ভারতীয় দলের জন্য শেষ দুটো মাস খুব খারাপ গিয়েছে। মনে হয় ভারতীয় সমর্থকরাও ক্রিকেট আর ততটা উপভোগ করছেন না। অস্ট্রেলীয় সমর্থকদের জন্যও অবশ্য সময়টা বেশ হতাশাজনক যাচ্ছে। যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমী এই সফরে আরও লড়াকু ভারতীয় দল চাইত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, সফরটা ধোনিদের জন্য খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়ে গেল। আশা করেছিলাম এ.কে ফর্টি-সেভেন হাতে ভারতীয় দল। পেলাম জল-ভরা পিস্তল হাতে নেওয়া ভারত।
দশ সপ্তাহ আগে বলাবলি হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতার জন্য এটাই ভারতের সেরা সুযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অস্ট্রেলিয়া ৫০ রানের মধ্যে গুটিয়ে গিয়েছিল। দলটাকে নতুন করে গড়ে তোলার সময়টা বেশ কঠিন যাচ্ছিল। এই সফর নিয়ে ধোনিদের মনোভাবে বোধহয় কিছুটা ঔদ্ধত্য আর আত্মতুষ্টি ছিল। মেলবোর্নে হারের পর ওদের কোনও ‘প্ল্যান বি’ ছিল না। ওরা কী রকম নিজেদের খোলসে ঢুকে গেল। দলে যে অত প্রতিভা আছে, তার কোনও প্রকাশই হল না। ভারত অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল দু’নম্বর টেস্ট দল হিসেবে। কিন্তু ওদের ক্রিকেট কখনওই সেটা বোঝাতে পারেনি। |
এর পর যে দোষারোপের পালা আর প্রচারমাধ্যমের ময়নাতদন্ত শুরু হবে সেটা আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না। আশা করব এই ভারতীয় দলের মনোভাবটা যেন ভাল করে খতিয়ে দেখা হয়। কাউকে একটা গিয়ে বিরাট কোহলিকে বলতে হবে যে, মাঠে আসা দর্শকদের সঙ্গে ঝামেলা করে কোনও লাভ নেই। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে এক একটা ক্যাম্প তৈরি হয়েছে এ রকম অনেক গুজব ছড়িয়েছে। তার সব ক’টাই মিথ্যে হতে পারে না। দলে একটা বিভাজন তো ছিলই। সেটা মাঠেও খুব পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। প্র্যাক্টিসের সময়ে সমর্থকদের সঙ্গে প্রায় কোনও যোগাযোগ রাখেনি ধোনিরা। যতই ওরা নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছিল ততই যেন ওদের ক্রিকেটের ক্ষতি হচ্ছিল।
আমি হতাশ হলাম দেখে যে, গোটা সফরে এক বারও মিডিয়ার সঙ্গে সচিন কথা বলল না। আমাদের দেশেও সচিন এক জন ‘আইকন’। এ দেশে ওর শেষ সফর নিয়ে সচিন কী বলবে, সেটা নিয়ে ওর অস্ট্রেলীয় সমর্থকদের প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। ওর মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারের কাছ থেকে এ রকম পরিপূর্ণ স্তব্ধতার কোনও দরকার ছিল বলে মনে হয় না। গোটা সিরিজে ভারতীয় দলও কেন মিডিয়ার সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করল, বুঝলাম না। আর ডানকান ফ্লেচার কোথায় ছিল? আমি জানি এক জন ভাল কোচ সব সময় পর্দার পিছনে থাকে। কিন্তু ডানকান তো একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেল! শেষ এক মাসে ওকে দেখেছি বলে অন্তত আমি মনে করতে পারছি না।
এই সফরে যে ভারতীয় দলকে দেখলাম তারা একটা ম্যাড়ম্যাড়ে দল। এখন মনে হচ্ছে হরভজন সিংহকে বাদ দিয়ে ওরা ভুল করেছিল। জানি ও ভাল ফর্মে ছিল না। কিন্তু হরভজন ওর সঙ্গে একটা ইতিবাচক, লড়াকু মানসিকতা নিয়ে আসে। ওর চনমনে হাবভাব ভারতীয় দলকেও হাল্কা রাখতে পারত। বোলার বল করার আগে ব্যাটসম্যান জাহির খানকে পিছিয়ে যেতে দেখে মনে হল, এটাই তো এখন ভারতীয় পারফরম্যান্সের প্রতীক। যেখানে ওর তরুণদের ক্রিজে পড়ে থাকা শেখানো উচিত ছিল, সেখানে নিজের উইকেটটাই উপহার দিয়ে এল জাহির। আর ঠিক এই মনোভাবই ভারতীয়দের একটা হার থেকে আর একটায় ছুড়ে দিল।
সামনের দিনে যে জায়গাগুলোয় উন্নতি করতে হবে, সেগুলো নিয়ে ভারতকে সৎ হতে হবে। শুনলাম শ্রীনিবাসন বলেছেন যে ঘরের মাঠে ভারতের পারফরম্যান্সই নাকি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীকান্তও নাকি ভারতের শোচনীয় পারফরম্যান্সের অজুহাত দেওয়া শুরু করেছেন। শুনছি অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ভাগ করে তরুণদের আরও সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে বসলে কয়েকটা কঠিন বিষয়ের মোকাবিলা করতে হবে। সিনিয়রদের উপর কি এখনও নির্ভর করা হবে? দলের মনোভাব আর নাগাড়ে স্লো ওভার রেটের দাওয়াই কী হতে পারে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে। না হলে বিদেশের মাঠে ভারত কখনও ছন্দ পাবে না।
এই সফর থেকে ভারতের প্রাপ্তি বলতে দুটো। কোহলি এবং উমেশ যাদবের পরিণত হয়ে ওঠা। কোহলির মধ্যে ভবিষ্যৎ নেতা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এখনই দেখা যাচ্ছে। ওর ক্রিকেটমস্তিষ্ক বেশ ভাল। আমার চোখে কোহলি আগামী দিনের অন্যতম তারকা। অস্ট্রেলিয়ার পিচে বল করে যাদবও নিশ্চয়ই অনেক কিছু শিখেছে। ভারতের জন্য ও খুব ভাল আবিষ্কার। সামনের অনেক বছর ভারতীয় ক্রিকেটের কাজে লাগবে উমেশ। |