|
|
|
|
তছরুপে অভিযুক্ত গ্রামোন্নয়ন কমিটির দু’জন পদাধিকারী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গোঘাট |
‘জন-উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য’ প্রকল্পের টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল সিপিএম পরিচালিত গোঘাট-১ ব্লকের বালি পঞ্চায়েতের দিঘড়া গ্রামোন্নয়ন কমিটির দুই পদাধিকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের মধ্যে মানিক গাজি ওই কমিটির সভাপতি এবং সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য। অন্য অভিযুক্ত মনোরঞ্জন রায় কমিটির সম্পাদক এবং সিপিএম কর্মী।
ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার দু’জনের বিরুদ্ধে গোঘাট থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা পলাতক। অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়ে দুই অভিযুক্তই জানিয়েছেন, তাঁরা টাকা ফেরত দিতে চান।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চায়েত প্রধান ভূমেন্দ্রমোহন রায় দিঘড়ার বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পান, ওই প্রকল্পে গ্রামোন্নয়ন কমিটি কোনও কাজ করেনি। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে অভিযোগের কথা বিডিওকে জানানো হয়। গ্রামবাসীরাও বিডিও-র কাছে আলাদা ভাবে লিখিত অভিযোগ জানান। এর পরেই তদন্তে নামে ব্লক প্রশাসন।
বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “ব্যাঙ্কে ওই প্রকল্পে দিঘড়া গ্রামোন্নয়ন কমিটির অ্যাকাউন্টে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ১৯ হাজার টাকা (প্রকল্পের দু’দফার টাকা মিলিয়ে) ছিল। পরের মাসেই ১৮ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নেন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক। দু’জনে যুগ্ম ভাবে ওই টাকা তুলতে পারেন। অথচ, ওই টাকায় কোনও কাজ হয়নি। সেই কারণে দু’জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
এফআইআর করার আগে বিডিও মানিকবাবু এবং মনোরঞ্জনবাবুকে শো-কজও করেছিলেন। কিন্তু কিন্তু তার কোনও জবাব তিনি পাননি বলে জানিয়েছেন বিডিও।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে ‘জন-উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য’ প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চায়েতে আসে। প্রধান সেই টাকা সব সংসদের মধ্যে ভাগ করে সংশ্লিষ্ট গ্রামোন্নয়ন কমিটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হল জনগণের মিলিত চেষ্টায় একটি এলাকার সকলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলা। এ জন্য প্রতি বছর পঞ্চায়েতগুলিকে সংসদপিছু প্রায় ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। ওই টাকায় মা-শিশুর স্বাস্থ্য, নিয়মিত টিকাকরণ, সঠিক বয়সে মেয়েদের বিয়ে প্রভৃতি বিষয়ে পাড়াভিত্তিক সচেতনতা সভার আয়োজন করা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে যে সব পরিষেবা মেলে, সে বিষয়ে সচেতনতার জন্য স্থায়ী বোর্ড নির্মাণ করে তাতে লিখে রাখা, পানীয় জলের নলকূপের চাতাল মেরামত, শৌচাগার নির্মাণ, ছোটখাটো পয়ঃপ্রণালী সংস্কার ইত্যাদি কাজ করার কথা।
কিন্তু গত বছরের প্রথমার্ধে রাজনৈতিক অশান্তি, বিধানসভা নির্বাচন ইত্যাদি কারণে আরামবাগ মহকুমায় প্রকল্পটির প্রায় কোনও কর্মসূচিরই রূপায়ণ হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে। রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পরে বিভিন্ন প্রকল্পের পড়ে থাকা টাকা সদ্ব্যবহারের জন্য ব্লক প্রশাসন উদ্যোগী হয়। গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকে ওই প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেন বিডিও। প্রধান সে কথা জানিয়ে দেন এলাকার গ্রামোন্নয়ন কমিটিগুলিকে। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রধান রিপোর্ট চান।
প্রধান বলেন, “সেই সময়ে দিঘড়া গ্রামোন্নয়ন কমিটি জানিয়েছিল, কাজ চলছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়াতেও কোনও রিপোর্ট জমা না পড়ায় নিজে কাজ কতদূর হয়েছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে গ্রামবাসীরা আমার কাছে অভিযোগ জানান, কোনও কাজই হয়নি। বিষয়টি বিডিওকে জানাই।” কাজ না হওয়ার কথা মানতে চাননি দুই অভিযুক্ত। দু’জনেরই দাবি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রচারের কাজ তাঁরা রোজই করেছেন। মানিকবাবু বলেন, “নানা কারণে বিডিও-র শো-কজের জবাব দেওয়া হয়নি। টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ভাবছি।” একই বক্তব্য মনোরঞ্জনবাবুরও। বিডিও অবশ্য জানিয়েছেন, সেই সময় পেরিয়ে গিয়েছে। |
|
|
|
|
|