বাবা-মেয়ের লড়াইটা অনেকটা একই রকম। এক জনের প্রতিপক্ষ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। অন্য জন হারাতে চাইছেন ক্যানসারকে। শক্তি কিন্তু একটাই। ওঁরা দু’জনেই দু’জনের অনুপ্রেরণা।
বাঁ পায়ে তেমন জোর পায় না কালনা ১ ব্লকের ধাত্রীগ্রামের উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়া। স্থানীয় ভট্টাচার্যপাড়ায় বাবা অতনু ভট্টাচার্য, মা বাসবীদেবীর আর ঠাকুমার সঙ্গে থাকে সে। কয়েক বছর আগে ক্যানসার ধরা পড়ে অতনুবাবুর। বাসবীদেবী বলেন, “সাত মাস বয়স থেকেই মেয়ের বাঁ দিক অসাড়। দু’বছর বয়স পর্যন্ত উঠে ভাল করে দাঁড়াতে পারত না। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, ওষুধের পাশাপাশি মেয়ের প্রয়োজন সাঁতারের। ৮ বছর বয়স থেকে প্রথমে বাড়ির কাছে পুকুরে, পরে শহরের সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ওকে ভর্তি করানো হয়। |
অসুস্থতা সত্ত্বেও মনের জোরে মেয়ের সাফল্যের জন্য লড়াই করে চলেছে ওর বাবা।”
সম্প্রতি জাতীয় প্যারা-অলিম্পিক সাঁতারে শ্রেয়া জিতে নিয়েছে চারটি ব্রোঞ্জ আর একটি রূপোর পদক। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় এস-৪ বিভাগে ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইল, ‘ব্রেথ স্ট্রোক’, ‘বেস স্ট্রোকস’, ‘বাটার ফ্লাই’ বিভাগে চারটি ব্রোঞ্জ পদক, রিলে বিভাগ থেকে একটি রূপোর পদক পেয়েছে সে। শুধু এ বারই নয়, এর আগেও ২০০৮-এ হরিয়ানায় ওই প্রতিযোগিতায় সে দু’টি ব্রোঞ্জ, ২০০৯-এ কলকাতায় চারটি ব্রোঞ্জ আর একটি রূপোর পদক পায়। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবার অসুস্থতা বাড়ায় এ বার মহারাষ্ট্রের প্রতিযোগিতাতে যোগ দিতে চায়নি শ্রেয়া। অনেক বুঝিয়ে অতনুবাবু তাকে পাঠিয়েছিলেন।
ব্রোঞ্জ বা রূপো নয়, শ্রেয়ার লক্ষ্য, অলিম্পিকে সোনা জেতা। তার কথায়, “সেই লক্ষ্যেই নিয়মিত অনুশীলন করছি। ওটা পেলেই বাবার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বলব, ওটা তোমার প্রাপ্য।” অতনুবাবু বলেন, “মেয়ের লড়াই-ই আমার অনুপ্রেরণা। ওর জোরেই ক্যানসারকে জয় করব।”
অতনুবাবুর মা দীপালিদেবী বলেন, “অতনু মেয়েকে সাহস জোগাচ্ছে, আর মেয়ে ওকে। এক জন পারলে অন্য জন পারবে না কেন? ও ঠিক রোগকে কাটিয়ে উঠবে।”
শুধু ভট্টাচার্য পরিবার নয়, এমনটাই বিশ্বাস গোটা ধাত্রীগ্রামের। |