সম্মেলনেই নেতার নামে কটূক্তি শুনলেন পার্থ
হরমপুরের পরে আরামবাগ।
সম্মেলনে যোগ দিতে এ বার আরামবাগে গিয়ে দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ প্রত্যক্ষ করলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে দেখতে হল, সম্মেলনে ঢুকতে না পারা এক দল কর্মী-সমর্থকের ‘বিশৃঙ্খলা’। শুনতে হল, দলের এক নেতার নামে কর্মীদের কটুক্তি।
শুক্রবারই দলের দুই গোষ্ঠীর মারপিটে বহরমপুরে পণ্ড হয়েছিল তৃণমূলের সভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং মৎস্য প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা। রবিবার আরামবাগে ‘পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলন’ উপলক্ষে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ‘বিবাদ’ অবশ্য তত দূর গড়ায়নি। কিন্তু দৃশ্যতই ‘অস্বস্তি’তে পড়েন সম্মেলনের প্রধান বক্তা পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
প্রাথমিক ভাবে পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া ছিল, “যে কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁরা আমাদের দলের কি না, তা আগে খতিয়ে দেখব। পরে মন্তব্য করব।” পরে অবশ্য তিনি বলেন, “দলীয় কর্মীদের পরিষ্কার এবং চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছি কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না।” এ দিনই উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় তৃণমূলের ‘পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলন’-এ দলীয় সাংসদ নুরুল ইসলাম এবং বিধায়ক জুলফিকার আলির উপস্থিতিতেই দুই গোষ্ঠীর কর্মীদের মধ্যে বচসা ও হাতাহাতি বাধে।
আরামবাগে ‘বিক্ষুব্ধ’ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মোহন দাসের তোলা ছবি।
আরামবাগের রবীন্দ্রভবনে ওই সম্মেলন শুরু হয় সকাল ৯টায়। আহ্বায়ক আরামবাগ পুরসভার বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের স্বপন নন্দী। প্রেক্ষাগৃহে ঢোকার জন্য আয়োজকদের পক্ষ থেকে ‘প্রতিনিধি পরিচয়পত্র’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেকের কাছেই তা ছিল না। ফলে, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তা নিয়েই শুরু হয় বিক্ষোভ। রাস্তা প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই আরামবাগের তৃণমূল নেতা সমীর ভাণ্ডারীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত। দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ পার্থবাবুকে আসতে দেখে বিক্ষোভকারীরা তাঁর গাড়ির সামনে গিয়েও এ নিয়ে অভিযোগ জানান। স্বপন নন্দীর নামে গালিগালাজ এবং স্লোগানও চলতে থাকে সমান তালে। প্রেক্ষাগৃহের গেটে লাথি মারা হয়। তার মধ্যেই পুলিশ এবং দলের কিছু কর্মী-সমর্থক পার্থবাবুকে রবীন্দ্রভবনে ঢুকিয়ে দেন। গেট বন্ধ হলেও বাইরে চলতে থাকে বিক্ষোভ।
দুপুর ১টা নাগাদ তৃণমূল নেতা সমীর ভাণ্ডারী সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন। শ’খানেক দলীয় কর্মী-সমর্থক তাঁকে অনুসরণ করেন। সেই সময়ে গেট বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হলে সমীরবাবুর অনুগামীরা স্বপনবাবুর গোষ্ঠীর কয়েক জনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্ত ধস্তাধস্তি হয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশের। সমীরবাবুর হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে।
তৃণমূলের অন্দর সূত্রের খবর, সম্মেলনে সমীরবাবু দলে ‘সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের অনুপ্রবেশ’ প্রসঙ্গ তুললে হইচই শুরু হয়। পার্থবাবু তাঁকে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলেন। এর পরে সমীরবাবু বাইরে অপেক্ষমাণ দলীয় কর্মীদের ভিতরে ডেকে নেওয়ার আবেদন জানান পার্থবাবুর কাছে। কিন্তু ‘ভিতরে জায়গা নেই’ এই ‘কারণ দেখিয়ে’ পার্থবাবু তাঁদের ডাকেননি। তবে সম্মেলনের শেষে তিনি ‘বিক্ষুব্ধ’দের সঙ্গে কথা বলেন।
বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ, বিধানসভা ভোটের আগে ‘সিপিএমের যে সব দুষ্কৃতী’ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উপরে ‘নির্যাতন’ চালিয়েছে, এখন তারাই দল পাল্টে সম্মেলনে ঢুকেছে। অথচ, যাঁরা তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে রয়েছেন, তাঁদের সম্মেলনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্রীকান্ত ঘোষ পার্থবাবুর কাছে আয়োজকদের মধ্যে ‘সিপিএম ঘনিষ্ঠ’ কয়েকজন নেতার নামে অভিযোগ জানাতে যান। পার্থবাবু তাঁকে লিখিত ভাবে ওই অভিযোগ পাঠাতে বলেন তাঁর কাছে। তার পরেই তিনি বলেন, “দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না।”
এ প্রসঙ্গে সমীরবাবুর বক্তব্য, “এক দল চাইছে, দল থেকে সিপিএমকে হটাতে। আর এক দল চাইছে, সিপিএমকে দলে ঢুকিয়ে পকেট ভর্তি করতে। তা থেকেই গোলমাল।” পক্ষান্তরে স্বপনবাবুর বক্তব্য, “মাধ্যমিক চলায় প্রেক্ষাগৃহে সম্মেলন করতে হয়েছে। জায়গার অভাবে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো যায়নি।” গোলমালের পিছনে সিপিএমের ‘ইন্ধন’ রয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ। ওই অভিযোগ ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.