|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা
অসহায় যাত্রী |
অপেক্ষার ছাউনি |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপর মেডিক্যাল কলেজ বাসস্টপ। বেশ কয়েক মাস আগে ধর্মতলা অভিমুখী এই বাসস্টপের পুরনো ছাউনি খুলে ফেলা হয় নতুন বাস ছাউনি করার জন্য। পুরসভার অনুমতিতেই নতুন বাস ছাউনি তৈরির জন্য পুরনো ছাউনি সরিয়ে নেওয়া হয়। বাস ছাউনি তৈরির সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় চার মাস, কিন্তু সেই জায়গায় এখনও বাস ছাউনির নতুন কাঠামোটুকুও তৈরি হয়নি।
আবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের অন্য একটি দিকে বাস ছাউনি তৈরি করা হলেও বসার জন্য কোনও সিট লাগানো হয়নি। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপর যোগাযোগ ভবনের পাশের বাস ছাউনিটি আবার রেলিংয়ের ভিতরে তৈরি করা হয়েছে। ফলে যাত্রীরা সেখানে দাঁড়াতে পারেন না। এমনকী, বাস ছাউনিটিতে বসার জায়গাও করা হয়নি। পিছনে ডিসপ্লে বোর্ডে লাল-কালো কালি দিয়ে নানা আঁকিবুকি। একই জায়গায় উল্টো দিকের বাস ছাউনিটি অসমাপ্ত, সেখানে বসার সিটের পিছনে বিদ্যুতের তার খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
শুধু কি তাই? মহাজাতি সদন এবং বিডন স্ট্রিট বাস ছাউনির পিছনের ফাঁকা জায়গায় ফুটপাথবাসীদের জিনিসপত্র রাখা রয়েছে। মহাত্মা গাঁধী স্টপে আবার ফলপট্টির পাশের ছাউনিটি অনেক সময়েই ফল বিক্রেতাদের দখলে চলে যায় বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। কিছু দিন আগে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের উল্টো দিকের বাস ছাউনির সিটগুলি চুরি হয়ে যায় বলে অভিযোগ খোদ বিজ্ঞাপন সংস্থার। সিট চুরি হয়ে যায় কাঁকুরগাছি এলাকায়। |
মহাজাতি সদন |
বিডন স্ট্রিট |
|
একই ছবি দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গাতেও দেখা গিয়েছে। যেমন, টালিগঞ্জ ফাঁড়ি বাস ছাউনি।
সেখানে পুরনো বাস ছাউনি খুলে ফেলা হলেও আজও নতুন বাস ছাউনি তৈরি হয়নি। এমনকী, ছাউনির ফ্রেমটুকুও তৈরি হয়নি। একই অবস্থা টালিগঞ্জ চারু মার্কেট বাসস্টপের। আবার আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের উপর এক্সাইড বাসস্টপে বহু দিন ধরেই শুধুমাত্র ছাউনির
ফ্রেমটুকু তৈরি হয়ে পড়ে আছে। মাথায় ছাউনি বলে কিছুই তৈরি হয়নি। কোথাও আবার বাসস্টপ আর ছাউনি এক জায়গায় নেই। দু’টির মধ্যে দূরত্ব এতটাই যে বাস ছাউনিটি কেন ওই জায়গায় তৈরি হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিত্যযাত্রীরাই। এই দৃশ্য জওহরলাল নেহরু রোডের উপর নেহরু চিলড্রেনস মিউজিয়াম এবং বিড়লা তারামণ্ডলের মাঝখানে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের উপর দেশপ্রিয় পার্কগামী লেনে পাশাপাশি দু’টি এবং গড়িয়াহাটগামী লেনে পাশাপাশি চারটি বাস ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। কোথাও আবার বাস ছাউনি হলেও বসার কোনও জায়গা তৈরি
করা হয়নি।
কথা ছিল, যে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি বাস ছাউনি তৈরি করবে, তারাই সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, শহর জুড়ে যে ক’টি বাস ছাউনি ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছে, সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ তো হচ্ছেই না, উল্টে বেশ কিছু জায়গায় বাস ছাউনির পিছনে ফাঁকা জায়গায় ফুটপাথবাসীরা তাঁদের জিনিসপত্র রাখছেন। |
|
কলুটোলা |
কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও গোটা পরিস্থিতি স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়: “কলকাতায় অনেক জায়গায় বাস ছাউনি তৈরি হয়ে গেলেও বেশ কয়েকটি জায়গায় কাজ এখনও হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণও হচ্ছে না। ব্যাপারটা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা সেই সংস্থাগুলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছি।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ২৯১টি বাস ছাউনি তৈরি করতে দেওয়ার আগে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে বলা হয়েছিল, প্রতিটি ছাউনিতে দু’টি বা তিনটি করে বসার জায়গা করতে হবে। বাস ছাউনিগুলি শেষ করার সময়সীমা ছিল ২০১১-র অক্টোবর। কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও শহরের অধিকাংশ বাস ছাউনি তৈরি হয়নি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বাস ছাউনিগুলির মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ছাউনি পুরোপুরি তৈরি হয়েছে। বাকি কোথাও শুধু ফ্রেমটুকু হয়েছে বা কোথাও কিছুই হয়নি। |
|
এক্সাইডের সামনে |
কিন্তু বাস ছাউনিগুলি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি হল না কেন? পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “পুরসভা যাদের বাস ছাউনিগুলি তৈরি করার বরাত দিয়েছিল, তাদের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হলেও সকলে নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। এক একটি ছাউনি করতে খরচ পড়ছে প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা। ফলে একসঙ্গে এতগুলি বাস ছাউনি করতে যা টাকার দরকার, সংস্থাগুলি কিছু ক্ষেত্রে একেবারে বহন করতে পারছে না। তাই বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে।”
যদিও বাস ছাউনি তৈরি করেছে, এমন এক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ২০-২২টি বাস ছাউনি তৈরি করেছি। সব ক’টিই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর আমাদের সংস্থার আলাদা বিভাগ রয়েছে, যাদের কাজই হল বিভিন্ন বাস ছাউনি পরিষ্কার করা। তবে রাস্তার ধারে থাকায় এত ধুলো হয় যে বাস ছাউনি তৈরির সময়ে যে অবস্থায় থাকে পরবর্তী কালে তার থেকে একটু তফাত হবেই।”
অন্য এক বিজ্ঞাপন সংস্থার মালিক সঞ্জীব লাল বলেন, “আমাদের ৪০টি বাস ছাউনি করার কথা ছিল। কিন্তু নানা সমস্যার জন্য মাত্র ২৮টি করতে পেরেছি। আর রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আমাদের আলাদা লোক আছে যারা ছাউনিগুলি পরিষ্কার করে। তবে যে সমস্যায় আমরা জর্জরিত, সেটি হল অধিকাংশ জায়গায় বাস ছাউনির সিটগুলি চুরি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দু’-তিন বার করে সিট লাগাতে হচ্ছে। এমনকী, পিছনের ডিসপ্লে বোর্ডও ছিঁড়ে দিচ্ছে লোকজন। আমরা পুলিশ ও পুরসভাকে জানিয়েছি। যে জায়গায় বেশি চুরি হচ্ছে সেখানে পাহারা দেওয়ার লোকও রেখেছি।” |
|
|
|
|
|