সেতুর দাবিতে আমরণ অনশনে বাসিন্দারা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মাড়গ্রাম |
সেতুর দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করলেন রামপুরহাট ২ ব্লকের ১৮ জন গ্রামবাসী। তাঁদের দাবি, এর আগে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন-নিবেদন করলেও ওই সেতুর কাজ শুরু হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই তাঁরা অনশনে নেমেছেন। অনশনকারীদের হুমকি, সেতু নির্মাণের বিষয়ে উপযুক্ত নিশ্চয়তা না মেলা পর্যন্ত তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সেতুর অভাবে ওই এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় ভুগছেন। রামপুরহাট শহরে কলেজ বা মহকুমা হাসপাতালে যাতায়াত কিংবা রামপুরহাট স্টেশনে আসা যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাঁদের আজও বাঁশের একটি সামান্য সাঁকোর উপর নির্ভর করতে হয়। সেতুর অভাবে দুর্দশার মধ্যে বাস করছেন মাড়গ্রাম থানার জয়চন্দ্রপুর, বাবলাডাঙা, গোপালপুর, টিঠিডাঙা-সহ দুনিগ্রাম অঞ্চলের ৭টি গ্রাম। এ ছাড়া, সংলগ্ন নলহাটি থানার শীতলগ্রাম অঞ্চলের আরও ৮টি গ্রামের বাসিন্দা-সহ মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদেরও একই অবস্থা। সেতুর দবিতে তাই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এমন কী বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে ‘অসহযোগিতা’ করার মধ্যে দিয়ে তাঁরা তাঁদের প্রতিবাদও জানিয়েছেন। |
মঞ্চের পথে বাসিন্দারা। মাড়গ্রামে সোমবার ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম। |
অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে মাঝে মধ্যে এলাকায় গিয়ে মাপজোক হয়েছে মাত্র। কিন্তু রামপুরহাট ২ ব্লকের দুনিগ্রাম অঞ্চলের সেই ভাঙলা সেতু আজও নির্মাণ হয়নি।
সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে তাঁরা জানিয়েছিলেন, অবিলম্বে সেতু তৈরির কাজ শুরু না হলে আমরণ অনশন শুরু করবেন। সেই মতো মানবাধিকার কর্মীদের চিঠি দিয়ে সমস্ত বিষয় জানিয়ে আমরণ অনশন শুরু করলেন। সেতুর দাবিতে প্রশাসনকে জানিয়ে সোমবার থেকে এলাকার ১৮ জন বাসিন্দা মাড়গ্রামে রামপুরহাট ২ ব্লক প্রশাসনিক কার্যালয়ের মূল দ্বারে রামপুরহাট-বিষ্ণুপুর রাস্তার ধারে মঞ্চ খাটিয়ে ওই অনশন শুরু করেছেন।
অনশনে সামিল রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ বিনোদকুমার মণ্ডল, গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা অনুপম পাণ্ডে, হলধর মণ্ডল-রা বলেন, “প্রশাসনকে বেশ কিছু দিন আগে অনশনে বসার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের দিক থেকে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। যার জন্য এই অনশন।” তাঁদের হুমকি, “আমরা সেতু চাই। তাতে মরতে হয়, মরব।” এলাকাবাসীর ক্ষোভ, প্রশাসন ভাঙলা সেতু নির্মাণ না করে দুনিগ্রাম থেকে উলাপাড়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা নির্মাণ করছে। তাঁদের দাবি, সেতু নির্মাণ না হলে ওই রাস্তার তৈরির কোনও মানে হয় না। এ দিকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক প্রকল্প নির্মাণের জেলা মুখ্য নির্বাহী বাস্তুকার মাঞ্জিলাল মুর্মুর দাবি, “সরকারি যা নিয়ম কানুন আছে তাতে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ওই সেতু নির্মাণ করা যাবে না। অন্য কোনও উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে তা করতে হবে। সেই মতো প্রশাসন অবশ্য ব্যবস্থাও নিয়েছে। কিন্তু পুরোটাই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।” রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও সোমা সাউ বলেন, “সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর ন্যায্য বলে মনে করি। তবে সেতুটি তৈরির জন্য আরআইডিএফ (১৬) খাতে প্রথমে যে প্রকল্প ব্যয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল তাতে পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি ছিল। যে কারণে ওই প্রকল্প ব্যয়ের কাগজপত্র ফেরত চলে এসেছিল। পুনরায় ১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ব্যয় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।” এ দিকে মহকুমাশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “গতকালই আন্দালনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। ইতিমধ্যে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছে। শীঘ্রই অনুমতি পেয়ে কাজ শুরু হবে বলেও তাঁদের জানিয়েছিলাম। তার পরেও তাঁরা কেন অনশন শুরু করলেন বুঝতে পারছি না।” |