রাস্তা থেকে উধাও শেষ পিচের আস্তরণও। খানাখন্দে ভরা পথে যাতায়াত করতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বাসের যন্ত্রপাতি। দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও হয়েছে। দুর্ঘটনার পরে বাস ভাঙচুর, কর্মীদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েক বার। রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু দিন বাস বন্ধও রেখেছিলেন মালিকেরা। প্রশাসনের তরফে উপযুক্ত ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়া হলে বাস চলাচল শুরু হয়। কিন্তু তার পরেও রাস্তা সারানোর কোনও উদ্যোগ হয়নি বলে অভিযোগ আসানসোল-চিত্তরঞ্জন রুটে চলা বাস ও মিনিবাসের মালিকদের।
বাস ও মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, আসানসোল-চিত্তরঞ্জন রুটে তাদের প্রায় ৮০টি বাস যাতায়াত করে। কিছু বাস আসানসোল থেকে পুরনো জি টি রোড ধরে নিয়ামতপুর হয়ে আসা-যাওয়া করে। অন্য কিছু বাস জাতীয় সড়ক ধরে প্রায় সাত কিলোমিটার যাওয়ার পরে রূপনারায়ণপুর রোড দিয়ে চলাচল করে। আসানসোল থেকে জাতীয় সড়ক অতিক্রম করে পাঁচগাছিয়া হয়েও যাতায়াত করে কিছু বাস ও মিনিবাস রূপনারায়ণপুর হয়ে চিত্তরঞ্জন যায়। অন্য কিছু বাস আসানসোল থেকে পাঁচগাছিয়া হয়ে চলাচল করে। নিয়ামতপুরের চৌরঙ্গি মোড় থেকে রূপনারায়ণপুর ১৭ কিলোমিটার এবং পাঁচগাছিয়া মোড় থেকে রুনাকুরা ঘাট পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার রাস্তা বেহাল। অনেক জায়গাতেই বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বাসকর্মীদের দাবি, ওই সব গর্তে পড়ে চাকা ফাটা থেকে যন্ত্রপাতি ভেঙে যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটে প্রায়শয়ই। তার জেরে তাঁদের উপরে চড়াও হন ক্ষিপ্ত যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান বাসকর্মীরা। |
চিত্তরঞ্জনের বাস মালিক পিন্টু ছেত্রী জানান, নিয়মিত বাস সারাইয়ের খরচের জন্য লাভ বিশেষ হচ্ছিল না। সে কারণে বাধ্য হয়ে বাস বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। আসানসোলের বিকাশ চট্টোরাজ জানান, ওই রুটে তাঁর দু’টি বাস চলাচল করত। রাস্তার সমস্যার কারণে একটি বাস বন্ধ করে দিয়েছেন। পাঁচগাছিয়া-চিত্তরঞ্জন রুটে আগে মোট ৮টি বাস চলত। এখন মোটে ৩টি বাস রয়েছে। বাস ও মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ভাবে গত ছ’মাসে ১৭টি বাস রুট থেকে তুলে নিয়েছেন মালিকেরা।
আসানসোল মহকুমা বাস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে তুলসি মাহাতো ও মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, প্রায় ২১ মাস ধরে বেহাল ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মহকুমাশাসক থেকে জেলাশাসক পর্যন্ত নানা স্তরে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। কোনও ফল না হওয়ায় গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ধর্মঘট শুরু করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি মহকুমাশাসক আশ্বাস দেন, ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হবে। তা না হলে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের ধর্মঘটের শর্তে বাস চালানো শুরু করেন মালিকেরা। কিন্তু রাস্তা সংস্কার হয়নি। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বাস বন্ধ করা হয়নি বলে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে।
বাস মালিকদের দাবি, পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনা করে আপাতত রাস্তা সারানো হবে বলে মহকুমা প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুধু মাত্র সালানপুর পঞ্চায়েতে রাস্তার কয়েকটি খন্দে ছাই ফেলে ভরাটের চেষ্টা করা ছাড়া অন্য কাজ হয়নি। ছাই উঠে ফের গর্ত বেরিয়ে পড়েছে। এমন চলতে থাকলে আরও অনেকে বাস বন্ধ করে দিতে পারেন বলে জানান সুদীপবাবু। ২২ মার্চ থেকে ফের ধর্মঘটে নামার হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে আসানসোল ও চিত্তরঞ্জন থেকে দু’টি করে বাস চালানো হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
আসানসোলের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “পূর্ত দফতরের থেকে যে রিপোর্ট পেয়েছি, সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কেন হয়নি তা দেখছি।” |