দক্ষিণ কলকাতা
জলাশয়
সঙ্কটে অস্তিত্ব
যে জলাশয় ঘিরে এলাকায় মনোরম পরিবেশ গড়ে উঠতে পারত সেই জলাশয়ের অস্তিত্বই আজ সঙ্কটে। দীর্ঘ দিনের অবহেলা আর উপেক্ষাকেই এর জন্য দায়ী করেছেন বাসিন্দারা। বারুইপুর স্টেশন সংলগ্ন কলপুকুর নামে জলাশয়টির ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, জলাশয়টিকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে সংস্কার করা প্রয়োজন।
বারুইপুর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেশন সংলগ্ন জলাশয়টি পূর্ব রেলের আওতায় রয়েছে। তাই ওই জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের বিষয়টি পুরসভার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব পূর্ব রেলের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ এই জলাশয়ের আকার ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। বেশ কয়েক বছর এটির কোনও সংস্কার হয়নি।
বারুইপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের শক্তি রায়চৌধুরী বলেন, “জলাশয়টি রেলের অধীনে রয়েছে। তাই পুরসভা ওখানে কোনও কাজ করতে পারে না।” যদিও পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, বারুইপুর-শিয়ালদহ শাখায় তখন কয়লাচালিত ইঞ্জিনের ট্রেন চলত। এই ধরনের ট্রেনের জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন হত। তখন এই জলাশয় থেকে কলের সাহায্যে ট্রেনে জল নেওয়া হত। এলাকার কয়েক জন প্রবীণ বাসিন্দা জানান, কয়লার ইঞ্জিন উঠে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ দিন জলাশয়ের পাশে সেই কলগুলো ছিল। এই কারণেই স্টেশন সংলগ্ন বিশাল জলাশয়টির নাম হয় ‘কলপুকুর।’
এই বিরাট জলাশয়ের অনেকটাই এখন বুজে গিয়েছে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। কলপুকুর সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নির্মল চক্রবর্তীর কথায়: “একসময়ে এই জলাশয় সংলগ্ন এলাকায় সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের পাখি ভিড় জমাত। কিন্তু এখন খুব কম পাখি আসে। এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এই জলাশয়টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই এটিকে অবিলম্বে বাঁচানো দরকার।”
ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানান, জলাশয়টি দেখভালের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় এর মধ্যে অনেকে আবর্জনা ফেলেন। আবর্জনার মধ্যে নিষিব্ধ প্লাস্টিকজাত বর্জ্যও থাকে। এ ভাবে জলাশয়ের চারধারে আবর্জনা ফেলা চলতে থাকলেই কলপুকুরের যেটুকু অংশ এখনও রয়েছে ভবিষ্যতে তাও রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে বলে এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা মনে করেন। তাঁদের বক্তব্য: দীর্ঘ দিন কোনও সংস্কার না হওয়ায় এই জলাশয়ের জলও দূষিত হয়ে গিয়েছে। ফলে জলাশয় থেকে এখন দূষণও ছড়াচ্ছে।
এই জলাশয়টি বাঁচাতে কোনও সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি? বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, বারুইপুরের প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত অরূপ ভদ্র এক বার কলপুকুরকে রক্ষার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু সেই কাজ বেশি দূর এগোয়নি বলে তাঁরা দাবি করেন। বারুইপুর (পশ্চিম) বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক, রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই জলাশয়ের হাল যাতে দ্রুত ফেরানো যায় তা নিয়ে আমি রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।” পাশাপাশি, রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের কথায়: “আমাদের সরকারের নীতি হচ্ছে রাজ্যের কোথাও কোনও জলাভূমি নষ্ট হতে না দেওয়া। তাই যে এলাকার সমস্যা সেখানকার বাসিন্দারা অভিযোগ জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.