বহরমপুর লাগোয়া মানকরার একটি মিলে শনিবার রাতে হানা দিয়ে পুলিশ ৬৫৪ কুইন্টাল গম বাজেয়াপ্ত করেছে। তার আগে ভাবতা রেলগেটের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর থেকে একটি লরি আটক করে বেলডাঙা থানার পুলিশ। লরির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে মানকরার ওই মিলে অভিযান চালায় পুলিশ। লরির চালক ও খালাসিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম মনিরুল মণ্ডল। বাড়ি নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার ভুঁইঞা হিন্দুপাড়ায়। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মানকরার ওই মিলের খোঁজ পায় পুলিশ। এর পরে ওই মিলে হানা দিয়ে ৬৫৪ কুইন্ট্যাল গম বাজেয়াপ্ত করা হয়।”
ওই মিলে গিয়েছিলেন বহরমপুরের মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাসও। অধীরবাবু বলেন, “বিপিএল তালিকা ভুক্ত পরিবারের সদস্যদের গমের বদলে ফর্টিফায়েড বা ভিটামিন যুক্ত আটা সরবরাহ করা হয় এই জেলায়। এফসিআই গুদাম থেকে জেলা খাদ্য দফতর ওই গম কিনে মানকরার ওই মিলে আটা তৈরির জন্য পাঠায়। সেখান থেকে ডিস্ট্রিবিউটারের মাধ্যমে রেশন ডিলারের ঘরে আটা পৌঁছয়। কোনও ভাবে ওই মিল থেকে গম বোঝাই বস্তা বাইরে বের হওয়ার কথা নয়।” এসডিও-র কথায়, “তদন্তে দেখা গিয়েছে, যে পরিমাণ গম ওই মিলে মজুত থাকার কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ গম রয়েছে। তার ব্যাখ্যা অবশ্য মিল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। এছাড়াও মিলের রেজিস্ট্রার খাতায় বেশ কিছু অসঙ্গতিও চোখে পড়েছে।”
ওই মিলের দুই মালিকই পলাতক। তাঁদের বাড়ি বহরমপুরের খাগড়া এলাকার ঠাকুরপাড়া ও ভট্টাচার্যপাড়ায়। পুলিশ সুপার বলেন, “মিল মালিকদের খোঁজে পুলিশের তল্লাশি চলছে।”
মুর্শিদাবাদ জেলায় ২০০৮ সাল থেকে গমের বদলে বিপিএল তালিকা ভুক্ত পরিবারের সদস্যদের ভিটামিন যুক্ত আটা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পরিবার পিছু ৫ জন সদস্যের জন্য ৭৫০ গ্রাম করে তিন কিলো ৭৫০ গ্রাম আটা দেওয়া হয় প্রতি সপ্তাহে। রেশন দোকানে ৭৫০ গ্রাম আটার প্যাকেটের দাম পড়ে ৫ টাকা। এই অবস্থায় বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের জন্য বরাদ্দ গম পাচারের ঘটনায় জেলা খাদ্য দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খাদ্য নিয়ামক দফতরের জেলা আধিকারিক সমীর দেব বলেন, “গোটা ঘটনাটি বিস্তারিত জানিয়ে দফতরের বহরমপুর মহকুমা পরিদর্শককে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই মিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা থেকে লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে।”
এফসিআই-এর কাছ থেকে জেলা খাদ্য দফতর কুইন্ট্যালপিছু ৪২৫ টাকা দরে গম কিনে থাকে। ১ কুইন্ট্যাল গম থেকে ৯৫ কিলো আটা পাওয়া যায়। মানকরার ওই মিল কর্তৃপক্ষ মুর্শিদাবাদ জেলায় ওই আটা তৈরির কাজ করে থাকে। ওই আটা রেশন ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আবার রয়েছে হোলসেল কনজিউমার্স ও সাগরদিঘি কো-অপারেটিভ নামে ২টি সরকারি এবং ২৭টি বেসরকারি-সহ মোট ২৯টি ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থা। ওয়েস্টবেঙ্গল এমআর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের মুর্শিদাবাদ শাখার সম্পাদক কৃষ্ণচন্দ্র দাস বলেন, “এই মুহূর্তে জেলায় রেশন ডিলারের সংখ্যা ১৩৭০ জন। ২৯টি ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থা ওই আটা জেলার বিভিন্ন রেশন ডিলারদের ঘরে পৌঁছে দেয়। প্রতি কুইন্ট্যাল ৬২১ টাকা ৬৬ পয়সা দরে তা আমাদের কিনতে হচ্ছে। প্যাকেট প্রতি ৭৫০ গ্রাম আটা ৫ টাকায় গ্রাহকদের আমরা বিক্রি করি। তবে গুণগত মান ভাল নয় বলে গ্রাহক অনেক সময়ে ওই আটা নিতে রাজি হন না।” |