সম্পাদকীয় ১...
নেতৃত্বের অভিজ্ঞান
স্পেশাল ইকনমিক জোন বা, সংক্ষেপে ‘সেজ’ লইয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঈষৎ ঝঞ্ঝাটে পড়িয়াছে। ইনফোসিস এ রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য সেজ-এর স্বীকৃতি চাহিতেছে, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী শিবিরে থাকিবার সময়ে সেজ-এর ধারণাটির বিরোধিতা করিয়াছিলেন, ফলে আজ তাঁহার সরকার ইনফোসিসের দাবি মানিয়া ‘দ্বিচারিতা’র দায়ে আপনাকে দায়ী করিতে পারিতেছে না। অথচ ইনফোসিসের বিনিয়োগ হইতে নূতন কর্মসংস্থান হইবে, শিক্ষিত বেকার অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গে যাহা মহামূল্যবান। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ-খরায় আক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গে ইনফোসিসের মতো সংস্থা লগ্নি করিলে সামগ্রিক ভাবে বিনিয়োগকারীদের নিকট এই রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হইবে। সুতরাং রাজ্য সরকার কার্যত উভয়সঙ্কটে। এই সঙ্কট হইতে পরিত্রাণের উপায় কী? যদি কোনও প্রকারে একটি সংস্থাকে রাজ্যে লইয়া আসাই উদ্দেশ্য হয়, তবে হয়তো একটি সহজ উপায়ও আছে। সেজ-এর বিরুদ্ধে বর্তমান শাসক দলের আপত্তির প্রধান কারণ ছিল ইহাই যে, এমন একটি বিশেষ অঞ্চল তৈয়ারি করিবার জন্য বড় মাপের জমির প্রয়োজন হয়, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে তাহা প্রায় অবধারিত ভাবেই কৃষিজমি। সুতরাং ‘মা মাটি মানুষের দল’ কী ভাবে সেজ মানিয়া লইবে? জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিতর্কে না গিয়াও বলা চলে, ইনফোসিস বা উইপ্রোর মতো সংস্থার ক্ষেত্রে এই তর্কটি কার্যত অপ্রাসঙ্গিক। এই সব ক্ষেত্রে বড় মাপের জমির দাবি নাই, সেজ-এর অন্তর্ভুক্ত সংস্থাগুলি যে ধরনের বিশেষ সুবিধা পায়, যথা কর রেহাই বা শুল্ক ছাড়, এখানে তাহাই চাওয়া হইতেছে। এই দাবিগুলি মানিলে রাজ্য সরকারের প্রায় কোনও লোকসানই নাই, বরং কেন্দ্রীয় রাজস্বের ক্ষতি। সুতরাং সেজ লইয়া বৃহত্তর তর্ক হাজার বছর চলুক, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেজ-এর অনুরূপ সুযোগসুবিধার আবেদনে সম্মতি দিতে রাজ্য সরকারের এক মুহূর্তও দেরি করা উচিত নহে। বিনিয়োগকারীকে প্রতীক্ষায় রাখিবার বিলাসিতা পশ্চিমবঙ্গের সাজে না।
এহ বাহ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উপলক্ষে ভাবিয়া দেখুন, সেজ তথা জমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে তাঁহাদের ধারণা বা বিশ্বাসের যৌক্তিকতা কতটুকু? সেজ সতত ভাল কিংবা জমি অধিগ্রহণ লইয়া কোনও প্রশ্ন নাই এমন কোনও চরম অবস্থান লইবার কোনও প্রয়োজন নাই, যুক্তিও নাই। কিন্তু উল্টো দিকে, সেজ সতত খারাপ কিংবা জমি অধিগ্রহণ কিছুতেই চলিবে না এই চরম অবস্থানই বা কোন যুক্তিতে গ্রহণীয়? এই ধরনের চরমপন্থা তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান করিয়াছে, সে কথা অনস্বীকার্য। বিশেষত জমির প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনমনীয় অবস্থান তাঁহাকে ভোট আনিয়া দিয়াছে। কিন্তু সেই সাফল্যের দাসত্ব করিয়া চলিলে তিনি নূতন পশ্চিমবঙ্গ গড়িবার কাজটি শুরু করিবেন কী ভাবে? বাঁধা গত ভাঙিয়া নূতন পথে হাঁটিবার সাহসেই যথার্থ নেতৃত্বের পরীক্ষা। পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরাও অচলাবস্থার রাজনীতি অনুশীলন করিয়া এক কালে ভোটে সফল হইয়াছিলেন এবং দীর্ঘ দিন এক মনে সেই পথেই চলিয়াছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব এইখানে যে, তিনি সেই গড্ডলিকা পরিত্যাগ করিয়া নূতন পথের সন্ধান করিয়াছিলেন। সফল হন নাই, তাহা অন্য প্রশ্ন। কিন্তু তাঁহার সেই সাহসী পদচারণায় অন্তত নেতৃত্বের একটি লক্ষণ মিলিয়াছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি নির্বাচনী সাফল্যের উত্তরাধিকারকে নির্মম ভাবে বর্জন করিয়া নূতন চিন্তার পথে অগ্রসর হইতে পারেন, তাহাই হইবে নূতন পশ্চিমবঙ্গের পথ। তাঁহার যথার্থ নেতৃত্বের অভিজ্ঞান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.