এলে বেলে তেলে ভাজা
স্বয়ং সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরও বেঁকে বসতেন যদি তাঁকে দিয়ে বলানো হত যে, তেলেভাজা অতীব সুস্বাস্থ্যকর। চুলোয় যাক হেলথ হুঁশিয়ারি, বেঁচে থাক বাঙালির এলে-বেলে-তেলে-ভাজা যাবতীয় ভোজ্য স্ন্যাকস। সন্ধে হলে যেমন পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে ঘরে আলো জ্বলে ওঠে, ঠিক তেমনই মাথায় জ্বলে চকমকি পাথর, জিভ সুড়সুড় করে আর মন বলে ওঠে, হবে নাকি তেলেভাজা?
বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজি, ফুলুরি তেলেভাজার সনাতন মেনু কার্ডে যাদের সৃষ্টিঐতিহ্য বাঙালির কিংবদন্তি রসগোল্লার চেয়ে কিছু কম নয়, তারাই আজ আমার প্রধান অতিথি। সে তুলনায় মোচার চপ ও ক্যাপসিকামের ইনোভেশন অনেককে টানলেও তারা যেন ঠিক যথেষ্ট বনেদি নয়। কোথায় যেন তাদের গায়ে উটকো বড়লোকি ছাপ, বিশ্বম্ভর রায়ের জলসাঘরের কৌলীন্য মিসিং। পেঁয়াজ, আলু, বেগুনের বেসন মাখা মোড়কের ম্যাজিকই আলাদা। বিশেষ ধরনের (!) সর্ষের তেলে তিন ইঞ্চি উঁচু থেকে প্যারাগ্লাইডিং করা এই সব তেলেভাজা এক এক পাড়ায় এক এক রকমের ট্রেডমার্ক বহন করে। মানিকতলার আলুর চপের সঙ্গে ভবানীপুরের বেগুনির অনেক তফাত। পাড়াবিশেষের ধুলো-ধোঁয়া আর ইমপিউরিটিজের ওপর সেই স্বাদ অনেকটাই বদলে যায়। ঠিক যেমন সিচুয়ান প্রদেশের চাইনিজ রেসিপির সঙ্গে হুনান প্রদেশের চাইনিজের ফারাক। লখনউ বিরিয়ানির স্বাদ কি হায়দরাবাদিতে পাবেন?
অলংকরণ: দেবাশীষ দেব
আর একটা ব্যাপার। বাড়িতে একই তেলেভাজা বানালে পাড়ার মোড়ের সেই চনমনে ব্যাপারটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়! আসলে, সেই ধুলো-ধোঁয়া আর ইমপিউরিটিজ এবং সর্বোপরি সেই বিখ্যাত বিশেষ ধরনের এলে-বেলে তেল পরিমাণ মতো খাদ না দিলে মনোহরণ সোনার গয়না কি গড়া যায়? সোনা ও তেলেভাজা দুইয়েরই অভিজ্ঞ কারিগরেরাও কিন্তু এই ব্যাপারটা স্বীকার করে থাকেন।
তো, মিষ্টান্ন-রসিক বাঙালির তেলেভাজা-বাসনার ইতিবৃত্ত আদি ও অনন্ত। লক্ষ করে দেখবেন, কোনও মিষ্টির দোকানের নাম কিন্তু ‘মুখরোচক’ হয় না, কিংবা এন্টালির সেই বিখ্যাত চপের দোকানের অবিস্মরণীয় ব্র্যান্ডিং ‘চোখের খিদে’! মিষ্টি যতটা মধুর, তেলেভাজা যেন ততটাই মাচো। অনেক ভাজাভুজির দোকানের নাম দেখেছি ‘আদিরুচি’। সত্যিই তেলেভাজা ব্যাপারটায় একটা নিষিদ্ধ রস খেলা করে। আর সেই জন্যই বোধহয়, মিষ্টি যদি হয় সাতপাক-দেওয়া বাড়ির বউ, তেলেভাজা সাক্ষাৎ পরকীয়া!
আমাদের ‘ওহ্ ক্যালকাটা’তেও লক্ষ করে দেখেছি, ভাজার থালা শেষ হয় সবার আগে। অমন বাঙালি স্টার্টার আর ক’টাই বা আছে! গন্ধরাজ ভেটকির চেয়ে কিছু কম যায় না ওই মুখ-কেমন-করা স্বাদের ডেলিকেসিটি। লোকে আমায় ম্যাকডোনাল্ড-এর ভয় দেখায়। আরে, তেলেভাজা তো এ রকম আক্রমণ বহু আগেই এগ বা চিকেন রোলের সঙ্গে ফেস করেছে। কই, হারিয়ে যায়নি তো সে! মার্কিনি কী মাড়োয়ারি ভুজিয়াওয়ালাদের রমরমা যতই বাড়ুক, শুধুমাত্র অর্থের কাছে এলে-বেলে-তেলে ভাজা বাঙালির সান্ধ্য ভোজ্যটি কণামাত্র বাটি ছাড়বে না।
নিরামিষাশী অবাঙালিরা, যাঁরা ভাজা মাছটি উল্টে অবধি খেতে জানেন না, তাঁরাও যে কী প্রবল ফ্যান এই তেলেভাজার, যে কোনও দিন সন্ধেবেলা এক বার বড়বাজার ঢুঁ মারলেই বুঝবেন, তেলে-জলে মিশ খায় না, প্রবচনটি সর্বত্র সত্যি নয়!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.