পুরনো বিবাদের জেরে এক যুবককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল সিপিএমের বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে মুরারই থানার হরিশপুর গ্রামে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম দুলাল শেখ (২৭)। ওই গ্রামের মিয়াঁপাড়ায় তাঁর বাড়ি।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য সেরফান শেখের ছেলে সফেদ শেখকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। ১০০ দিনের কাজকে কেন্দ্র করে মাস দু’য়েক আগে দুলাল শেখের সঙ্গে গ্রামের যুবক নুর ইসলামের বিবাদ হয়। তার জন্য নুর ইসলামকে মেরেছিল দুলাল। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, তার জেরে এ দিন দুলালকে খুন করা হয়েছে। ৭-৮ জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। এক জনকে আটক করা হয়েছে।” এই ঘটনার সঙ্গে তাদের দলের কোনও যোগ নেই বলে অস্বীকার করেছে সিপিএম।
এ দিন বিকেলে হরিশপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে যান তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। অনুব্রতবাবুর দাবি, “দুলাল আমাদের দলের কর্মী। সিপিএমের লোকেরাই বাসস্ট্যান্ডে তাকে মেরেছে।” আবার কংগ্রেসের আমডোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য শান মহম্মদ বলেন, “দুলালদের পরিবার মুরারই বিধানসভার ৬ বারের কংগ্রেস বিধায়ক মোতাহার হোসেনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। বরাবরই কংগ্রেসী পরিবার হিসেবে পরিচিত তার পরিবার।” দুলালের মৃত্যুর জন্য তিনিও সিপিএমকে দায়ী করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। আমাদের সর্মী-সমর্থকেরা যেখানে আক্রান্ত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, সেখানে আমরা কেন অন্যের উপরে হামলা করতে যাব?”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিতর্কের সূত্রপাত ১০০ দিনের প্রকল্পে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে। মাস দেড়েক আগে মুরারই ২ ব্লকের আমডোল পঞ্চায়েতের হরিশপুর মিঞাপাড়ায় মীরাদহ নামে একটি পুকুরে মাটি কাটা চলছিল। ওই কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল সিপিএম কর্মী নুর ইসলাম। নিহত ওই যুবকের মা মোজেমা বিবির অভিযোগ, “সিপিএমের সক্রিয় কর্মী নুর ইসলাম ও তার সঙ্গীরা এ দিন সকালে হরিশপুর বাসস্ট্যান্ডে ছেলের উপরে চড়াও হয়। ওরাই ছেলেকে পিটিয়ে মেরেছে।” পঞ্চায়েত সদস্য সেরফান শেখের দাবি, “মোড়োলপাড়ার বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন শেখের ছেলে দুলাল কাজ শুরু হওয়ার দু’দিন পরে কাজ করতে যায়। ওই সময় কাজের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল নুর ইসলাম। দুলালের নামে কোনও জব কার্ড নেই। তার বাবার জবকার্ড দিয়ে সে আলাদা ভাবে কাজ করতে চেয়েছিল। এই নিয়ে নুরের সঙ্গে বচসা হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বচসার জেরে নুর দুলালকে চড় মেরেছিল। সেরফান শেখের অভিযোগ, “কাজ করতে না দেওয়ায় দিন কুড়ি আগে দুলাল নুরকে লোহার রড দিয়ে মেরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুরারই থানায় মামলা রুজু হয়। পরে দুলাল আদালতে জামিন নিয়ে গ্রামে ফেরে। কিন্তু চার-পাঁচ দিন আগে দুলাল ফের বাসস্ট্যান্ডে নুরের উপরে চড়াও হয়।” তিনি অবশ্য বলেন, “এ দিন নুর দুলালের উপরে হামলা করবে, আমরা জানতাম না। জানলে বাধা দিতাম। এই ঘটনায় আমার ছেলে জড়িত নয়।” পুলিশ জানায়, নুর ইসলাম পলাতক। |