|
|
|
|
|
অত আলো ভাল নয়
রোদ্দুর শত্তুর। কালো করে, বাধায় খটমট অসুখ,
সোলার কেরাটোসিস। চিকিৎসা আছে তো। ডা. সুব্রত মালাকার |
|
|
আমরা জানি রোদ্দুর লাগানো আমাদের শরীরের পক্ষে খুব উপকারী। কিন্তু অনেক সময় উপকার কম এবং অপকার বেশি, এ রকমও হয়ে যায়। কোনও কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে সূর্যরশ্মি ত্বকে এক রকম সমস্যার সৃষ্টি করে, যাকে সোলার কেরাটোসিস বলে।
দেখতে কেমন হয়
ত্বকের মধ্যে বাদামি বা কালো রঙের ছোট ছোট গোলাকৃতি এক একটি অংশ দেখা যায়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে এটি হয়। প্রথম দিকে একটা দু’টো দেখলেই, জানবেন সারা জীবন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অনেক দিন যাবৎ ত্বকে এটি থাকলে এর থেকে ত্বকে ক্যানসারও হতে পারে। সংখ্যায় দ্রুত বৃদ্ধি পেলে বা বেশি দিন থাকলে দেরি না করে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা ভাল। দ্রুত রোগটি চিহ্নিত হলে নির্মূল হতে সময় লাগে না।
কখন সাবধান হবেন
১) অতিরিক্ত অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের অধিকতর ক্ষয় হয়। যেমন ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, লাল লাল ভাব এবং বুড়োটে হয়ে যায়।
২) গলায় এবং ঘাড়ে যদি একটা শুকনো ভাব মনে হয় এবং খোসা ওঠে, তবে সেখানে সোলার কেরাটোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩) শুকনো লাল অথবা বাদামি গোলাকৃতি এক একটি অংশ ত্বকে দেখা যায় এবং এর ওপরে থাকে একটি আঁচিলের মতো জিনিস। (লম্বাটে শিঙের মতো) |
|
কী ভাবে চিনব
সাধারণত, যাঁদের সোলার কেরাটোসিস হয়, তাঁদের কোনও ধরনের উপসর্গ থাকে না। ফলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন অনুভব করেন না তাঁরা। কিন্তু কিছু লোকের কিছু অসুবিধা থাকে।
কোন উপসর্গগুলির দিকে লক্ষ্য রাখব
• ত্বকের বেশ খানিকটা অংশ পুড়ে খসখসে ভাব থাকে।
• শুকনো খসখসে জায়গাটি চুলকালে ব্যথা হয়ে যায়।
• চুলকায় এবং কোনও কোনও সময় জ্বালা করে।
• ঠোঁট সব সময় শুকনো থাকে।
• সোলার কেরাটোসিস কখনও থাকে, আবার কখনও নিজে থেকে উধাও হয়ে যায়। শুকনো খসখসে জায়গাটি মসৃণ হয়ে যায়, সেখানে আবার ফিরে আসতে পারে।
• যদি রোগটি সূর্যের তাপ ছাড়াও বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ আপনি যথেষ্ট সাবধানে আছেন, তবু রোগটি বেড়ে যাচ্ছে, তবে তা ত্বকের গভীরে যাবে এবং ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
চিহ্নিত করব কী ভাবে
• শুধুমাত্র দেখেই বোঝা যায়।
• যদি দেখা যায়, এটি ঠিক অর্থাৎ সোলার কেরাটোসিস আপনার হয়েছে এবং ত্বকের ওই অংশটি ক্রমশ মোটা হয়ে যাচ্ছে তবে ত্বকের বায়োপ্সি করতে হবে। বায়োপ্সি শুনে আঁতকে ওঠার কিছু নেই, কারণ এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এর মধ্য দিয়ে ওই দাগের পুনরায় জেগে ওঠার সম্ভাবনাটি নির্মূল করার ব্যবস্থা করা যায়।
ক্রায়োথেরাপি চেম্বার |
চিকিৎসা পদ্ধতি
ক্রায়োথেরাপি: তরল নাইট্রোজেনের মাধ্যমে এই থেরাপিটি করা হয়। তাপমাত্রা থাকে -১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, ফলে ওই অংশের সমস্ত কোষ অসাড় হয়ে যায়। প্রথমে একটু খোসা ওঠে এবং দু’সপ্তাহের মধ্যে ত্বক থেকে খসে নতুন ত্বক যখন জন্মায়, চার পাশের ত্বকের তুলনায় ওই অংশটি একটু সাদা হয়ে যায়। পরে তা ঠিক হয়ে যায় এবং সাধারণ ত্বকের যা রং সেই রংটি ফিরে আসে।
কেমিক্যাল পিলিং: এটি একটি শক্তিশালী কেমিক্যাল দিয়ে করা হয়। যেখানে চিকিৎসা করা হয়, সেখানে একটু ক্ষত থাকে, পরে নতুন ত্বক জন্মায়।
ইলেকট্রোসার্জারি: সোলার কেরাটোসিস নির্মূল করার পর নতুন ভাল ত্বক জন্ম নেয়। এটি একটি অভিনব পন্থা।
কার্বন ডাই-অক্সাইড লেজার: এই পদ্ধতি প্রয়োগের ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সোলার কেরাটোসিসটি খসে পড়ে এবং ঝকঝকে নতুন ত্বক জন্মায়। |
|
কিছু ওষুধ প্রয়োগে এর চিকিৎসা সম্ভব
• কিছু ওষুধ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ক্ষতিগ্রস্ত অংশটিকে ঠিক করে দেয়। এগুলি ক্রিমের আকারে প্রয়োগ করা হয়, প্রথমে লাল হয়ে ফুলে ওঠে, পরে ঠিক হয়ে যায়।
• কিছু কেমোথেরাপেটিক ওষুধ আছে যা ক্রিম হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
সোলার কেরাটোসিস কতটা বিপজ্জনক
কয়েকটি মাত্র দেখা গেলে অল্প ওষুধ প্রয়োগে ঠিক হয়ে যায়। না হলে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। অনেক দিন যাবৎ থাকলে এটি ক্যানসারের দিকে যেতে পারে। তবে ঠিক সময় মতো চিকিৎসা করালে এটি সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাবে।
জরুরি টিপস
ত্বককে অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করুন। এর জন্য বেলার দিকে সূর্যকে পরিহার করুন (১০টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত)। মেঘলা ও শীতের দিনে সানস্ক্রিন লাগানো ভুললে চলবে না।
সানস্ক্রিন কেনার সময় তিনটে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
• এসপিএফ যেন বেশি হয়
• সানস্ক্রিনটি যেন ইউভিএ এবং ইউভিবি দু’টো থেকেই রক্ষা করে, এই লেবেলটি দেখবেন
• এটি যেন ওয়াটারপ্রুফ হয়
• ঠোঁটকে রক্ষা করুন, সানস্ক্রিনযুক্ত লিপবাম ব্যবহার করুন
• ত্বককে যথেষ্ট জামাকাপড় দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করুন। সমুদ্রতীরে লম্বা হাতা জামা পরুন, হাফ প্যান্টের পরিবর্তে ফুল প্যান্ট পরুন।
|
যোগাযোগ: ২৩৫৮ ৮০১০, ৯৪৩৩০২৩৮৭৯
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
|
|
|