ফ্ল্যাটে খুনই করা হয়েছে বধূকে, বলছে ময়না-তদন্ত |
স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ফোনে পুলিশকে জানিয়েছিলেন স্বামী। কিন্তু রবিবার ময়না-তদন্তের পরে পুলিশ নিশ্চিত, সুজান বেগম ওরফে বৈশাখী বিশ্বাস (২৫) নামে ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে। শ্বাসরোধের ফলেই যোধপুর গার্ডেন্সের ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশি সূত্রের খবর। তবে তাঁর স্বামী রেজাউল হক শেখের খোঁজ পায়নি পুলিশ। খোঁজ মেলেনি তাঁদের আড়াই বছরের ছেলেরও।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৈশাখীর দেহের অনেক অংশই নীল হয়ে গিয়েছিল। বিষপানের জেরে অনেক সময় মৃতদেহ নীলচে হয়ে যায়। শ্বাসরোধের আগে কোনও পানীয়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাঁকে খাওয়ানো হয়েছিল কি না, পুলিশের কাছে এখনও সেটা পরিষ্কার হয়নি।
শনিবার সকালে লেক থানা এলাকার যোধপুর গার্ডেন্সের এক বহুতলের ফ্ল্যাট থেকে বৈশাখীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। রেজাউলই লেক থানায় ফোন করে বলেছিলেন, স্ত্রীর দেহ সিলিং থেকে নামিয়ে ছেলেকে নিয়ে বারুইপুরের একটি বাড়িতে আছেন তিনি। মৃতার মা রেজাউলের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, রেজাউলের মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান অনুযায়ী শনিবার সকালে তিনি বারুইপুরে ছিলেন। সেখানে বাড়ি ভাড়া নেওয়া আছে তাঁর। আগে সেখানেই থাকতেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ ওই বাড়িতে রেজাউল বা তাঁর ছেলেকে পায়নি। বারুইপুরের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, ছেলেকে নিয়ে শনিবার সকাল ৬টা-সাড়ে ৬টা নাগাদ ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন রেজাউল। কিন্তু তার কিছু পরে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। তাই সেখানে থেকে তিনি ছেলেকে নিয়ে কোথায় গিয়েছেন, রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে তা স্পষ্ট হয়নি।
বেশ কয়েকটি প্রশ্নেরও জবাব পাচ্ছে না পুলিশ।
• রেজাউল একটি পানশালায় কাজ করতেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। কিন্তু ইদানীং তাঁর কোনও কাজ ছিল না। তা হলে বেকার রেজাউল যোধপুর গার্ডেন্স ও বারুইপুরে দু’টি ভাড়া বাড়ির খরচ চালাতেন কী ভাবে? • স্ত্রীর ঝুলন্ত মৃতদেহ নামিয়েই রেজাউল লেক গার্ডেন্সের বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন কেন? • যদি গা-ঢাকাই দেবেন, তা হলে থানায় ফোন করে স্ত্রীর অপমৃত্যুর খবর কেনই বা জানাবেন রেজাউল? • শুক্রবার রাতে রেজাউল ও বৈশাখী যোধপুর গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটে ছিলেন বলেই প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বারুইপুরে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ওই ফ্ল্যাটে ঠিক কী ঘটেছিল, তা রেজাউলের জানার কথা। থানায় ফোন করে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’র কথা বললেও রেজাউল ঘটনার সবিস্তার বিবরণ দিলেন না কেন? কেনই বা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি? রেজাউলের খোঁজ না-মেলায় কোনও প্রশ্নেরই উত্তর পাচ্ছে না পুলিশ। ফলে বৈশাখীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য ঘোরালো হয়েছে। |