পূর্ব কলকাতা
মশার কারখানা
থাকিলে ডোবা-খানা...
শীতের প্রকোপ কমতেই ফের বিধাননগরে মশার উৎপাত হচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। প্রাক্তন বাম পুরবোর্ডের মতো তৃণমূল বোর্ডেরও দাবি, মশা তাড়াতে নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বিপরীতে জেসি ব্লকে এক হাসপাতালের পাশে একটি নির্মীয়মান বাড়ির চত্বরে ইঁদারায় জল ধরে রাখা হয়। কিন্তু সে জল বদলাতে কেউ দেখেননি বলেই দাবি করেছেন বাসিন্দারা। সেখানে তৈরি হচ্ছে মশার আঁতুড়। মশার হাত থেকে বাঁচতে সেই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা সেখানে ধোঁয়া দেন। ফলে মশা বাড়ির পিছন দিকের আবাসনে ধেয়ে যায়। অভিযোগ, রাত হলেই মশার জ্বালায় সে সব আবাসনের জানলা খোলা যায় না। পাশের হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা এক রোগীর আত্মীয় পরিমল জানা বলেন, “হাসপাতালের কর্মীরা ফগিং মেশিন দিয়ে মশা তাড়াচ্ছেন। ওইটুকুই। হাসপাতাল থেকে একটু দূরে গেলেই মশার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে।”
অলঙ্করণ: দেবাশীষ দেব
কেষ্টপুর খাল ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল বরাবর ব্লকগুলির সমস্যাও একই। বিএ ব্লকের বাসিন্দা দীপঙ্কর পাত্র বলেন, “মশা বেড়েছে তা বলতে পারব না। বিধাননগরে এটি স্থায়ী সমস্যা। শীতে কমে, শীত কমলেই বাড়ে। বিধাননগরের দু’দিকের খাল ও অনেক স্থায়ী জলাশয়ের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে।” শুধু বাসিন্দারাই নন, মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ কর্মসূত্রে বিধাননগরে আসা মানুষজনও। অফিসের কাজ শেষ করে গাড়ির অপেক্ষায় করুণাময়ী মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানিকতলার বাসিন্দা সত্যসেন রায়। বললেন, “বিধাননগরের বৈশিষ্ট্য মশা। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। মাথার উপর ভোঁভোঁ করছে মশা। এর কোনও পরিবর্তন দেখলাম না।”
আবার দত্তাবাদ ও সংযুক্ত এলাকার ডোবা, ভেড়ি ও ঝিলগুলির অনেকাংশে কচুরিপানা-ভর্তি। বিধাননগরের এক দিকের ইস্টার্ন ড্রেনেজ খাল বন্ধ, অন্য দিকে কেষ্টপুর খাল এ বারও একই ভাবে মশার আঁতুড়ে পরিণত হয়েছে। মশা-সাম্রাজ্যের সীমান্ত এখানেই নয়, বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে ওঠা ঝুপড়িগুলিতে গিয়ে দেখা গেল, অসংখ্য জারিকেন, হাঁড়ি, বালতিতে জল ধরে রাখা থাকে। সেখানে মশাবাহিনী বেড়ে চলেছে। বিষয়টি খেয়াল করছেন না কেউই। পাশাপাশি, মূল বিধাননগরের বাসিন্দাদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বাড়ির বারান্দা-সহ বিভিন্ন জায়গায় রাখা ফুল-ফলের টব থেকে জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে টবের নীচের পাত্রে জমা হয়ে চলেছে। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের কাছে কেউ এমন অভিযোগ করেননি। মশা তাড়াতে পুরকর্মীরা এলাকায় এলাকায় নিয়মিত কাজ করছেন। এত বড় মেলা হল। সেখানেও কেউ মশা টের পাননি। আমরা প্রয়োজনীয় কাজ করছি।”
মশা প্রসঙ্গে অবশ্য বিরোধী দলও শাসক দলের পাশেই। বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের ইলা নন্দী বলেন, “মশা বেড়েছে বলে জানি না। তেল স্প্রে ও অন্য কাজ করা হচ্ছে। তবে ভৌগোলিক কারণে মূল বিধাননগরের তুলনায় সংযুক্ত এলাকায় মশা তাড়ানোর কাজে সমস্যা বেশি।” বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত জানিয়েছেন, পুরসভা কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ও গৃহসজ্জার উপকরণ তৈরির প্রকল্প শুরু করতে চলেছে। এর ফলে বিভিন্ন জলাশয় থেকে কচুরিপানা তোলা হবে। মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রে এতে সুবিধা হবে।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.