বাড়ছে প্রকোপ, তবু প্রচারের আড়ালেই প্রস্টেট ক্যানসার
প্রতি বারো বছরে পাঁচ থেকে দশ শতাংশ হারে বাড়ছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে পুরুষেরা সব চেয়ে বেশি যে ক্যানসারে আক্রান্ত হয় সেই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই প্রস্টেট ক্যানসার। অথচ, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে এই ক্যানসার নির্ণয়ের পরিকাঠামো প্রায় অমিল। স্তন ক্যানসার বা জরায়ুমুখ ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কথা তবু কিছু মানুষ জানেন, ওই স্ক্রিনিং নিয়মিত করার ব্যাপারে সরকারি স্তরে বিচার-বিবেচনাও চলছে। কিন্তু প্রস্টেট ক্যানসারও যে প্রথম অবস্থায় ধরা পড়লে রোগী বহু দিন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন, সে সম্পর্কে কোনও সচেতনতাই নেই, নেই কোনও সরকারি উদ্যোগ। স্বাস্থ্য দফতরের ক্যানসার বিভাগের কর্তারাই হাত তুলে দিয়ে বলছেন, জেলা স্তরে প্রস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কোনও পরিকাঠামোই নেই। ফলে সচেতন মানুষ এগিয়ে এলেও স্ক্রিনিং করা মুশকিল হবে। এই পরিস্থিতে তাঁরা বলছেন, তার থেকে বরং প্রস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিং সম্পর্কে সরকারি স্তরে প্রচার না-করাই ভাল! স্বাস্থ্য দফতরের এই মনোভাবে বিস্মিত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও ইউরোলজিস্টদের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, এর জন্য আহামরি কোনও পরিকাঠামো দরকার পড়ে না। দক্ষ চিকিৎসকেরা রোগীর মলদ্বার দিয়ে আঙুল ঢুকিয়ে প্রস্টেট পরীক্ষা করে ক্যানসার হয়েছে কিনা বুঝতে পারেন। এইটুকু কেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক করবেন না? তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার যখন তামাকজাত পদার্থ বর্জন তথা মুখের ক্যানসার নিয়ে প্রচারে বছরে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা খরচ করছে, তখন তার কিছুটা অর্থ কেন প্রস্টেট ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ব্যয় হবে না?

কখন সচেতন হতে হবে
• বার বার প্রস্রাব
• প্রস্রাবের বেগ কমে গেলে
• প্রস্রাব করার পরেও ঠিকমতো হল না বলে মনে হলে
• প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত
• কোমরে ব্যথা
• প্রস্টেট আকারে বড় হয়ে গেলে
তার উত্তরে ক্যানসার বিভাগের কর্তাদের যুক্তি, সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীর চাপ সামলে আলাদা করে প্রস্টেট স্ক্রিনিং করার সময় চিকিৎসকদের পক্ষে বার করাই সমস্যা। ক্যানসার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমলাকান্ত পতি বলেন, “মুখের ক্যানসার এক বার দেখে নির্ণয় করা অনেক সহজ। কিন্তু প্রস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিং নিয়ে সচেতনতা অভিযান চালানোর পর মানুষ স্ক্রিনিং করাতে চাইলে পাঠাব কোথায়? জেলার হাসপাতালে কোথাও তো পরিকাঠামো নেই। চিকিৎসকেরও অভাব।” আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ‘নন কমিউনিকেবল ডিজিজ প্রোগ্রাম’ শুরু করেছে। তার মধ্যে ক্যানসারও পড়ছে। ওই প্রকল্পে যখন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের পরিকাঠামো তৈরি ও প্রচারের টাকা মিলবে, তখন এ ব্যাপারে ভাবা যাবে।” তবে সেটা কবে হবে তা অবশ্য কেউ জানেন না। কারণ প্রথম দফায় রাজ্যে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ দিনাজপুরে এই কাজ শুরু হওয়ার কথা, তার পর ধাপে-ধাপে অন্য জেলায়। অথচ প্রকল্প শুরুর ২ বছর পরেও ওই তিন জেলাতেই এখনও ক্যানসার স্ক্রিনিং চালু হয়নি।
চিকিৎসকেরা অবশ্য বারে বারে বলছেন, যে ভাবে প্রস্টেট ক্যানসার বাড়ছে, বিশেষ করে বয়স্ক পুরুষেরা যে হারে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাতে প্রত্যেক পুরুষের ৫০ বছর বয়সের পরে বছরে এক বার চিকিৎসকের কাছে প্রস্টেট পরীক্ষা করানো দরকার। ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষের কথায়, অনেক সময়ে প্রস্টেট ক্যানসার হলেও দীর্ঘদিন রোগীর শরীরে কোনও উপসর্গ থাকছে না। নিয়মিত চেক-আপ ছাড়া প্রথম অবস্থায় তা ধরা অসম্ভব। কিন্তু এইটুকু তথ্যও স্বাস্থ্য দফতরের কোনও প্রচারে থাকছে না। প্রস্টেট ক্যানসার অনেক সময়ে স্টেজ-১ থেকে এক লাফে স্টেজ-৪ এ পৌঁছে যায়। তাই সরকারি স্তরে এর স্ক্রিনিং নিয়ে প্রচার ও জনসচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
ট্রান্স রেক্টাল আল্ট্রাসাউন্ড ও ‘প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন’ (পিএসএ) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্টেট ক্যানসার বোঝা যায়। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপির প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, অনেক সরকারি হাসপাতালেই এই পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ফলে সাধারণ মানুষ স্ক্রিনিং করাতে চাইলেও পারবেন না। উল্টো দিক থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের ইউরোলজিস্ট অনুপ কুন্ডু জানালেন, তাঁদের হাসপাতালে ওই টেস্টের ব্যবস্থা থাকলেও সচেতনতার অভাবে খুব কম মানুষ নিজে থেকে সেখানে পরীক্ষা করাতে আসেন। তিনি আরও জানান, ‘ইউরোলজি সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’-র তরফে এক বার দিল্লিতে প্রস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গেও কয়েকটি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সংগঠনে গিয়ে ‘বেঙ্গল ইউরোলজি সোসাইটি’ প্রস্টেট স্ক্রিনিং শুরু করেছিল। কিন্তু সরকারি সহযোগিতার অভাবে কোনওটাই বেশি দিন চালানো যায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.