|
|
|
|
|
|
|
বিষয়: রং-বাহার |
আর তো ক’দিন পরেই ‘হোলি’। সবাই নিশ্চয়ই রঙ খেলার আনন্দে মেতে ওঠার জন্য প্রস্তুত হচ্ছ। তোমাদের এই উৎসবের মেজাজে দেখি আমি একটু রঙ চড়াতে পারি কি না। এর জন্য রঙের বিষয়ে আমি দশটা জিনিস বলব, যেগুলি তোমরা হয়তো জানো না। বা জানতেও পারো। দেখা যাক।
নীল আজুরো (Azzurro): হল নীলেরই এর ধরনের হালকা শেড। এটি ইতালির জাতীয় রং। ইতালির জাতীয় ফুটবল দলও এই রঙের জার্সি পরে মাঠে খেলতে নামে। ‘হাউস অব সেভয়’ (Savoy) নামের এক রাজ পরিবার ১৮৬১ সাল নাগাদ ইতালিকে একটি সংযুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। তাঁদের পারিবারিক ভৃত্যেরা এই রঙের উর্দি পরতেন। সেখান থেকেই এই রঙের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। রঙটির নাম ‘আজুরো সেভয়া’।
সবুজ: মুয়ম্মর গদ্দাফির আমলে লিবিয়ার জাতীয় পতাকা ছিল ঘন সবুজ রঙের। তাতে আর অন্য কোনও রং, অলঙ্করণ বা বৈশিষ্ট্য ছিল না।
লাল: দক্ষিণ আফ্রিকায় লাল হল শোক প্রকাশের রং। এই রঙকে মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
|
|
হলুদ: স্বার্থের জন্য অনেক সময়েই কিছু কিছু সাংবাদিক কোনও কোনও খবরকে যতটা না ঘটেছে তার থেকে বেশি রোমাঞ্চকর ভাবে পরিবেশন করে থাকেন। এই ধরনের সাংবাদিকতাকে বলে ‘ইয়েলো জার্নালিজম’ বা ‘হলুদ সাংবাদিকতা’।
কালো: কোনও পুরনো রণক্রীড়া বা মার্শাল আর্ট-এর ক্ষেত্রে যদি কোনও অনুশীলনকারী সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছয় তা হলে তাকে ব্ল্যাক বেল্ট দেওয়া হয়।
কমলা: এখনও পর্যন্ত মানুষ যত ভয়াবহ রাসায়নিক ব্যবহার করেছে, তার অন্যতম হল ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’। ভিয়েতনাম যুদ্ধে এই রাসায়নিক ব্যবহার করার সময় এটার এই কোড নাম দিয়েছিল মার্কিন সেনারা। ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ এতই বিষাক্ত ছিল যে যিনি এটি আবিষ্কার করেন তিনি সারা জীবন চেষ্টা করেছিলেন যাতে এটি কোনও ভাবেই ব্যবহার করা না হয়।
সাদা: পশ্চিমের দেশে বিয়ে করতে যাওয়ার সময় কনের সাদা পোশাক পরাটা একটা ঐতিহ্য। এখানে সাদা হল কুমারীত্বের প্রতীক।
গোলাপি: ‘রোসেযুস’ একটি লাতিন শব্দ যার অর্থ গোলাপি বা পিঙ্ক। রোমান কবি লুক্রেটিয়াস সূর্যোদয় বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করেন।
বাদামি: জাপানি ভাষায় বাদামি রং-কে বলে ‘চাইরো’ (Chairo)। এর মানে চায়ের রং। চায়ের পাতা ফুটিয়ে লাল চা বানালে এই রং পাওয়া যায়।
বেগুনি: এটা হল বিলাসিতার রং। সেই কারণেই ঐতিহ্য অনুসারে ব্রিটেনে চকলেটকে বেগুনি রঙের বাক্সে প্যাক করা হয়।
হ্যাপি হোলি। |
|
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণণের মতে, ভারতীয় পতাকার গেরুয়া রঙটি নিঃস্বার্থ
আত্মত্যাগের প্রতীক। মাঝের সাদাটি হল আলো, যেটা আমাদের চরিত্রকে সত্যের পথে
পরিচালনা করবে। এবং সবুজ হল দেশের মাটি ও তার ওপর থাকা উদ্ভিদ জগতের সঙ্গে
আমাদের সম্পর্কের প্রতীক। এর ওপর নির্ভর করেই সব জীবকুল বেঁচে থাকে। |
|
|
জানো কি |
• আমাদের চোখের রেটিনায় ‘কোন সেল’ বা শঙ্কু আকৃতির কোষ থাকে, যার সাহায্যে মানুষ রং দেখতে, উপলব্ধি করতে এবং বিভিন্ন রঙের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। অনুভূতিপ্রবণতার দিক থেকে এই কোষগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যখন এই কোষে কোনও ছবি ধরা পড়ে, তখন সে মস্তিকের সংশ্লিষ্ট অংশে এই ছবি প্রেরণ করে দেয় বোঝার জন্য। আর তখনই আমরা বিভিন্ন ধরনের রঙ উপলব্ধি করতে পারি।
• কী ভাবে আমরা রং দেখি বা উপলব্ধি করি, সেই বিষয়ে আমরা জানলাম। সেই সঙ্গে এটা শুনলে অনেকেই হয়তো অবাক হবে যে সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে বর্ণান্ধতা বেশি হয়। কারণ এই সমস্যার যোগ রয়েছে সেই জিন-এর সঙ্গে, যাকে ‘এক্স’ ক্রোমোজম বহন করে। আর ছেলেদের মধ্যে মাত্র একটাই এক্স ক্রোমোজম থাকে (যেখানে মেয়েদের থাকে দুটো ‘এক্স’ ক্রোমোজম)। এ ছাড়া চোখ, চোখের স্নায়ু ইত্যাদি যদি বাইরে থেকে আঘাত পায় অথবা রাসায়নিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলেও কোনও কোনও প্রকারের বর্ণান্ধতা দেখা দিতে পারে।
• টমাস ইয়াং এবং হারম্যান ভন হেল্মহোল্টস-এর তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের চোখের রেটিনায় যে হেতু তিনটি ভিন্ন ধরনের কোন সেল রয়েছে, তাই প্রত্যেকটি ধরনের কোন সেল কোনও একটা প্রাথমিক রঙের প্রতি অনুভূতিপ্রবণ। সাধারণত প্রাথমিক রং হিসেবে ধরা হয় তিনটি রং লাল, নীল এবং সবুজ। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা পরিক্ষানিরীক্ষা করে প্রমাণ করেছিলেন যে এই তিনটি ‘প্রাথমিক রং’-এর তত্ত্ব ভুল। তবে এক জন চিত্রকর অথবা প্রিন্টারের ক্ষেত্রে এই ‘প্রাথমিক রং’-এর তত্ত্বই একটু অন্য ভাবে উঠে এসেছে। যে হেতু এই ধরনের রং অন্যান্য রঙের থেকে আলো শুষে নেয়, তাই এখানে পিগমেন্ট রং-কেই প্রাথমিক রং হিসেবে ধরা। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে এই প্রাথমিক রংগুলিকে বিভিন্ন ভাবে মিশিয়ে যে কোনও রং পাওয়া যাবে। আর যদি তিনটি প্রাথমিক রংকেই এক সঙ্গে একই অনুপাতে মেশানো হয়, তা হলে ফল যা পাওয়া যাবে, তা হল কালো অথবা কালোরই কাছাকাছি
কোনও রং।
• সপ্তদশ শতকে আইজ্যাক নিউটন অপ্টিক্যাল স্পেকট্রাম-এর ওপর তাঁর কাজ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন অপটিক্স। পরে অষ্টাদশ শতকে জোহান উলফ্গ্যাং ভন গোয়েটে রঙের স্বভাব নিয়ে লেখা ‘থিয়োরি অব কালার্স’-এ অপ্টিকাল স্পেকট্রা সম্পর্কে লিখেছিলেন। নিউটনই আবিষ্কার করেন যে কোনও সাদা আলো প্রিজম-এর মধ্যে দিয়ে গেলে সাত রঙে ভেঙে যায় এবং এই সাতটি রঙ প্রিজমের মধ্যে দিয়ে গেলেই সাদা রঙে পরিণত হয়। কিন্তু তাঁর আবিষ্কারের প্রায় চার শতক আগে রজার বেকন দেখিয়েছিলেন যে কাচের জলের গ্লাস থেকেও আলোর বর্ণালি তৈরি হতে পারে। নিউটন তাঁর অপটিক্স-এর পরীক্ষানিরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম ‘স্পেকট্রাম’ শব্দটি ব্যবহার করলেও আমাদের হিন্দু পুরাণের বৈদিক গ্রন্থেই সম্ভবত এর প্রথম লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়। শাম্বপুরাণ-এ সূর্যের একটি স্তোত্রে বলা হয়েছে, সূর্য দেবতা যে রথে চড়েন সেটির সাতটি ঘোড়া রয়েছে। সূর্যের কারণেই যে রামধনু তৈরি হয়, এই তথ্যটি যে তাঁরা জানতেন, এর থেকেই সেটি বোঝা যায়।
• প্রথম ভারতীয় নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী, সি ভি রমনও আলোর বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তাঁর নোবেল কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ মানপত্রেও লেখা ছিল যে পুরস্কারটি দেওয়া হয়েছে আলো বিকিরণের ওপর তাঁর গবেষণা এবং তাঁরই নামে নামকরণ করা এই কার্যকারণ সূত্রের আবিষ্কারের জন্য।
• রং নিয়ে খেলা হোলি উৎসবের বহু দিনের ঐতিহ্য। আগেকার দিনে এই সব রং মুখ্যত তৈরি হত বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তু থেকে। যেমন, পলাশ ফুল, নিম, হলুদ ইত্যাদি। কিন্তু এখন এই সব রং তৈরি হয় নানা রাসায়নিক ডাই থেকে যা মানুষের চামড়ার পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।
• উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে রঙিন ফোটোগ্রাফ তৈরি করার ব্যাপারে নানান পরীক্ষানিরীক্ষা চালু হয়েছিল এবং ১৮৭০ সালের শেষের দিকে গবেষকরা খুব সাফল্যের সঙ্গে এই রঙিন ফোটোগ্রাফ তৈরি করতে সক্ষম হন। ১৯১১ সালের কাছাকাছি সের্গেই মিখাইলোভিচ প্রকুদিন গরস্কি নতুন পদ্ধতিতে রঙিন ছবি তোলার চেষ্টা করেন। রীতিমত ভাল ছবি তুলে বিশেষ নামও করেছিলেন তিনি। ১৯৩৫ সালের মধ্যে রঙিন ফোটোগ্রাফি রসায়ন গবেষণাগার ছেড়ে আরও উন্নত পদ্ধতিতে তৈরি হতে থাকে। এমন সময়েই প্রথম রঙিন চলচ্চিত্রও তৈরি হতে শুরু করে। উনিশশো চল্লিশের দশকে রঙিন ছবি কাগজেও ছাপা শুরু হয়।
• এখনকার দিনে তুমি যদি রঙের দোকানে যাও তা হলে দেখবে তোমার পছন্দের রং বাছতে দোকানি তোমাকে একটি কালার চার্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন। সমগ্র বিশ্বে কাপড়, প্রিন্টিং, প্লাস্টিক-এর মতো বেশ কিছু শিল্পক্ষেত্রে এখন রঙ মেলাবার জন্য এমন কালার চার্ট বা গাইড ব্যবহার করা হয়। একটা রঙের সঙ্গে অন্য রঙ মিলিয়ে যদি কোনও নতুন রঙ তৈরি হয় তা হলে তারও একটা নির্দিষ্ট মান থাকে। এই রঙ তৈরি করার বিশেষ পদ্ধতি থাকে। এমনই একটি পদ্ধতি হল ‘প্যান্টোন ম্যাচিং সিস্টেম’। তিন হাজারেরও বেশি রং রেজিস্টার করা রয়েছে এই সিস্টেম-এ। এবং প্রত্যেকটির একটি নির্দিষ্ট নম্বরও দেওয়া আছে। এ ছাড়া প্রতি বছর প্যান্টোন একটি নির্দিষ্ট রঙকে ‘কালার অব দি ইয়ার’-এর খেতাব দেয়। ২০১২-র জন্য ট্যাঞ্জারিন ট্যাঙ্গো-কে ‘কালার অব দি ইয়ার’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। |
|
বলো তো |
১ ৭০০ খ্রিস্টাব্দে একটি রঙের নাম ইংরেজিতে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রংকে নিরপেক্ষ রংও বলা হত। কোন রং?
২ মানুষের গায়ের রঙ কোন রঞ্জকের (Pigment) ফলে হয়?
৩ ‘তুমি এটা যে কোনও রঙে পেতে পারো, যতক্ষণ সে রংটা হয় কালো’ কীসের সম্পর্কে কে এই কথাটি বলেন?
৪ ১৯৩৭ সালের কোন হিন্দি ছবি ছিল ভারতের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র?
৫ ফিশার-স্যালার স্কেল দিয়ে কিসের বিভিন্ন মাত্রা মাপা হয়?
৬ জন টিনডাল এবং লর্ড রেলে, দুজনে কোন রঙের রহস্য সমাধান করার জন্য কাজ করেন? |
|
উত্তর |
১) ধূসর (গ্রে), ২) মেলানিন,
৩) ফোর্ড মডেল টি গাড়ি সম্পর্কে হেনরি ফোর্ড
৪) কিসান কন্যা, ৫) চুলের রং, ৬) আকাশের নীল রং। |
|
|
|
|
|
|