কখনও রাতে হাল্কা উত্তুরে বাতাস। কখনও হাওয়া বইছে দক্ষিণ থেকে।
উত্তুরে হাওয়া যখন থাকছে, তখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা নামছে। আবার দখিনা বাতাস এলে বেড়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রার এই ওঠা-নামার সঙ্গে তাল রাখাই দায়!
ভোরের দিকে গায়ে কখনও হাল্কা চাদর চড়াতে হচ্ছে। কখনও গায়ে ঢাকা রাখা যাচ্ছে না। রাতে যদিও বা একটু-আধটু হাওয়া বইছে (উত্তুরে বা দখিনা, যা-ই হোক) দিনের বেলা কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ছে চড়চড়িয়ে। অথচ দিনভর রোদে পুড়ে রাতে বাড়ি ফিরে স্নান করলেই মুশকিল। সঙ্গে সঙ্গে সর্দি-হাঁচি-কাশি, এমনকী জ্বর হওয়াও বিচিত্র নয়। পরিবেশে এই ‘অস্বাভাবিকতা’র সুযোগ নিয়ে বাতাসে দাপিয়ে ঘুরছে পরজীবীর দল। যাদের আক্রমণে দক্ষিণবঙ্গের ঘরে ঘরে এখন ভাইরাল জ্বর, গলাব্যথার হিড়িক।
পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী যেমন জানাচ্ছেন, গত দু’সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের রোগী বেড়ে গিয়েছে। ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি টাইফয়েডের রোগীও আসছে। অমিতাভবাবুর কথায়, “ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নানান উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসছেন। বিকোলাই-ও বাদ যাচ্ছে না।” যদিও ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গি এখনও তাঁর চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন অমিতাভবাবু।
|
ওঠা-নামা |
|
দিন |
সর্বোচ্চ* |
সর্বনিম্ন* |
ফেব্রুয়ারি |
২৬ |
৩৩.৫ |
২০.৭ |
২৭ |
৩২.৮ |
১৮.৭ |
২৮ |
৩৩.৭ |
৯.৪১ |
২৯ |
৩১.৭ |
২১.৪ |
|
মার্চ |
০১ |
৩৩.১ |
১৯.৪ |
০২ |
৩২.৩ |
২৩.৬ |
০৩ |
৩২.৬ |
২০.৯ |
০৪ |
৩২.৬ |
১৯.০ |
* তাপমাত্রা, ডিগ্রি সেলিসিয়াসে |
|
কান-নাক-গলার (ইএনটি) চিকিৎসক দেবাশিস সান্যাল বলছেন, “একটু গরম পড়তেই অনেকে ফ্যান চালাচ্ছেন, কিছু বাড়ি-অফিসে এসি-ও চালু হয়ে গিয়েছে। অথচ এখনও ঠান্ডা পুরোপুরি যায়নি। শরীর ফ্যান বা এসি’র সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। এই অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস খুব সহজে কাবু করে দিচ্ছে। ঘরে ঘরে তাই বেড়ে গিয়েছে গলাব্যথা, সর্দি-কাশি।”
এবং আবহাওয়া একটু স্থিতিশীল না-হওয়া পর্যন্ত এমন ঠান্ডা-গরমের পালা চলবে চলে জানিয়ে দিচ্ছেন ডাক্তারেরা। তাঁরা সতর্ক থাকতে বলছেন। যেমন দেবাশিসবাবুর পরামর্শ, ধুলো-ধোঁয়া-ঠান্ডা যতটা এড়ানো যায়, তত ভাল। ডাক্তারদের মতে, গলাব্যথা বা সর্দি-কাশি হলে ঘরে থেকে বিশ্রাম নেওয়াই শ্রেয়।
আবহবিদেরা বলছেন, এ সময়ে জোরে দখিনা বাতাস বওয়ার কথা। ছোটনাগপুরের পরিমণ্ডলে মাঝেমধ্যেই তৈরি হওয়ার কথা উচ্চচাপ-এলাকা। যার জেরে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়বে দক্ষিণবঙ্গে। সেই জলীয় বাষ্পই মেঘ তৈরি করবে। ঝাড়খণ্ডের উচ্চচাপ-এলাকা ঘনীভূত করবে মেঘপুঞ্জকে। তাতে থাকবে কালবৈশাখীর ভ্রূণ। কিন্তু এই সময়ে সারা দিন ধরে যে দখিনা বাতাস বয়ে যাওয়ার কথা, সেটা গেল কোথায়?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা: এ বার একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে শীত নাকাল করে দিয়েছে তামাম উত্তর ভারতকে। মার্চ মাস চলে এল, তবু তার বিরাম নেই! পাকিস্তান থেকে ফের একটা ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে ঢুকব-ঢুকব করছে। তার প্রভাবে কাশ্মীর-হিমাচল-উত্তরাখণ্ডে শুরু হয়েছে তুষারপাত, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের নানা জায়গায় বৃষ্টি নেমেছে। এতে ওখানে শীতের বিদায় বিলম্বিত হচ্ছে। যার জেরে মধ্য ভারতের বহু জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে, সেখানে দিনের তাপমাত্রাও তেমন বাড়তে পারছে না। অথচ স্বাভাবিক নিয়ম হল, এ সময়টায় ছোটনাগপুরের তেতে ওঠা পাথুরে জমি থেকে বিকীর্ণ তাপ উচ্চচাপ-এলাকা সৃষ্টি করবে। যার সুবাদে পূর্ব ভারতের এই তল্লাটে কালবৈশাখী তৈরি হবে। কিন্তু এ বার প্রকৃতি ‘নিয়ম’টা না-মানায় বসন্তের দখিনা বাতাস সে ভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা
কবে স্থিতিশীল হবে তাপমাত্রা?
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “আরও অন্তত পনেরো দিন লাগবে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে থাকবে। তবে ওঠা-নামা চলবেই।” গোকুলবাবুর আশা, সপ্তাহ দুয়েক পর থেকে তাপমাত্রা অনেকটাই বাড়বে। বাতাসে ঢুকতে শুরু করবে জলীয় বাষ্প।
কালবৈশাখীর অনুকূল পরিস্থিতি তখনই তৈরি হবে। |