সুন্দরবনের মানুষের কাছে আইনি সহায়তা পৌঁছে দিতে তৈরি করা হয়েছিল মহকুমা আদালত। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তৈরি করা হয়নি পূর্ণাঙ্গ আদালত। এর ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আদালতে আসা সুন্দরবনের বিচারপ্রার্থীদের।
১৯৯১ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল, ক্যানিংয়ে তৈরি করা হবে এসিজেএম (জুডিশিয়াল) কোর্ট। তার পর দীর্ঘদিন কেটে গেছে। আজও তৈরি হয়নি ক্যানিং মহকুমার জুডিশিয়াল কোর্ট। তৈরি হয়নি কোর্টের জন্য নির্দিষ্ট কোনও ভবন। বিভিন্ন সময়ে আদালতের জন্য বেশ কয়েকটি ভবন ভাড়ার জন্য দেখাও হয়। আদালতের কাজ শুরু করার জন্য যে-পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন, তা না পাওয়ায় নির্দিষ্ট ভাবে তা পূর্ণাঙ্গ আদালতের রূপ পায়নি।
অথচ প্রতিদিন ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, জীবনতলা-সহ সুন্দরবনের বহু এলাকার মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ভিড় করে আসেন এখানে। কিন্তু আদালতের সব রকম আইনি পরিষেবা এখানে না পাওয়ার ফলে তাঁদের যেতে হয় আলিপুরে। এর ফলে মানুষের সময় ও অর্থ দুই-ই নষ্ট হয়। বিচারপ্রার্থী বাসন্তীর কলহাজরার বাসিন্দা আতিয়ার মান্না বলেন, “ক্যানিংয়ে এসিজেএম কোর্ট চালু হলে আমাদের কষ্ট করে কলকাতায় আলিপুরে ছুটতে না। মামলার ব্যাপারে প্রায়ই আমাকে আলিপুরে ছুটতে হয়। এ জন্য অনেক সময় মামলার আগের দিন ক্যানিংয়ে রাত কাটিয়ে, ভোরের ট্রেনে কলকাতায় ছুটতে হয়। এ জন্য অর্থ ও সময় দুই-ই নষ্ট হয়।” আর এক বিচারপ্রার্থী জীবনতলার জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, “শুনেছিলাম, ক্যানিংয়ে পূর্ণাঙ্গ আদালত চালু হবে। কিন্তু আজও তা চালু না হওয়ায় আমাদের যে কোনও আইনি সমস্যায় আলিপুরে ছুটতে হয়। ক্যানিংয়ে আদালতের কাজ পুরোপুরি শুরু হলে আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হত না।” আইনজীবী তিতাস মণ্ডল বলেন, “ক্যানিং মহকুমা আদালতে সুবিচারের জন্য আসা মানুষদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ পুরোপুরি না হওয়ায় প্রচুর খরচ করে আলিপুরে ছুটতে হয়। আমরা চাই, ক্যানিংকে একটি পূর্ণাঙ্গ জুডিশিয়াল কোর্টের মর্যাদা দিয়ে অবিলম্বে কাজ শুরু করা হোক।” তিনি আরও বলেন, “এখানে শুধু এক্সিকিউটিভ কোর্ট বসা ছাড়া আর কোনও কাজ হয় না। ফলে কেবল মাত্র ১৪৪, ১০৭, ১০৯ ধারার কেসের কাজই হয় এখানে।” এই অবস্থায় একজন সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট-সহ দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন পেশকার ও তাঁর দু’জন সহকারী নিয়ে চলছে ক্যানিংয়ে এক্সিকিউটিভ কোর্ট। নেই কোনও সরকারি উকিল ও পাবলিক প্রসিকিউটার।
সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট শেখর সেন বলেন, “জমির সমস্যার কারণে আদালতের ভবন তৈরি করা যায়নি। তবে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। পেলেই দ্রুত ভবনের কাজ শুরু করা যাবে।” সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “আদালতের কাজকর্মের পরিধি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভবন তৈরির টাকা রয়েছে। কিন্তু জমি না থাকার জন্য ভবন তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি। জমি খোঁজার কাজ চলছে। জমি পেলেই তা ক্যানিং জুডিশিয়াল কোর্টের নামে নথিবদ্ধ করে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।” |