হাসিনা বিবি নামে এক মহিলাকে খুনে প্রধান অভিযুক্ত আমিনুল শেখকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গত ১৩ জানুয়ারি নওদা থানার রঘুনাথপুরের হাসিনাকে খুন করা হয়। তার প্রায় ৫০ দিন পরে কলকাতার বরানগর থানা এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে আমিনুলকে গ্রেফতার করা হল। শুক্রবার বহরমপুরের সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বাড়ি থেকে ১ কিমি দূরে জগাইপুর ঘাটে জলঙ্গি নদীর পাড় থেকে ওই তরুণীর কাটা মুণ্ডু উদ্ধার হয়। তার দেহ জলঙ্গি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে পুলিশ ওই দেহ উদ্ধার করে।” ঘটনার পর থেকেই পেশায় ট্রাক্টর চালক আমিনুল পলাতক ছিল। পুলিশ সুপার বলেন, “ঘটনার পর থেকেই বেলঘরিয়া, ব্যারাকপুর, বরানগর এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিল ওই যুবক। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ওই যুবককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।” |
এর আগে ওই তরুণীর মা মাজেরা বিবি খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। পুলিশ সুপার বলেন, “ওই তরুণীর মা আমার সঙ্গে দেখা করার পরেই আমি নওদা থানায় যাই। সেখানে ডেপুটি পুলিশ সুপার (ক্রাইম), বহরমপুরের সার্কেল ইন্সপেক্টর এবং নওদা থানার ওসি সম্রাট ফণীর সঙ্গে ওই খুনের ঘটনার সম্ভাব্য দিকগুলো আলোচনা করি। সেই মতো তদন্তের রূপরেখা ঠিক করা হয়। এর পরেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে আমিনুল। যদিও তার দু’জন সহযোগী এখনও ফেরার। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”
ওই তরুণীকে যে অস্ত্রের সাহায্যে খুন করা হয়, পুলিশ তাও উদ্ধার করেছে। এদিন বহরমপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মূল অভিযুক্ত আমিনুল এবং ওই তরুণীর মা মাজেরা বিবিকে হাজির করানো হয়। সেই সময়ে ওই অস্ত্র দেখতে পেয়ে মাজেরা বিবি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর পরেই পুলিশ সুপারের হাত জড়িয়ে ধরে মাজেরা বিবি বলেন, “মেয়ের খুনিকে গ্রেফতার করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন, আপনি তা করে দেখিয়েছেন। এখন আপনি এমন কিছু ব্যবস্থা করুন, যাতে মেয়ের খুনির ফাঁসি হয়। তবেই আমি শান্তি পাব।” পুলিশ সুপার অবশ্য মাজেরা বিবিকে আশ্বস্ত করেন। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসিনা বিবির দু’বার বিয়ে হয়েছে। ভগবানগোলা-২ ব্লকের এক যুবকের সঙ্গে প্রথম বার বিয়ে হয়। পরে ডিভোর্সও হয়ে যায়। প্রথম পক্ষের চার বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। এর পরে ২০১০ সালে দ্বিতীয় বার কাশ্মীরের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস পরে অক্টোবর নাগাদ নওদার বাড়িতে আসার পরে প্রতিবেশী আমিনুলের সঙ্গে তাঁর প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়। এদিকে আমিনুলও বিবাহিত এবং তাঁর ৬ মাসের শিশুসন্তান রয়েছে। এই অবস্থায় ওই তরুণী বিয়ের জন্য আমিনুলের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত ঘটনার দিন ওই মহিলাকে ডেকে পাঠায় আমিনুল। সেই সময়ে আরও দু’জন সঙ্গী ছিল। অভিযোগ, তার পরেই ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে ওই মহিলাকে খুন করা হয়। |