স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট আরও দু’দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশন। প্রয়োজনে ধর্মঘট লাগাতার চালানো হতে পারে বলেও হুমকি দিয়েছে তারা। বাজেটে সোনার উপর বিভিন্ন স্তরে আমদানি শুল্ক এবং উৎপাদন শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে দেশ জুড়ে ধর্মঘটে নেমেছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং করিগরেরা।
সোনার উপর আমদানি শুল্কের হার বৃ্দ্ধি এবং গয়নায় নতুন করে উৎপাদন শুল্ক চাপানোর প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে দেশ জুড়ে ধর্মঘট ডাকে জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ফেডারেশন। স্বণর্র্শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, “প্রয়োজনে আমরা লাগাতার ধর্মঘটেও যেতে পারি। অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
পাশাপাশি, পরিষেবা করের হার বাড়ার ফলেও মূল্যবৃদ্ধির কোপে পড়তে চলেছে গয়না শিল্প। কর বৃ্দ্ধির ফলে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম এক লাফে প্রায় ১৫০০ টাকারও বেশি বাড়ার মুখে। ফেডারেশনের পরিচালন পর্ষদের ডিরেক্টর হর্ষদ আজমেরা বলেন, “জানুয়ারির পর বাজেটের আগে আরও এক দফা আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। অর্থাৎ তিন মাসে দু’বার বাড়ল এই শুল্ক। ফলে জানুয়ারিতে এক কেজি সোনা আমদানি করতে যেখানে ৩০,৯০০ টাকা শুল্ক দিতে হত, বাজেট প্রস্তাব কার্যকর হলে তা বেড়ে হবে ১.১৫ লক্ষ টাকা।” |
ঝাঁপ বন্ধ বৌবাজারের সোনাপট্টির। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য। |
বাজেটে বিভিন্ন স্তরে কাঁচা সোনা, গয়না ও গয়না তৈরির প্রক্রিয়ায় নয়া কর বসিয়েছেন বা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী:
• সোনার বার এবং মুদ্রায় আমদানি শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগে ছিল ২%। বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪%।
• এ ছাড়া ব্র্যান্ড-নাম ছাড়া গয়নার উপর উৎপাদন শুল্ক ছিল না। এ বার নতুন করে ১% উৎপাদন শুল্ক চাপানো হয়েছে।
• আগে গয়না শিল্পে পরিষেবা কর দিতে হত ১০.২%। এ বার দিতে হবে ১২%। অর্থাৎ এই তিনটি খাত মিলিয়ে কর বাড়ল ৪.৮০%।
• আমদানি করা যে সোনা ৮৫% খাঁটি, তা রিফাইনিং বা ধোলাই করার উপর উৎপাদন শুল্ক ১.৫% থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩%।
• পুরনো গয়না গলিয়ে তার খাঁটিত্ব ৯৯.৫ শতাংশের নীচে রাখা হলে তার উপরও ওই বাড়তি ১.৫% উৎপাদন শুল্ক দিতে হবে।
• কেউ এক সঙ্গে ২ লক্ষ টাকার বেশি গয়না কিনলে তাঁকে ১% টিডিএস (উৎসে কাটা কর) দেওয়ার প্রস্তাবও বাজেটে রয়েছে। ক্রেতার কাছ থেকে ওই টিডিএস কেটে তা বিক্রেতাকে আয়কর দফতরে জমা দিতে হবে।
অর্থাৎ সব মিলিয়ে গয়না শিল্পকে সর্বোচ্চ বাড়তি কর দিতে হবে ৭.৩০%।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এতে তাঁদের ব্যবসা ভাল রকম মার খাবে। বাবলুবাবু বলেন, “এমনিতেই বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বাড়ায় গয়নার দাম আকাশছোঁয়া। তার উপর কেন্দ্র এক ধাক্কায় প্রায় ৭.৩% কর বাড়িয়ে দেওয়ায় আমাদের অস্তিত্বের সঙ্কট দেখা দেওয়ার উপক্রম।” শিল্পের আশঙ্কা, এর ফলে চাহিদা আরও কমবে।
কর বৃদ্ধির ফলে গয়নার কারিগররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে অভিযোগ বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দারের। তিনি বলেন, “কারিগরেরা মাসিক বেতন পান না। তাঁদের মজুরি নির্ধারিত হয় তৈরি গয়নার ওজনের ভিত্তিতে। দাম বাড়ায় আরও কম ওজনের গয়না কেনার দিকেই ক্রেতারা ঝুঁকবেন। ফলে কারিগরদের আয় দ্রুত কমার আশঙ্কা। এ ছাড়া সোনা ধোলাইয়ে যে-কর বসানো হয়েছে, তার দায় কারিগরদের উপরও পড়বে। এর প্রতিবাদেও আমরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছি।” বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ীরাই বেশি সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা টগরবাবুর। তিনি বলেন, “ছোট শহর বা গ্রামে গয়নার চাহিদা তুলনায় কম। তার উপর এক লাফে দাম অতটা বাড়লে তাঁদের ব্যবসা চালানোই দায় হবে। রাজ্যে গয়না শিল্পে প্রায় ১ কোটি মানুষ জড়িত। বাজেট তাঁদের সকলের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি করেছে।”
নতুন করের হিসাব রাখার ঝক্কিও ব্যবসায়ীদের পোহাতে হবে বলে অভিযোগ ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসো-সিয়েশনের সহ-সম্পাদক অনিল আঢ্যের। তাঁর আশঙ্কা, “নতুন ব্যবস্থায় ইনস্পেক্টর রাজের হয়রানি পোহাতে হবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের।” |