উত্তর কলকাতা
দুর্ভোগের বস্তি
দশ ফুটের যন্ত্রণা
শ ফুট বাই দশ ফুট। তাতেই সাত জনের গৃহস্থালি। এক কোণে রান্নাঘর। অন্য কোণে শৌচাগার। টালি বা পলিথিনে রোদ আটকালেও বৃষ্টি মানে না। স্যাঁতসেতে ঘর। বন্ধ নর্দমার দুর্গন্ধে টেঁকা দায়। কামারহাটি পুর-অঞ্চলে এ রকম বস্তিগুলিতে বাস করেন কয়েক লক্ষ মানুষ। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন বস্তি এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। যদিও পুরকর্তাদের দাবি, বস্তির উন্নয়ন করে আধুনিক চেহারা দেওয়া হয়েছে।
কামারহাটি পুরসভার এক থেকে সাত নম্বর ওয়ার্ড চিহ্নিত বস্তি এলাকা। এ ছাড়াও বেলঘরিয়ার সর্দারপাড়ায়, আট নম্বর ওয়ার্ডের ভগবান মণ্ডল স্ট্রিটে, বেলঘরিয়া তিন নম্বর রেলগেটেও বস্তি রয়েছে। বস্তিগুলি দীর্ঘ দিন ধরেই বেহাল অবস্থায় রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এখানে হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, পুর এলাকায় চিহ্নিত বস্তি রয়েছে ১৩৯টি। যদিও বিরোধী দল তৃণমূলের দাবি, চিহ্নিত ও অঘোষিত মিলিয়ে পুর এলাকায় মোট বস্তির সংখ্যা ১৬৫। বস্তিগুলিতে বাঙালি ছাড়াও ওড়িশা, বিহার ও তামিলনাড়ু থেকে আসা অনেকে থাকেন। সব মিলিয়ে বস্তিবাসীর সংখ্যা লক্ষাধিক।
চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইমামউদ্দিন আনসারি বলেন, “ছোট ছোট ঘুপচি ঘর। আলো-বাতাসের অভাব। রাস্তা ভাঙাচোরা।” অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দরমার বেড়া আর পলিথিনের নীচে বসবাস। টালির চাল থাকলেও বর্ষায় জল পড়ে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অঞ্জলি সর্দারের অভিযোগ, “যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ। নিয়মিত সাফাই হয় না। আবর্জনার স্তূপে কাক, কুকুর আর বেড়ালের দাপাদাপি চলে। নর্দমাগুলির সংস্কার হয়নি। মশা-মাছির উপদ্রবও রয়েছে।” বর্ষায় নর্দমা উপচে ঘরে নোংরা জল ঢুকে যায়। তখন বাসিন্দাদের নরকযন্ত্রণা পোহাতে হয়। অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা প্রস্রাবাগারগুলিরও সংস্কার হয় না। তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের হিসাবউদ্দিন বলেন, “বস্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু পুরসভার উদ্যোগের অভাবে কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।”
কামারহাটি পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের স্বপন মণ্ডল বলেন, “বস্তি উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় বস্তিবাসীদের জন্য গৃহনির্মাণের সুবিধাও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পুরবোর্ড কিছুই করেনি।” যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের প্রবীর মিত্র বলেন, “চিহ্নিত বস্তি রয়েছে ১৩৯টি। যার মধ্যে ৭৫টিতে বিইউএসপি এবং কেইউএসপি প্রকল্পে উন্নয়নের কাজ হয়েছে। বাকিগুলিতেও কাজ হবে। ৬৯ কোটি টাকার কাজ চলছে। নর্দমা নির্মাণ শেষ হলে নিকাশি সমস্যার অনেকটাই সুরাহা হবে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.