ভিত্তিক হবে, তাতে সন্দেহ কী? |