নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নেত্রীর মূল্যবোধকে সঙ্গে নিয়ে চললেও কাজের ধরনে তাঁর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কিছু পার্থক্য’ থাকতেই পারে। এক সাক্ষাৎকারে আজ এ কথা জানান রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। এক জন মন্ত্রী হিসেবে যে দলের থেকে নিজের দেশ তথা নিজের মন্ত্রক তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পাবে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
স্বাভাবিক ভাবেই দীনেশের এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের সম্ভাবনা উস্কে দিয়েছে। রেলের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রের সাফ কথা, ন’বছর ধরে একই জায়গায় আটকে থাকা যাত্রী ভাড়া যদি এ বারেও বাড়ানো না হয়, তা হলে রেলের আর্থিক হাল আরও শোচনীয় হবে। ফলে ধাক্কা খাবে রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা। দীনেশ নিজেও রেল মন্ত্রকের দায়িত্বে এসে পণ্য মাসুল সামান্য হলেও বাড়িয়ে পরবর্তী কালে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তাঁকে সেই অবস্থান থেকে পিছু হটতে হয়। পরে তিনি এমনও ইঙ্গিত দেন যে, রেলমন্ত্রী হিসেবে তাঁর স্থায়িত্ব খুব বেশি দিনের নয়।
তিনি যে কেন্দ্র ও মমতার টানাপোড়েনের (তাঁর কথায় ‘ক্রস ফায়ার’) মধ্যে রয়েছেন, সে কথা কিন্তু আজ স্বীকার করে নিয়েছেন দীনেশ। আবার সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলেছেন, “সমস্যা নয়, আমি সমাধানের অংশীদার হতে চাই”।
এই ‘সমাধানের’ পথ আগলে কি তাঁর নিজের দল তথা দলনেত্রীই দাঁড়িয়ে নেই? সুকৌশলে প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়েছেন দীনেশ। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বললেন, “প্রতিটি রাজ্যেরই নিজস্ব আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। আমি তার মধ্যে পড়তে চাই না। রেলমন্ত্রী হিসেবে আমার কাজ মানুষকে সুরক্ষা এবং স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া। এটাই আমার অগ্রাধিকার।” স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই কাজে তিনি খুবই ‘ফোকাসড’। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “যদি রাজনীতির প্যাঁচে পড়ে পথভ্রষ্ট হই, তা হলে নিজের দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পারব না।” তাঁর কথায়, “আমাকে বেশ কিছু বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয়। প্রথম দায়বদ্ধতা হল আমার দেশ। যা, আমার কাছে, ভারতীয় রেল। এর পরে আমার দল। বিবেক আমাকে রেলের দায়িত্ব পালন করতেই নির্দেশ দেয়।” |
ভিন্ন সুর |
আমি সরু দড়ির উপর দিয়ে হাঁটছি, যার নীচে কোনও সুরক্ষাজাল নেই।
দীনেশ ত্রিবেদী, রেলমন্ত্রী |
|
যদিও দলীয় নেত্রী ভাড়া না বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন, কিন্তু ভাড়া না বাড়িয়ে কোষাগারের হাল ফেরানোর কোনও পথ রেলের আধুনিকীকরণ কমিটি দীনেশকে দেখাতে পারেনি। রেলে এখন তীব্র অর্থসঙ্কট। ভাড়া বাড়ানো হলেই যে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা অবশ্য মনে করছেন না দীনেশ। তবে তাঁর কথায়, ভাড়া বাড়ানো হলে খরচটা সামলানো যাবে। রেল পরিষেবা এবং পরিকাঠামোয় বিনিয়োগও সম্ভব হবে। রেলমন্ত্রীর বক্তব্য, “অনেকেই আমার কাছে জানতে চান, ভাড়া বাড়াও না কেন? এই দলে যেমন সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তেমনই রয়েছে সংবাদমাধ্যম। সাংসদরাও। আমাকে কিন্তু বুদ্ধি করে ভারসাম্য রেখে চলতে হচ্ছে। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনা অনুযায়ী ৫০ লক্ষ কোটি টাকা সরকারের দেওয়ার কথা। আমি বলছি, প্রাপ্যর অন্তত ১০ শতাংশ তো দাও।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “যাত্রী ভাড়া বাড়ালে আমার প্রয়োজনীয় অর্থ যে খুব বেশি আসবে, তা নয়। তবে ভাড়া বাড়ালে বিপুল খরচের চাপটা সামলানো যাবে। ‘অপারেটিং রেশিও’ এখন ৯৬। তা যদি ৮০তে নেমে আসে, তখন বিনিয়োগও কার্যকরী করা সম্ভব হবে।”
নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা বিশদে বলে আজ রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, “৩৫ বছরের অপশাসনের অবসান করে তিনি পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর সংগ্রাম এবং সততা তুলনাহীন। আমি তাঁর ধারেকাছেও নেই। আমি মমতার দলের সদস্য হিসেবে কাজ করি।” তবে এর পাশাপাশি তিনি বলেন, “কাজের ধরনে অনেক মতপার্থক্য বা ভিন্নতা থাকতেই পারে।” আসন্ন বাজেট সম্পর্কে মন্ত্রীর মতামত, “ভারতীয় রেলের জন্য বাজেট ভাল হবে, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারি।” বলেই জুড়ে দিলেন, “তবে এটা ঠিক যে, আমি সরু দড়ির উপর দিয়ে হাঁটছি। যার নীচে কোনও সুরক্ষাজাল নেই।” |