|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা
দৌড় |
লক্ষ্য মৈত্রী |
চন্দন রুদ্র |
সাত সকালে উৎসাহী মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল। ক্রিকেট, ফুটবলের মতো জনপ্রিয় না হলেও রোড রেসকে ঘিরে মেতে উঠেছিল বেহালা। বেহালা চৌরাস্তার ‘সবেদাবাগান ক্লাব’-এর সামনে থেকে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। পরে জেমস লং সরণি, রায়বাহাদুর রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড হয়ে আবার জেমস লং সরণি দিয়ে সমাপ্তি রেখায় পৌঁছন প্রতিযোগীরা।
শান্তি ও মৈত্রীর দৌড়ে পুরুষ বিভাগে বিএসএফের প্রতিযোগী আর বি সুব্বা চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতে নিয়ে গেলেও মেয়েদের বিভাগে সেরার শিরোপা পেলেন নদিয়ার ফুলন খাতুন। পুরুষদের ১২ কিলোমিটার ও মেয়েদের পাঁচ কিলোমিটার রেসের সূচনা করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার রণজিৎকুমার পচনন্দা। |
|
ছবি: রাজর্ষি দত্ত। |
পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার মূল্যের এই প্রতিযোগিতায় দু’টি বিভাগে এ বার ছিলেন তিনশো প্রতিযোগী। বিএসএফ, সিআরপিএফ, সিআইএসএফ, পুলিশের মতো বিভিন্ন সংস্থার প্রতিযোগীদের সঙ্গে দৌড়লেন হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, নদিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিযোগীরাও।
পুরুষ বিভাগের লড়াই হল হাড্ডাহাড্ডি। মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের ব্যবধানে দৌড় শেষ করলেন প্রথম তিন প্রতিযোগী। তিনটি স্থানই দখল করে নেন বিএসএফের প্রতিযোগীরা। চ্যাম্পিয়ন আর বি সুব্বা সময় নেন ৩৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ড। রানার্স পেমা আর সরন। তৃতীয় স্থান পান রাধে কুমার। পুরুষ এবং মহিলা দু’টি বিভাগেই প্রথম দশ জন প্রতিযোগীর হাতে আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরুষ বিভাগের চ্যাম্পিয়নকে দশ হাজার, মহিলা বিভাগের সেরা প্রতিযোগীকে দেওয়া হয় ছয় হাজার টাকা। ১৬ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেন মহিলা বিভাগের চ্যাম্পিয়ন ফুলন বলেন, “এই টাকা দিয়ে ভাল খাওয়া-দাওয়া করতে চাই।” নদিয়ার দেবগ্রামের কৃষক পরিবারের এই মেয়েটি দু’বছর কলকাতার সাই-তে রয়েছেন। এ বারের অনূর্ধ্ব ২০ জাতীয় ক্রশ কান্ট্রি দৌড়ে রুপো জিতেছেন। লক্ষ্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। শিপ্রা সেনাপতির পিছনে দৌড় শেষ করে তৃতীয় স্থান পাওয়া নদিয়ার বেথুয়াডহরি থেকে আসা দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া রূপালি মণ্ডল বললেন, “বাড়িতে ভাল খেতে পাই না। একটু সহযোগিতা পেলে আরও এগোতে পারতাম।” |
|
বিজয়ীদের সঙ্গে দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: উৎপল সরকার। |
জঙ্গলমহল থেকে ৪২ জনের দল নিয়ে দৌড়ে অংশ নিতে এসেছিলেন সিআরপিএফের ১৬৭ ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট শ্যামচাঁদ দে। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর থেকে কিছুক্ষণের জন্য বন্দুক ছেড়ে প্রতিযোগিতায় নেমে খুশি বলরাম মণ্ডল, গণেশ মাহাতোরা। আয়োজক ক্লাবের সভাপতি দিলীপকুমার দে বললেন, “১৯ বছর ধরে চলছে এই দৌড়। চাই খেলার মাধ্যমে একে অন্যের মধ্যে আন্তরিকতা গড়ে উঠুক।” প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষক, স্থানীয় বিদ্যাভবন স্কুলের সচিব আশুতোষ মুখোপাধ্যায় জানালেন, আগামী বছর এই প্রতিযোগিতাকে হাফ ম্যারাথনে উন্নীত করা হবে। বাড়বে পুরস্কারের মূল্যও।
এই ঘোষণায় উৎসাহী হয়ে বেঙ্গল রোড রেস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব হীরালাল মণ্ডল বলেন, “১৩ বছর পরে এ বার জাতীয় ক্রশ কান্ট্রি দৌড়ে বাংলার মেয়েরা ভাল ফল করেছে। মেডেল এসেছে পাঁচটি। এই প্রতিযোগিতা যত হবে ততই নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসবে।” পুরস্কার দেন তিরন্দাজিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও ‘অর্জুন’ দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন অতিরিক্ত ডিজি (টেলিকম) তথা বেঙ্গল রোড রেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে হরিরাজন, কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ ওয়েস্ট) সুব্রত মিত্র, ডিসি ট্রাফিক (সাউথ) দিলীপকুমার আদক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পাড়ায় পুরস্কার দিতে এসে দোলা বললেন, “আমাদের এখানে প্রতিভার অভাব নেই। অভাব পরিকাঠামোর। অন্য ক্লাবগুলোও যদি এই ভাবে উদ্যোগী হয় তবে অলিম্পিক নিয়ে আমাদের স্বপ্ন দেখা অনেক সহজ হবে।” |
|
|
|
|
|