নিজস্ব সংবাদদাতা • ফালাকাটা |
গোষ্ঠী রাজনীতির জেরে দলের ব্লক সম্মেলনে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হল তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীকে। রবিবার ফালাকাটায় দলের ব্লক সম্মেলনে রাজ্য সহ সভাপতি জহর মজুমদার জেলা সভাপতির কাজকর্ম নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন তিনি। পাশাপাশি, ওই সম্মেলনে রেলের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য কমিটির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল জেলা জোয়াকিম বাক্সলাকে ‘অবাঞ্ছিত’ বলে মন্তব্য করেন দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি মৃদুল গোস্বামী। আলিপুরদুয়ারকে পৃথক সাংগঠনিক জেলা তৈরির দাবিও ওঠে সম্মেলনে। দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনা ব্লক স্তরের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে চলে আসায় এদিন বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয় মঞ্চে উপস্থিত জেলা নেতাদের। সম্মেলনে উপস্থিত জলপাইগুড়ির পর্যবেক্ষক তথা পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের বিধায়ক তথা জ্যোতির্ময় কর দলের অন্দরের এই ক্ষোভ বিক্ষোভের ঘটনা যাতে প্রকাশ্যে চলে না-যায় সেই ব্যাপারে কর্মী ও নেতাদের অনুরোধ করেন। বক্তব্য পেশের সময়ে রাজ্য সহ সভাপতি জহরবাবু এদিন জেলা সভাপতিকে দলে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন’ বলে মন্তব্য করেন। জেলা সভাপতি দলের ‘ব্লক নেতৃত্বের মতামতের তোয়াক্কা না-করে গ্রুপের পর গ্রুপ তৈরি করছেন’ বলে মন্তব্য করেন। এই জেলা সভাপতির কথা কেন মেনে চলা হবে সে বিষয়ে কর্মীদের সামনে প্রশ্ন তোলেন জহরবাবু। রাজ্য সহ সভাপতির ক্ষোভ সঙ্গত বলে মঞ্চে জানিয়ে দেন দলের জেলার কার্যকারী সভাপতি। বক্তব্য পেশের সময়ে তিনি বলেন, “জহরদা ঠিক কথা বলেছেন। নিজের মর্জিমতো দল চালাচ্ছেন জেলা সভাপতি। কিছু মানুষ দলে ঢুকে উপদল সৃষ্টি করছে। একদল চক্রান্ত করছে।”
তবে সাংবাদিকদের সামনে নতুন করে মুখ খুলতে চাননি জহর মজুমদার বা মৃদুল গোস্বামীরা। জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী অবশ্য বলেন, “ওঁর কথায় দল চলবে না। একমাত্র দল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় দল চলবে। জোয়াকিমবাবু শুধু বলেন, “দলের অন্দরে আলোচনা বা সমালোচনা হতেই পারে।”
নাম না-করে মূলত জোয়াকিমবাবুকে ইঙ্গিত করে মৃদুলবাবু বলেন, “এক শ্রেণির লোক দলে ঢুকে, দল নষ্ট করার চেষ্টা করছে। যে লোক আরএসপি থেকে বহিষ্কৃত তাঁকে সরকারি ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” তৃণমূলের কয়েকজন নেতা জানান, যে নেতারা ১৯৯৮ সালে দল সৃষ্টির পর থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংগঠন তৈরি করেছে তারা আজ দল নেত্রীদের কাছে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। লোকসভা নির্বাচনের পর দলে ঢুকে কৃষ্ণকুমার কল্যাণী জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সভাপতির পদ পাওয়ার পর দলের অন্দরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। পরে জোয়াকিম বাক্সলাকে তৃণমূলে এনে তাকে শ্রমিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি দল নেত্রীর নির্দেশে তাকে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসানোয় ক্ষোভ বাড়তে থাকে। রবিবার ফালাকাটায় সেই ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটল বলে মনে করছেন এই নেতারা। |