মহানগরের এক ‘মাওবাদী ডেরা’ থেকে রকেট লঞ্চারের যন্ত্রাংশ ও বেশ কিছু নগদ টাকা পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তারা জানিয়েছে, রবিবার ভোরে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটির ওই ‘ঘাঁটি’তে হানা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাওবাদী নথিও উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। উল্লেখ্য, গত বুধবার কলকাতা শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য-সহ পাঁচ নেতাকে ধরা হয়েছিল। জেরায় তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এ দিনের অভিযান বলে এসটিএফ জানিয়েছে।
এসটিএফ-সূত্রের খবর: বুধবারের অভিযানে ধৃত মাওবাদী সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান সদানাল রামকৃষ্ণ ওরফে ‘আর কে’ ঘাঁটি গেড়েছিলেন বিরাটির অযোধ্যানগরের এক আবাসনে। জেরায় তা জানার পরে এ দিন ভোরে সেখানে হানা দেন গোয়েন্দারা। এসটিএফের এক অফিসার জানান, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এম টেক ডিগ্রিপ্রাপ্ত রামকৃষ্ণই ছিলেন মাওবাদীদের অস্ত্র নির্মাণের প্রধান কারিগর। তাঁর ফ্ল্যাটে রকেট লঞ্চার তৈরির হরেক যন্ত্রাংশ ও নক্শা ছাড়াও ভবিষ্যতে সংগঠনের আর কী কী অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা রয়েছে, সে সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে বলে এসটিএফ-সূত্রের দাবি। সূত্রটি জানিয়েছে, সেখানে নগদ ৩৬ লক্ষ টাকার পাশাপাশি মাওবাদীদের গোপন নানা নথিও গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে।
এসটিএফের খবর: গত শুক্রবারও হাওড়ার বালিতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা, গাইড ম্যাপ এবং বিভিন্ন নথি পাওয়া গিয়েছিল। ফোর্সের কর্তাদের হিসেবে, বুধবারের পর থেকে এ পর্যন্ত মহানগরে মাওবাদী-বিরোধী বিভিন্ন অভিযানে সব মিলিয়ে নগদ প্রায় কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। গোয়েন্দাদের মতে, উদ্ধার হওয়া নথিগুলো মাওবাদী কার্যকলাপ দমনে যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে। এক কর্তার কথায়, “গাইড ম্যাপে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকার উল্লেখ রয়েছে। কেন ও সব তৈরি করা হয়েছিল, তা জানতে ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে।”
এসটিএফ-সূত্রে বলা হচ্ছে, কলকাতা শহরতলিতে মাওবাদীরা যে ঘাঁটি গেড়েছে, রামকৃষ্ণের গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে সেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে। কারণ গোয়েন্দা-তথ্য অনুযায়ী, তিনি শুধু মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় নেতাই নন, কিষেণজির মৃত্যুর পরে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন চাঙ্গা করার দায়িত্বও বর্তেছিল তাঁর উপরে। এ হেন এক জন খাস কলকাতার গা ঘেঁষে ঘাঁটি গেড়েছিলেন বলে জানার পরে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, আরও বেশ কিছু উঁচুদরের মাওবাদী জঙ্গলমহলের বাইরের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। |