|
|
|
|
|
কোলেস্টেরল ক্রাইসিস
সংযম আর শরীরচর্চা। কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড আপনার
লাগামে। অর্থাৎ সেরিব্রাল স্ট্রোক, হৃদ্রোগ থেকেও নিশ্চিন্তি।
ফিটনেস এক্সপার্ট বিশ্বজিৎ তপাদার |
|
|
বডি হরমোন, বাইল অ্যাসিড, কোষের দেওয়াল তৈরি এবং শরীরের এনার্জি সংরক্ষিত রাখার জন্য রক্তের মধ্যে তরল চর্বি কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা সত্ত্বেও করোনারি হার্ট ডিজিজ, স্টেবল অ্যানজাইনা, মায়োকর্ডিয়াল ইনফার্কশন (হার্ট অ্যাটাক)-এর মতো অসুখ কিংবা সেরিব্রাল স্ট্রোকের জন্য সাধারণত কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডকেই দায়ী করা হয়। আসলে এগুলির স্বাভাবিক পরিমাণের তুলনায় উল্লেখযোগ্য তারতম্যটাই ক্ষতিকর। সাধারণ অবস্থায় লিভার প্রতি দিন গড়ে ১ গ্রাম কোলেস্টেরল তৈরি করে। এটি খুব অল্প অনুপাতে (০.৩ গ্রাম) রোজকার খাবার থেকে পাওয়া যায়। তাই কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড সবার শরীরেই আছে। অযথা নাম শুনে আতঙ্কিত না হয়ে, লিভার সুস্থ রাখুন। খাবারের মধ্যে চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দিন। জীবনশৈলীর পরিবর্তনের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখুন। না হলে কিন্তু আগামী দিনে অ্যান্টি কোলেস্টেরল এবং অ্যান্টি হাইপারটেনশন ওষুধগুলিই আপনার ভবিষ্যৎ। |
|
কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের জন্য লাইপোপ্রোটিন
লিভার থেকে তৈরি হওয়া কোলেস্টেরল এবং ডায়েটারি ফ্যাট থেকে পাওয়া ট্রাইগ্লিসারাইড-এর পরিবহণের জন্য লাইপোপ্রোটিন নামক এক প্রকার ‘বাহক’ প্রয়োজন। এটি ঘনত্ব ও আকার অনুসারে মূলত পাঁচ রকম হয়।
• কাইলোমাইক্রন (সিএইচওয়াই)
• ইন্টারমিডিয়েট (আইডিএল)
• লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল)
•
ভেরি লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (ভিএলডিএল)
• হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল)
হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল)-এর গুরুত্ব সব থেকে বেশি হওয়া উচিত। কারণ এইচডিএল-কেই এক কথায় শরীরের সব চেয়ে উপকারী কোলেস্টেরল বলা হয়। এইচডিএল-এর মধ্যে সব থেকে বেশি ch-e অর্থাৎ কোলেস্টেরাইল এস্টার থাকে, যার দ্বারা খুব সহজেই রক্তের মধ্যে মুক্ত কোলেস্টেরলকে সরাসরি লিভারে ফেরত নিয়ে আসা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাইগ্লিসারাইডকে শুষে নিয়ে রক্তনালীতে চর্বি জমতে দেয় না ও পরিষ্কার রাখে। কোলেস্টেরলের সমস্যা দূরে রাখতে চাইলে এইচডিএল-এর পরিমাণ কমতে দেবেন না। এলডিএল, ভিএলডিএল, আইডিএল যাতে স্বাভাবিকের থেকে না বাড়ে, তার চেষ্টাও করুন।
ন্যাশনাল কোলেস্টেরল ইভ্যালুয়েশন প্রোগ্রাম (এনসিইপি)-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী এলডিএল কোলেস্টেরল ১৩০ বা তার থেকে কম থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। ১৩০ থেকে ১৫৯, সর্বশেষ সীমা। এর পরেই কিন্তু আপনি অসুবিধায় পড়তে পারেন। ট্রাইগ্লিসারাইড ২০০-র কম থাকাটাই শ্রেয়, ৪০০-র বেশি হয়ে যাওয়া মানেই হার্টের অসুখকে ডেকে আনা। এইচডিএল কোলেস্টেরল কোনও মতেই ৪০-এর নীচে যাওয়া চলবে না। ৪০ থেকে ৬০-এর মধ্যে রাখাই ভাল।
ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কী কারণে বাড়ে?
কোলেস্টেরল ও স্যাচিয়োরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ রোজকার ডায়েট, অ্যালকোহল, ধূমপান, স্ট্রেস, শরীরচর্চার অনভ্যাস, পারিবারিক ইতিহাস, ডায়াবিটিস, লিভারের অসুখ, কিডনির অসুখ, মিষ্টির প্রতি প্রবল আকর্ষণ, থাইরয়েড হরমোনের অপ্রতুলতা প্রভৃতি। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড-এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কী ভাবে রুখবেন আপনার বাড়তে থাকা কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড-এর মাত্রা?
• লিভারকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।
• মদ্যপানে লাগাম টানুন। সম্ভব হলে একেবারে বন্ধ করে দিন। যাঁরা একদম প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছেন, আর যা-ই হোক, জীবনে মদ ছাড়বেন না, তাঁদের জন্য বিভিন্ন দেশের মেডিক্যাল বডিগুলি এক দিনের মোট মদের পরিমাণ ৬০ মিলিলিটার ধার্য করেছে।
• অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলুন।
• চর্বি জাতীয় খাবার, বিশেষ করে চর্বি সহ মাংস, মেটে, ডিমের কুসুম, কেক, পেস্ট্রি, ক্রিম, বনস্পতি থেকে দূরে থাকুন।
• চিনি সহ অন্যান্য রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট-এর পরিবর্তে হাই কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং হাই ফাইবার যুক্ত খাবারের ওপর জোর দিন। যেমন শাকসবজি, ফল, আটা, ওট্স, অঙ্কুরিত ছোলা, মুগ, ভুট্টা ইত্যাদি।
• রসুন এবং ক্যাপসিকাম নিয়ম করে খান।
• তেলের পরিমাণ যত কম হয় তত ভাল। অলিভ অয়েল, কর্ন, সয়াবিন, সানফ্লাওয়ার তেলগুলি থেকেই আপনার ভোজ্য তেল বাছুন।
• মাছের তেল পর্যাপ্ত ভাবে ব্যবহার করুন।
• যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলস্য ঘুচিয়ে শরীরচর্চা শুরু করুন।
শরীরচর্চাই আপনাকে ফিট রাখবে
কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডকে আয়ত্তে রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চাই সবচেয়ে সহজ পথ। কথাটা পরিষ্কার হওয়া উচিত। নিয়মিত শরীরচর্চা বলতে কিন্তু রোজ ব্যায়াম করার অভ্যাসকেই মানতে হবে। ‘সপ্তাহে তিন দিনই যথেষ্ট’ এই পুরনো তত্ত্ব ভুলে যান। রোজ কিছু না কিছু শরীরচর্চা করুন। রোজ ব্যায়াম করার সবচেয়ে বড় সুবিধে হল আপনাকে এক দিনে বেশি ব্যায়াম করতে হবে না। অল্প অল্প করে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সব ধরনের শরীরচর্চাই চালিয়ে যাওয়া যায়। সপ্তাহে তিন দিন-দু’দিনের রুটিনে এক সঙ্গে অনেকগুলি ব্যায়াম এক দিনে করতে গিয়ে হিতে-বিপরীত হতে পারে। এ ছাড়া বেশি ব্যবধান হয়ে গেলে অভ্যেসটাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
নিয়মিত হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা, ট্রেডমিল, ক্রস ট্রেনার, স্ট্যাটিক সাইক্লিং অথবা মাঠে গিয়ে হালকা জগিং সবই হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসকে দারুণ ভাবে সচল রাখে। সাঁতার ও নাচের অভ্যাস আপনার কার্ডিয়োভাসকুলার-এর বিকল্প হতে পারে। তবে শুধু কার্ডিয়ো করলেই চলবে না, দেহের অন্যান্য অংশেরও (মাংসপেশি ও সন্ধি) ব্যায়াম চাই। তাই ফ্রি-মোবিলিটি, স্ট্রেচিং এবং রেসিসটেড (ক্যালিসথেনিক্স অথবা ওয়েটট্রেনিং) এক্সারসাইজ করতে হবে। আপনার জন্য ব্যায়ামের ঠিক মাত্রা কতটা, তা বোঝা খুবই প্রয়োজন। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ট্রেনার-এর পরামর্শ নিন।
না ভুললেই ভাল
মানসিক উৎকণ্ঠা, স্ট্রেস, রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই স্ট্রেস চলবে না। রোজ ব্যায়াম করার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম, বিশ্রাম, খেলাধুলো, বিজ্ঞানভিত্তিক কাউন্সেলিং, মেডিটেশন, সৎসঙ্গ, এমনকী বাইরে গিয়ে ছুটি কাটানো যা ভাল মনে হয় করুন। যদি বাড়তি কোলেস্টেরলের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, কিংবা আপনার বর্তমান জীবনশৈলী কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড-এর বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়, তা হলে অবশ্যই প্রতি বারো সপ্তাহ এক বার করে লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করান। এতে আপনার প্রতিরোধের পরিকল্পনা করা অনেক সহজ হবে।
|
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
|
|
|