নিয়মিত বেতন মিলছে না। ২০ বছর ধরে বেতন ধরে বেতনের পুনর্বিন্যাসও হয়নি। মেলে না বিভিন্ন ভাতা-সহ সুযোগ-সুবিধাও। এমনই অভিযোগ ‘আসানসোল মাইনস বোর্ড অব হেলথ’ (এএমবিএইচ)-র চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। সম্প্রতি এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছেন আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব রকম উদ্যোগই করবে রাজ্য সরকার।
কর্মীদের অভিযোগ, বর্তমানে শতাধিক বছরের পুরনো এই সংস্থাটির প্রায় ১৭০ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। ২০ বছর ধরে হয়নি বেতনের পুনর্বিন্যাসও। এছাড়া ভাতা ও অন্য সুযোগ-সুবিধাও পান না তাঁরা। তাঁদের দাবি, আশির দশক থেকেই দুরাবস্থার সূত্রপাত। তা আজও চলছে।
রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক জানিয়েছেন, ১৯১২ সালে মূলত আসানসোল, রানিগঞ্জ খনি এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা, এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা সচল রাখা এবং বাসিন্দাদের প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য এই সংস্থাটি গঠিত হয়। কয়লা খনি বেসরকারি মালিকানায় থাকার সময় খনি শ্রমিক ও তাদের পরিবার-সহ আশপাশের বস্তি এলাকায় এই সব পরিষেবা দেওয়ার জন্য বিনিময়ে খনি মালিকদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক অনুদান জমা করতে হত এএমবিএইচ-কে।
|
আসানসোল মাইনস বোর্ড অব হেলথ। নিজস্ব চিত্র। |
মলয়বাবু আরও জানান, বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার খনি অঞ্চলগুলিতে প্রতিষেধক দেওয়া থেকে নূন্যতম স্বাস্থ্য পরিষেবা ও নিকাশির কাজ করছে এএমবিএইচ। ১৯৭৩ সালে কয়লা খনি রাষ্ট্রীয়করণ হয়। এখন ইসিএল ও বিসিসিএল কর্তৃপক্ষ তাদের উৎপাদনের উপরে টন প্রতি ১ টাকা হারে ‘সেস’ দেন এএমবিএইচ-কে। মলয়বাবু বলেন, “সংস্থার আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, সেস বাবদ যা আয় হয় তা দিয়ে সংস্থার ব্যয়ভার চলে না। কর্মীদের বেতনও হচ্ছে না ঠিকমতো। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। কিছু পরিকল্পনাও হয়েছে।”
এএমবিএইচ-র এক আধিকারিক জানান, বর্তমানে সংস্থাটির বার্ষিক আয় প্রায় ২ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকারি মান অনুযায়ী বেতন, অন্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা দিতে এবং ওষুধ, প্রতিষেধক-সহ আনুষাঙ্গিক খরচ চালাতে বছরে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই অবস্থায় বেতন ও আনুষাঙ্গিক খরচে লাগাম দিতে হচ্ছে। আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন কর্মীরা।
সংস্থাটির দু’টি কর্মী সংগঠনের তরফে আইনমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, খনি সংস্থাগুলির ‘সেস’ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো হোক অথবা সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে সংস্থাটি অধিগ্রহণ করা হোক। তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত ‘ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’ এএমবিএইচ-র সম্পাদক প্রদীপ অধিকারী বলেন, “অর্থের অভাবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। সরকারকে অনুরোধ করেছি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।” সিপিএম সমর্থিত ‘এএমবিএইচ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-র সম্পাদক আশিস ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা দাবি জানিয়েছি, সংস্থাটি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করুক।”
আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক জানিয়েছেন, প্রস্তাবগুলি বিবেচনা করা দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ করবে রাজ্য সরকার। |