নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সাফল্যের হাজার রং। হোলির তিন দিন আগেই নিজের বাড়িতে ‘হোলি-মিলন’-এর আয়োজন করেছেন নিতিন গডকড়ী। তাঁর তিন মূর্তি লেনের বাসভবনে বিজেপির সব নেতাকে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। উৎসবের কারণ আছে বইকি। বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে ৭০-এর বেশি আসন পেয়ে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থান অধিকার করতে চলেছে বিজেপি। দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী একে নিজের সাফল্য হিসেবে দাবি করতেই পারেন। নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশ ভোটে প্রচারে যাননি। তা সত্ত্বেও বিজেপির ভাল ফল হলে প্রমাণ হবে, মোদীকে ছাড়াই এগোতে পারেন নিতিন।
কিন্তু এই সাফল্যের মধ্যেও উঠেছে নানা প্রশ্ন। দলের মধ্যে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজরা প্রশ্ন তুলেছেন, রাহুল গাঁধীকে সামনে রেখে প্রচারে নামা কংগ্রেসকেও যদি বিজেপি পিছনে ফেলে দিতে পারে, তা হলে উমা ভারতীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে বিজেপি আরও ভাল ফলের চেষ্টা করল না কেন? এই নেতাদের বক্তব্য, কাউকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার অর্থ দল তখন আর তৃতীয় স্থানের জন্য লড়ছে না, প্রথম স্থানের জন্য লড়াই করছে। উমা ভারতী দু’বছর আগে আডবাণীকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর মধ্যপ্রদেশের রাজনীতি করবেন না। আডবাণী তখনই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার কথা বলেছিলেন। সেই সময়েই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে দেওয়া হলে দল তার সুফল পেত বলেই মনে করছেন অনেক শীর্ষ নেতা। একই ভাবে আডবাণীর রথযাত্রাকে কেন উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আবার নিতিন শিবিরের পাল্টা যুক্তি হল, দলের মধ্যে কোঁদলের কারণেই এ সব করা যায়নি। কারণ রাজনাথ সিংহের মতো উত্তরপ্রদেশের নেতারা উমা ভারতীর নাম শুনে ‘রে রে’ করে ওঠেন। আরএসএসের নির্দেশে সঞ্জয় জোশীকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাঁর সঙ্গে আবার নরেন্দ্র মোদীর সাপে-নেউলে সম্পর্ক। সেই কারণেই মোদী প্রচারে যাননি। একই ভাবে বরুণ গাঁধীকেও তাঁর এলাকার বাইরে ব্যবহার করেননি নিতিন। কারণ গত লোকসভা নির্বাচনে বরুণের সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের মাসুল বিজেপিকে গুণতে হয়েছিল। বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, সংখ্যালঘু ভোট এমনিতেই বিজেপির ঝোলায় আসে না। কিন্তু সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের ঝাঁঝ বেড়ে গেলে হিন্দু ভোটও কমে যায়। কারণ সব হিন্দুই সংখ্যালঘু-বিরোধী নন। কাজেই নরেন্দ্র মোদী বা বরুণ গাঁধী উত্তরপ্রদেশে প্রচারে না নামায় দলের কিছুটা লাভও হয়েছে। মুশকিল হল, তাতে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোঁদলের ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ৫৫ জন মুখ্যমন্ত্রী বলে বরুণ দলীয় কোঁদলকে সামনে এনে ফেলেছেন। একই ভাবে মোদীও দলের হাজার অনুরোধ সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশের মাটিতে পা রাখেননি।
সোমবারের ‘হোলি-মিলন’-এই তাই থেমে থাকছেন না নিতিন গডকড়ী। মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের ফলপ্রকাশের দিনই সভাপতির বাড়িতে বৈঠক ডাকা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ তো বটেই, অন্য রাজ্যগুলির ফলাফলও বিশ্লেষণ করা হবে। তার উপরে ভিত্তি করেই ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের রূপরেখা স্থির করবেন নিতিন গডকড়ী। |