|
|
|
|
|
|
|
ভাবো, কী করতে সবচেয়ে ভাল লাগে |
জীবনে কী হতে চাও, কী করতে সত্যিই তোমার ভেতর থেকে ভাল লাগে এই সব
প্রশ্নের উত্তর জানতে নিজের সঙ্গে বেশ খানিকটা সময় কাটানো প্রয়োজন। উচ্চ মাধ্যমিক
পরীক্ষার পরের ছুটিটা এর জন্য একেবারে উপযুক্ত। পরামর্শ দিচ্ছেন সেমন্তী ঘোষ |
|
আমি এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। চেষ্টা করছি ভাল করে তৈরি হতে। আর, কেবলই ভাবছি, পরীক্ষার পরের ছুটিটা খুব এনজয় করব। একটু নিজের মতো ঘোরাফেরা, সিনেমা দেখা, আড্ডা দেওয়া, প্রচুর গল্পের বই জমে আছে, সেগুলো পড়ে ফেলা, এই সব। কিন্তু বাবার তাতে আপত্তি। তিনি চান, আমি ওই সময়টাতে কোনও একটা কোর্স করে নিই, যাতে পরে কেরিয়ারের সুবিধে হয়। এমনিতে আমি হিউম্যানিটিজ-এর ছাত্র, তাই জয়েন্ট এন্ট্রান্স ইত্যাদির ঝামেলা নেই, ঠিক করেছি ইতিহাস নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করব। কিন্তু বাবা মনে করেন, দু’তিন মাস সময় এমনি এমনি নষ্ট করা উচিত নয়। সত্যিই কি আমি ভুল ভাবছি? ওই সময়টা নষ্ট করলে আমার ভবিষ্যতে ক্ষতি হবে কি? ঠিক বুঝতে পারছি না। যদি একটু সাহায্য করেন।
অর্ক রায়, কলকাতা-৯ |
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
|
তোমাকে বলছি |
মুশকিল কী জানো, কোনটাকে সময় নষ্ট করা বলে আর কোনটাকে বলে না, তা নিয়ে নানা মতপার্থক্য থাকতে পারে। ‘প্রস্তুতি’ যে ভাবে ভাবে, যে ভাবে তোমাদের ভাবাতে চায়, সেটা হয়তো তোমার বাবার ভাবনার ধরনের সঙ্গে মিলবে না, আবার তোমার ভাবনার সঙ্গেও পুরোপুরি না মিলতেই পারে। সেই আশঙ্কা নিয়েই উত্তরটা দিচ্ছি।
দেখো, তুমি ভাবছ পরীক্ষার পরের ছুটিটা ‘এনজয়’ করব। বাবা ভাবছেন পরীক্ষার পরের সময়টা যেন ‘নষ্ট’ না হয়। অর্থাৎ তুমি যে ভাবে এনজয় করতে চাইছ, সেটা তোমার বাবার কাছে সময় নষ্টেরই সমান। আর বাবা যে ভাবে সময় কাজে লাগানোর কথা ভাবছেন, সেটা তোমার কাছে এনজয়মেন্ট-এর ঠিক বিপরীত। আচ্ছা, এর মাঝামাঝি আর একটা ঘটনাও তো ঘটতে পারে? ধরো, তুমি এমন কিছু করলে, যেটা করতে তুমি এনজয়-ও করলে, আবার সময় নষ্টও হল না, অর্থাৎ এখন যা করলে, ভবিষ্যতে তোমার সেটা যথেষ্ট কাজে লাগল?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কী। আসল প্রশ্ন কিন্তু সেটাই। আঠারো বছরের কাছাকাছি পৌঁছলে, কিন্তু তুমি কি এখনও জানো, কী করতে তোমার সবচেয়ে ভাল লাগে, কী করলে তোমার ‘এনজয়মেন্ট’-টা সম্পূর্ণ হয়, আবার নতুন কিছু শেখার আনন্দটাও পাও? পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, নিজের মতো ঘোরাফেরা, সিনেমা দেখা, এ সব তো করবেই, কিন্তু সেগুলো করতে করতেই ছুটির সময়টা জুড়ে একটা কথা ভাবতে পারো, কেননা এমন নির্ঝঞ্ঝাট নিশ্চিন্ত সময় তুমি সামনের অনেকগুলো বছর আর পাবে না। ভাবো, কী করতে তোমার ভাল লাগে, জীবনে ঠিক কী ধরনের কাজ করতে পারলে তোমার মনে হবে এ জীবনটা বেশ ভাল কাটল। ছবি তুলতে ভাল লাগে? সিনেমা দেখতে ভাল লাগে? সিনেমা বানাতে ইচ্ছে করে? ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে? গান গাইতে ইচ্ছে করে? নাকি শুধুই ঘুরে বেড়াতে মন চায়? কোনওটাতেই অসুবিধে নেই, জানো তো, কেবল ঘুরে বেড়ানো দিয়েও একটা পেশা তৈরি করা যায়। নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে, তার উপর লেখালেখি করে, কিংবা সেখানকার ছবি তুলে ট্র্যাভ্ল জার্নালিস্ট হওয়া যায়। এই পৃথিবীতে আজ অনেক কিছুই সম্ভব। দরকার কেবল নিজের ভেতরের সত্যিকারের চাওয়া-টাকে ‘আবিষ্কার’ করা। এক বার সেই আবিষ্কারটা করতে পারলেই দেখবে, বাকি কাজটা তুলনায় সহজ ঠেকছে।
একটা কথা। যেটা করতে চাও, ঘটনাচক্রে সেটাকেই হয়তো ‘পেশা’ করে তুলতে পারলে না। হয়তো বেড়াতে ভালবাসা সত্ত্বেও ট্র্যাভ্ল জার্নালিস্ট না হয়ে তোমাকে স্কুলে শিক্ষকতাই করতে হল, সরকারি চাকরির পরীক্ষাতেই বসতে হল। তাতেই কিন্তু জীবন বৃথা হয়ে যায় না। তুমি যদি সত্যিই নিজের ভেতরের ‘কলিং’টাকে জেনে ফেলো, এবং হাল না ছাড়ো, তা হলে কোনও না কোনও ভাবে সেই পথটা ধরতে পারবেই। পেশা-র পাশাপাশি অন্য কাজও তো করা যায়, তাকেই তো নেশা বলে। তোমার ভেতরকার সেই আবিষ্কারটাকে না-হয় পরবর্তী জীবনের নেশা করে তোলো। কত ইন্টারেস্টিং একটা জীবন হবে ভাবো।
বই পড়ার কথা বলেছ বলে ভরসা করে একটা কথা বলছি। ইতিহাস বা অন্য যে বিষয়ই পড়ো-না কেন, আরও পাঁচটা বিষয়ে নিশ্চয়ই তোমার জানার, পড়ার আগ্রহ আছে। এই ফাঁকা সময়ে সেই সব বিষয় নিয়ে একটু নাড়াচাড়া শুরু করতেই পারো। কম্পিউটার কোর্স-এর মতো কেজো জিনিস না হলেও একে কিন্তু সময় নষ্টও বলা যাবে না। কত কিছু আমরা ভাবি, চাই, মনে করি করব, কিন্তু সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারি না। এই সময়টা একেবারে আদর্শ সেই ধরনের কিছু জমে-থাকা, পড়ে-থাকা কাজ করে ফেলার জন্য, না-হওয়া ইচ্ছেগুলো পুরিয়ে নেওয়ার জন্য। দেখবে, পরে যখন ফিরে তাকাবে এই ছুটিটার দিকে, মনে হবে কত দরকারি কাজ করা গিয়েছিল এইটুকু সময়ে! |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|