দেশ জুড়ে তাঁকে খেলানোর দাবি, তার মধ্যে টানা প্রায় দেড় মাস একটা ম্যাচও না খেলে বসে থাকা। হতাশা কতটা গ্রাস করেছিল? এরই মধ্যে কী ভাবে শনিবার রাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে কলকাতা ফিরেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলার হয়ে বিজয় হাজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য? আজ সোমবার দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন। তার আগে রবিবার দুপুরে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মনোজ তিওয়ারি অস্ট্রেলিয়া সফরের অভিজ্ঞতা খোলসা করে দিলেন।
প্রশ্ন: ওয়ান ডে সিরিজের শেষ দিকে দেশ জুড়ে আপনাকে না খেলানো নিয়ে লেখালেখি হচ্ছিল। সুনীল গাওস্কর লিখেছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন। কিন্তু আটটা ম্যাচের একটাতেও খেললেন না। শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি থাকা সত্ত্বেও। হতাশ লাগত না?
মনোজ: কোনও ক্রিকেটারেরই মাঠের বাইরে বসে থাকতে ভাল লাগে না। আমারও লাগত না। সময় সময় বেশ হতাশ লাগত। অপেক্ষা করতাম, পরের ম্যাচে হয়তো সুযোগ আসবে। আমার কেরিয়ারে কখনও টিমে থেকে এত লম্বা সময় বসে থাকিনি। কাজেই খারাপ তো একটু লাগতই।
প্র: এই খারাপ লাগাটা সামলাতেন কী করে? টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ আপনার সঙ্গে কথা বলেনি?
মনোজ: খারাপ লাগা সামলে নেওয়ার নানা উপায় আছে। বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এটা বিভিন্ন রকমের। আমি এক একটা ম্যাচের পর হোটেলে ফিরে আইপডে গান শুনতাম। নেট সার্ফিং করতাম। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ধোনি বা ফ্লেচারের সঙ্গে কথাও হত। খেলিনি হয়তো, কিন্তু সব সময় ক্রিকেটের মধ্যে থাকার চেষ্টা করতাম। |
প্র: সেটা কী ভাবে?
মনোজ: খুব অল্প কথায় ব্যাপারটা বোঝানো কঠিন। এত বড় একটা সফর, মাঠে ও মাঠের বাইরে এমন অনেক কিছু ঘটে যা থেকে আপনি শিখতে চাইলে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। এই সফর ক্রিকেটার হিসেবে আমাকে আরও পরিণত করেছে। মানুষ হিসেবেও এটা ছিল ‘প্রসেস অব গ্রোয়িং আপ’। আরও পরিণতি এসেছে জীবনে। যেমন ধরুন, সচিনের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথাবার্তা। প্রথমেই আমাকে শেষ সেঞ্চুরিটার জন্য কনগ্র্যাচুলেট করেছিল। ক্রিকেট নিয়ে কথা বলায় কখনও কোনও রকম অনীহা নেই। ওর কাছ থেকে অনেক মূল্যবান টিপস পেয়েছি। যেমন পেয়েছি দাদির কাছ থেকে। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে নেটে ব্যাট করাও একটা অভিজ্ঞতা।
প্র: শেষ দিকে সফরটাকে অসহ্য লাগত না?
মনোজ: ওই যে বললাম, মাঝে মাঝে হতাশা গিলে ফেলতে চাইত। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটারের জীবনে এটা হতেই পারে। এটা সামলাতে পারাটাও একটা শিক্ষা।
প্র: এশিয়া কাপে তো যাচ্ছেন। ওখানে সুযোগ পাওয়া নিয়ে আশাবাদী?
মনোজ: কেন নয়? ঢাকাতে হয়তো সুযোগ পাব। আমি সব সময় পজিটিভ ভাবনায় বিশ্বাসী। তা ছাড়া ঢাকার কথা পরে। আপাতত মাথায় বিজয় হাজারে ট্রফির মধ্যপ্রদেশ ম্যাচ।
প্র: এত দিন ম্যাচের মধ্যে নেই। অসুবিধে হবে না?
মনোজ: প্রশ্নই ওঠে না। যখনই বাংলার জার্সি আর বাংলার ক্যাপ পরি, ভেতরে অন্য রকম একটা অনুভূতি হয়। আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছি। সব ম্যাচ জিতে। অস্ট্রেলিয়া থেকেও খবর রাখতাম টিম কী রকম করছে না করছে। এখন টিমটা ছন্দে আছে। সেমিফাইনালে খেলতে পারব কি না জানি না। তবে মধ্যপ্রদেশ ম্যাচটা তো খেলি।
প্র: রঞ্জি অধিনায়ক থাকার সময় এ বারই বলেছিলেন, সর্বভারতীয় ট্রফি আসাটা সময়ের অপেক্ষা। পূর্বাঞ্চল কিন্তু দলীপ ট্রফি জিতেছে...।
মনোজ: (থামিয়ে দিয়ে) দারুণ খবর ওটা। ঋদ্ধিরা যেটা করেছে আগে কেউ করেনি। এখনও বলছি আমাদের টিমের রঞ্জি ট্রফি বা বিজয় হাজারে ট্রফি জেতার ক্ষমতা আছে।
প্র: বিজয় হাজারে-র জন্য টিমের সঙ্গে তো যাননি...
মনোজ: না। আমি কাল দাদির সঙ্গে এক ফ্লাইটে যাব। সেটাই ঠিক আছে। অস্ট্রেলিয়া সফর এখন অতীত। আমার সামনে এখন শুধুই মধ্যপ্রদেশ ম্যাচ। তা ছাড়া আমি সামনের দিকে তাকাতে চাই। |