খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়েও সংঘাতের আবহ
মমতার দেখা পেলেন না কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী
উপিএ জোট সরকারের মধ্যে আবারও সংঘাতের আশঙ্কা। এ বারের বিষয় জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা বিল।
বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগেই খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এল। এই মাসের গোড়ায় বিলটি নিয়ে ঐকমত্য তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস কলকাতা গিয়েছিলেন। দেখা করেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং নিজের বিরোধিতার অবস্থানেই অটল থেকেছেন।
কে ভি টমাস
গত মাসে এই বিলটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল তার বিরোধিতা জানানোর পর নয়াদিল্লিতে কে ভি টমাস রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, এই মতপার্থক্য শীঘ্রই কেটে যাবে। তিনি এ কথাও ঘোষণা করেন যে, শীঘ্রই কলকাতা গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকে এই বিলের খুঁটিনাটি বুঝিয়ে বলবেন। বাজেট অধিবেশনের আগেই যাতে এ বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করাটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।
ঘোষণা অনুযায়ী মমতার সময় চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। টমাস নিজেও কলকাতা গিয়ে দু’দিন অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু মমতার সঙ্গে দেখা না করেই তাঁকে ফিরে আসতে হল। টমাস কলকাতায় থাকার সময়ে মমতা ছিলেন দার্জিলিং সফরে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের বক্তব্য, সেই সফরের আগে বা পরেও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বৈঠকের জন্য কোনও সময় দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে।
সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু ১২ মার্চ। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, তার আগে খাদ্য বিল নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেতে চাইছেন না। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও, এই নিয়ে কোনও সমঝোতা করতেই রাজি নন মমতা।
জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিলটি লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে। আপাতত সেটি রয়েছে খাদ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সামনে। বাজেট অধিবেশনে বিলটিকে পাশ করাতে মরিয়া কংগ্রেস। ওই বিলে গ্রামীণ জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ এবং শহরের ২৮ শতাংশকে খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা রয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের খাদ্য এবং কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে বিলটি নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কোনও মন্ত্রীকেই ওই অধিবেশনে পাঠানো হয়নি। শুধু দফতরের কর্তাদের হাত দিয়ে একটি নোট পাঠানো হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা পশ্চিমবঙ্গে সরকারের বক্তব্য, এই ভাবে নির্দিষ্ট কিছু শতাংশ মানুষের মধ্যে বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ করে রাখার ঘোরতর বিরোধী তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাঠানো নোটে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রশ্নে এই বিলটিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। রাজ্যের স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী কারা এই বিলের আওতায় আসবেন, তা স্থির করার অধিকার রাজ্য সরকারকে দিতে হবে।’
রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) গঠনের মতো এই খাদ্য সুরক্ষা বিলটি নিয়েও মমতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অন্য মুখ্যমন্ত্রীরা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, এআইএডিএমকে-ও বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, খাদ্য সুরক্ষার ফলে উপকৃত কারা হবেন, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রে লক্ষ্মণরেখা টেনে দিতে পারে না। এডিএমকে-র খাদ্যমন্ত্রী আর কামরাজ বলেছেন, “আমরা এই বিলের বিরোধিতা করছি, কারণ এর ফলে সবাই খাদ্য সুরক্ষা পাবে না। বরং এই বিলটি এলে অনেকেই বঞ্চিত হবে।”
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে লোকপাল বিল থেকে খুচরো বিতর্ক, সব বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতের রাস্তায় গিয়েছেন মমতা। গত মাসে এনসিটিসি-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মূলত তাঁর হস্তক্ষেপেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেও এনসিটিসি গঠন স্থগিত রেখেছে কেন্দ্র। একের পর এক বিরোধিতায় কিছুটা চাপে পড়ে কংগ্রেসও পাল্টা কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা ভাবছে।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে কংগ্রেসের ফলাফল কেমন হয়, তার উপরেও মমতার সঙ্গে সনিয়া গাঁধীর দলের রাজনৈতিক সমীকরণ নির্ভর করছে। গত কালের বুথ ফেরত সমীক্ষায় কংগ্রেসের কোনও লাভ এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। ফলে কংগ্রেসের বৃহত্তম শরিক মমতার কথা মেনে নেওয়া ছাড়া আপাতত কোনও গত্যন্তর নেই বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.